Home শীর্ষ খবর সরকারী চাকরীর কালো বিড়াল

সরকারী চাকরীর কালো বিড়াল

দখিনের সময় ডেস্ক:
সরকারী চাকুরি প্রদান ব্যবস্থায় অনিয়ম জেকে বসেছে। ‍এই সুযোগে সরকারী চাকরিতে ঢুকে পড়েছে অসংখ্য কালো বিড়াল। ‍এই কালো বিড়াগুরো সঠিকভাবে চিহ্নিত করে ধরা কি সম্ভব? ‍এ নিয়ে নানান প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
চোরের মার বড় গলা:
পিএসসি’র অস্বীকার
চোরের মার বড়গলা- প্রবচনকে আবার মনে করিয়ে দিয়ে পিএসসি ৮ জুলাই একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে প্রশ্নফাঁসের বিষয়টি অস্বীকার করেছিলো। এ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, “গত ১২ বছরে বিপিএসসি’তে অনুষ্ঠিত বিসিএস ক্যাডার ও নন-ক্যাডার পরীক্ষা সম্পর্কে কোনও মহল থেকে কখনোই কোনও ধরনের অভিযোগ বা অনুযোগ ছিল না বলে এটি প্রমাণিত যে, ওইসব পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে।”
পিএসসি’র বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, প্রশ্নফাঁস রোধ করতে প্রতিটি বিসিএস পরীক্ষায় ন্যূনতম ছয় সেট প্রশ্নপত্র এবং নন-ক্যাডার পরীক্ষায় ন্যূনতম চার সেট প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করা হয়। কোন সেটে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে, তা নির্ধারণ করতে পরীক্ষা শুরুর ৩০ থেকে ৩৫ মিনিট পূর্বে লটারি করা হয়।
এ প্রসঙ্গে গত নয়ই জুলাই আগারগাঁও কর্ম কমিশন ভবনে প্রশ্নফাঁস নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে পিএসসি চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন বলেন, প্রশ্নপত্র ফাঁস করা ভীষণ কঠিন। কারণ, যে প্রক্রিয়ায় প্রশ্ন নির্ধারণ ও সাপ্লাই করা হয়, সেখানে প্রশ্নফাঁসের কোনো সুযোগ নেই। তবে এ কার্যক্রমের সাথে যেহেতু অনেকেই জড়িত থাকেন, তাই শতভাগ নিশ্চিতভাবেও বলা যায় না।
পিএসসি তাদের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে প্রশ্নফাঁসের বিষয়টি অস্বীকার করলেও অভিযোগ তদন্ত করার জন্য গত ৯ জুলাই তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে। ১৫ কার্যদিবসের প্রতিবেদন জমা দেবে তদন্ত কমিটি।
প্রশ্নফাঁসের সাজা চার
বছরের কারাদন্ড
পিএসসির প্রশ্নপত্র ফাস করার অভিযোগে সামান্য একজন ডাইভার আবিদ আলীসহ কয়েকজন আটক হয়েছেন। এদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ প্রমানিত হলেও সাজা মাত্র ৪ বছর। সঙ্গে একটি কথা বিবেচনায় রাখা প্রয়োজন, এ ধরেন অভিযোগ আদালতে প্রমান করা মোটেই সহজ কাজ নয়। বরং প্রায় অসম্ভব।
১৯৮০ সালের পাবলিক পরীক্ষা আইনে পরীক্ষা শুরু হওয়ার আগে প্রশ্নপত্রের প্রকাশনা ও বিতরণ সম্বন্ধে আইনে উল্লেখ আছে, ‘কেউ যদি পরীক্ষার আগে কোনও উপায়ে প্রশ্ন ফাঁস, প্রকাশ বা বিতরণ করেন, তাহলে “তিনি চার বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড কিংবা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।’ তবে এই আইনে সাজা কম হলেও দুদকের আইনে প্রশ্নফাঁসের সাজা সাত বছর, বলেন খুরশিদ আলম।
এক্ষেত্রে নয়ই জুলাইয়ের সংবাদ সম্মেলনে পিএসসি চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন বলেছেন, এর আগে যারা প্রশ্নফাঁসের সাথে জড়িত ছিল, তাদেরকে বিভিন্ন সময়ে বরখাস্ত করেছে পিএসসি। কিন্তু বরখাস্ত হওয়ার পর তারা আবার কোর্টের অর্ডারে ছাড়া পেয়ে গেছে। এ বিষয়ে সাবেক সচিব আবু আলম মো. শহীদ খান বলেন, এটি বাংলাদেশের কমন চিত্র। আবু আলম মো. শহীদ খান বলেন, কোর্টে গেলে কেউ হুমকি দেয়, সাক্ষী পাওয়া যায় না। তখন কোর্টের অর্ডারে এরা ফিরে আসে। তাই এদেরকে কেউ ঘাঁটায় না। আইনের এদিকটা আরও কঠোর হওয়া দরকার বলে মনে করেন আবু আলম মো. শহীদ খান। তিনি বলেন, এটি আমাদের রাষ্ট্রের একটি দুর্বলতা। লঘু দণ্ড দিলে শাস্তির মেয়াদ শেষে তার পদায়ন ও পদবি বিবেচনায় চলে আসে। লঘুদণ্ড দিয়ে তাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না।
রীক্ষা বাতিলের বিষয়ে
সুনির্দিষ্ট কিছু নেই
