আলম রায়হান:
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বোস্টার সাক্ষাত করেন ৫ আগস্ট মঙ্গলবার সকাল ১০টায়। মার্কিন রাষ্ট্রদূত বোস্টার খুনীদের তৎপরতার বিষয়ে জানতেন। অভিযোগ আছে, তিনি ঘটনার অনুচক্র হিসেবে কাজ করেছেন।বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা আছে বলে একটি সাধারণ ধারণা রয়েছে।
যদিও কোন কোন সূত্র বলছে, হত্যাকারীদের পরিচয় জানার পর মার্কিনীরাও বিস্মিত হয়েছিল। কারণ তারা যাদেরকে সম্ভাব্য হত্যাকারী মনে করছিল, তার বদলে হত্যাকারী ছিল অন্য একটি গ্রুপ। আগে ধারণা করা সম্ভাব্য হত্যাকারীদের পরিচয় প্রকাশ না করলেও মার্কিন কূটনীতিকদের দাবি, হত্যাকাণ্ডে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো ভূমিকা ছিল না। তখনকার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হেনরি কিসিঞ্জারের কাছেও শেখ মুজিবুর রহমান ততোদিনে আর হুমকি বলে বিবেচিত ছিলেন না।
মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি এবং ঘটনাপ্রবাহের ‘কথ্য ইতিহাস’ ভিন্ন দাবি করে বলছে, তারা বরং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে সতর্ক করেছিল। ১৯৭৫ সালে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড রিসার্চ ব্যুরোর বাংলাদেশ ডেস্কে কর্মরত স্টিফেন আইজেনব্রাউন মার্কিন এসোসিয়েশন ফর ডিপ্লোম্যাটিক স্টাডিজ অ্যান্ড ট্রেইনিং এর ‘কথ্য ইতিহাস’ প্রকল্পে যে সাক্ষাতকার দিয়েছেন তাতে তিনি দাবি করেছেন, মুজিবকে সতর্ক করা হয়েছিল, কিন্তু তিনি (বঙ্গবন্ধু) তা উড়িয়ে দিয়েছিলেন।
‘… ক্যু ষড়যন্ত্র চলছিল, এমনকি মুজিবের জীবনও আশঙ্কার মধ্যে ছিল,’ সেসময়ের পরিস্থিতি বিশেষ করে রক্ষী বাহিনী গঠন এবং একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠার কথা উল্লেখ করে আইজেনব্রাউন বলেন, আমাদের দূতাবাসের কাছে বাংলাদেশীদের এমন ফিসফিসানি ছিল যে কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে। তিনি বলেন: ওয়াশিংটনেও এমন খবর আসছিল। বুঝা যাচ্ছিল যে এটা কিছু অলস মানুষের গল্প–গুজব নয়। শেখ মুজিবের জীবন আসলেই বিপদের মুখে। ‘আমি মনে করতে পারি যে মুজিবকে তার জীবন নাশের আশঙ্কার বিষয়টা জানানো আমাদের নৈতিক দায়বোধের মধ্যে পড়ে কিনা সেসময় এটা নিয়ে আমাদের মধ্যে আলোচনা হয়। সিদ্ধান্ত হয়: হ্যাঁ, এটা আমাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে,’ উল্লেখ করে আইজেনব্রাউন দাবি করেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে সেটা শেখ মুজিবকে জানাতে গিয়েছিলেন রাষ্ট্রদূত ডেভিস ইউজিন বোস্টার।