‘পাবলিক পরীক্ষা (অপরাধ) আইন ১৯৮০’ থেকে দেখা যায় যে প্রশ্ন ফাঁস হলে পরীক্ষা বাতিল করতে হবে কি না- এ বিষয়ে সেখানে সুনির্দিষ্ট কিছু বলা নেই। তবে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়ার মতে, আইনে ‘সুনির্দিষ্টভাবে’ সেরকম কিছু বলা না থাকলেও এটি জেনারেল কনসিকুয়েন্সেস। যদি প্রশ্নপত্র ফাঁস হয় ও তা যদি প্রমাণিত হয়, তাহলে তো পরীক্ষা বাতিল হওয়া ছাড়া আর কোনও বিকল্প নেই।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী খুরশীদ আলম খানেরও একই কথা। তবে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আইনে সুর্নির্দিষ্টভাবে কিছু বলা না হলেও, প্রশ্নপত্র ফাঁস হলে পরীক্ষা বাতিল করে দিতে পারবে পিএসসি। সেই ক্ষমতা পিএসসি’র আছে। তবে পিএসসিকে সেটি প্রমাণ করতে হবে। খুরশীদ আলম খান বলেন, আইনে যা-ই থাক, যদি শোনা যায় যে প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে, তাহলে প্রশাসনিক দিক থেকেই তো সেই পরীক্ষা বাতিল করা উচিৎ। সাবেক সচিব আবু আলম মো. শহীদ খান মনে করেন যে আইনে না থাকলেও, যেকোনও পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হলে নৈতিকতার মানদণ্ড অনুযায়ী ন্যায্যতা নিশ্চিত করতে তা বাতিল করতে হবে। এদিকে এর উদারণ তেম জারালো নয় বলে মনে করেন অনেকেই।
নিয়োগ বাতিল
করা অসম্ভব
পিএসসি’র সাবেক কর্মকর্তা থেকে শুরু করে আইনজীবী, সকলেই বলছেন যে নিয়োগ হওয়ার আগ অবধি পরীক্ষা বাতিল করা গেলেও নিয়োগ বাতিল করা অসম্ভব! সাবেক শিক্ষাসচিব মো. নজরুল ইসলাম খান বলেন, নিয়োগ পুরোপুরি বাতিল করলে আরেকটা জটিলতা হবে। ইতোপূর্বে যেসব নিয়োগ হয়েছে, সেগুলো বাতিল করার এখতিয়ার পিএসসি’র নাই। তবে দোষীকে আইনের আওতায় আনা যাবে। সাবেক শিক্ষাসচিব জানান, পুরনো সব পরীক্ষা যদি বাতিলও করা হয় তবে তা হাইকোর্টে টিকবে না। সাবেক সচিব আবু আলম মো. শহীদ খানও প্রায় একই মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, যেগুলো অনেক আগে নিয়োগ হয়ে গেছে, সেগুলো বাতিল করার সুযোগ নেই।
এদিকে যে ৩০টি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ এসেছে, সেগুলোর ব্যাপারে পিএসসি’র বক্তব্য জানার জন্য পিএসসি চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইনের সাথে একাধিক গণমাধ্যম যোগাযোগ করেছে। কিন্তু তার দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, যেহেতু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও পিএসসি, উভয় সংস্থাই এ বিষয়ে তদন্ত করছে, তাই তদন্ত রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত এ বিষয়ে নতুন কোনও মন্তব্য করবেন না পিএসসি চেয়ারম্যান।
তবে নয়ই জুলাইয়ের সংবাদ সম্মেলনে পিএসসি চেয়ারম্যান বলেছিলেন যে গত ১২ বছর ধরে যেসব পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে সেগুলোর ব্যাপারে ‘কতটা কী হবে’- তা তিনি বুঝতে পারছেন না। তিনি বলেন, ‘যখনই কোনও পরীক্ষা হয়, তখন সেখানে কোনও অনিয়ম হলে আপনাদের (সাংবাদিক) মাধ্যমে হোক বা পরীক্ষার্থীদের মাধ্যমে হোক, বা বিভিন্নভাবে (অভিযোগ) আসে। ১২ বছর আগের পরীক্ষা নিয়ে এতদিন পরে প্রমাণ কীভাবে হবে?
অধরাই ধাকবে ফাঁস প্রশ্নে পাস
কালো বিড়ালগুলো
আদালতে ড্রাইভার আবেদ আলীসহ অন্যদের স্বীকারোক্তি যাচাইবাচাই হবে। এদিকে আইনজীবী খুরশিদ আলম খানের মতে একযোগে পুরো নিয়োগ বাতিল করা সম্ভব না। আগে চিহ্নিত করতে হবে যে কে ফাঁস করলো ও ফাঁসের পরীক্ষায় কে পাশ করলো। এটা তদন্ত ছাড়া সম্ভব না। তদন্ত হলেও আইনগত অনেক জটিলতা আছে। এটা কঠিন।
সাবেক সচিব আবু আরম মো. শহীদ খান বলেন, ১০-১৫ বছর আগের পরীক্ষা বাতিলের কোনও সুযোগ এখন নাই। রিক্রুটমেন্ট হয়ে গেছে। সেক্ষেত্রে পরিপূর্ণ তদন্ত করে বের করতে হবে যে বেনিফিশিয়ারি কারা। তিনি মনে করেন যে যারা বেনিফিশিয়ারি, অর্থাৎ যারা প্রশ্নপত্র ফাঁসের সুযোগ নিয়েছেন এবং প্রশ্ন কিনে উত্তর মুখস্থ করে পরীক্ষা দিয়েছেন, তাদেরকে চাকরি থেকে বহিষ্কার করতে হবে এবং তারা যাতে অন্য কোনও সরকারি চাকরির জন্যও বিবেচিত না হয়, সেটি নিশ্চিত করা উচিৎ।
প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় যার নাম সামনে আসছে, তিনি হলেন সাবেক গাড়িচালক আবেদ আলী। গণমাধ্যমে খবর আসছে যে যারা প্রশ্ন কিনেছেন, তিনি তার স্বীকারোক্তিতে সেই নামগুলো বলে দিচ্ছেন। আবেদ আলী’র স্বীকারোক্তি ব্যাপারে খুরশীদ আলম খান বলেন, সেটি যাচাই করতে হবে যে তিনি স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তি দিচ্ছেন কি না বা সঠিক বলছেন কি না। তার স্বীকারোক্তির ওপর ভিত্তি করে মন্তব্য করা যাবে না।
গ্রেফতারকৃতদের স্বীকারোক্তিই যখন তেমন গুরুত্ব বহন করে না,সেখানে যারা ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্রে সরকারী কর্মকর্তা সেজে বসে আছেন তারা ধরা পড়বেন কিভাবে? বিরাজমান বাস্তবতায় তাদের টিকিটিও তো স্পর্ষ করা কেবল কঠিন নয়, অসম্ভব!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

অবশেষে মুখ খুললেন জেনারেল মইন ইউ আহমেদ

দখিনের সময় ডেস্ক: বিডিআর বিদ্রোহ নিয়ে এবার মুখ খুললেন সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল মইন ইউ আহমেদ। তদন্তে সরকারের সহযোগিতা না পাওয়ার অভিযোগ করলেন সাবেক এই সেনাপ্রধান।...

চাপে পড়ে রাধা-কৃষ্ণের পোস্ট মুছে ফেললেন বলিউড অভিনেত্রী

দখিনের সময় ডেস্ক: বলিউড অভিনেত্রী তামান্না ভাটিয়ার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার প্রোফাইলে ‘রাধা’-সাজের ছবিতে ভরপুর ছিল। এই কাজটিকেই জীবনের অন্যতম সেরা কাজ বলে অভিহিত করেছিলেন...

আওয়ামী শিবেরে হতাশা, নেতা-কর্মীরা দিশেহারা

দখিনের সময় ডেস্ক: আওয়ামী লীগ গত ২৩শে জুন ঘটা করে ৭৫ বছরপূর্তি পালন করেছিল। সেদিন ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত সমাবেশে নেতাকর্মীর উপস্থিতি ছিল কানায় কানায়...

শিরিনের বিরুদ্ধে এবার বাড়ি দখলের অভিযোগ

দখিনের সময় ডেস্ক: সরকারি পুকুর দখলের ঘটনায় দলের পদ হারানোর পর ‍এবার অ্যাডভোকেট বিলকিস জাহান শিরিনের বিরুদ্ধে তিনতলা বাড়ি দখলের অভিযোগ উঠেছে। প্রায় ২ কোটি...

Recent Comments