দখিনের সময় ডেস্ক:
বাংলাদেশে যে কোনো সময় বড় ধরনের ভূমিকম্প আঘাত হানবে। ভূ-তাত্ত্বিক অবস্থান বিশ্লেষণ করে এ কথা বলছেন বিজ্ঞানীরা। সিলেটে পর পর গত দুই দিন বেশ কয়েকবার ভূমিকম্প সেই বড় ভূমিকম্পের ইঙ্গিত বহন করে উল্লেখ করে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
ইন্ডিয়ান, ইউরেশিয়ান এবং বার্মা, তিনটি গতিশীল প্লেটের সংযোগস্থলে বাংলাদেশের অবস্থান। উল্লেখ্য গত শনিবার(২৯মে) সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর ২টার মধ্যে ৫ দফা ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে সিলেট অঞ্চল। গতকাল রবিবার(৩০) ভোরেও একদফা ভূমিকম্প হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপিত আর্থ অবজারভেটরির পরিচালক ভূতত্ত্ববিদ অধ্যাপক সৈয়দ হুমায়ুন আখতার গণমাধ্যমকে বলেন, দেশে ‘বিপজ্জনক ভূকম্পনের’ প্রধান দুটি উৎস আছে। এর একটি হচ্ছে ৩০০ কিলোমিটার দীর্ঘ ডাউকি ‘ফল্ট’। সিলেটের জৈন্তাপুর এলাকার লালাখালসংলগ্ন এলাকা বিপজ্জনক ডাউকি ‘ফল্টের’ পূর্ব প্রান্তের কাছাকাছি। আরেকটা হচ্ছে টেকনাফ-পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি অঞ্চল সাবডাকশন জোন। তিনি বলেন, সামান্য তিন মাত্রার হলেও ৩০-৪০ মিনিটের ব্যবধানে ঘন ঘন ভূমিকম্প হওয়ায় সিলেটবাসী আতঙ্কিত হয়ে গেছে। একই এলাকায় মোট ছয়বার কম্পন হয়েছে। এটিকে ‘আফটার শক’, ‘ফোর শক’ কিছুই বলা যাবে না। এ ভূকম্পন একটা ইঙ্গিত বহন করে যে, এটি সক্রিয় এবং ভবিষ্যতে এখানে বড় মাত্রার ভূমিকম্প যে কোনো সময় হতে পারে।
পৃথিবীর উপরিভাগের ৭০-১০০ কিলোমিটার পুরুত্বের লিথোস্ফিয়ার ছোট-বড় ১৩টি খ-ে (প্লেটে) বিভক্ত। উত্তপ্ত ও নরম এস্তোনোস্ফিয়ারের ওপর ভাসমান এ প্লেটগুলো গতিশীল। প্লেটগুলো গতিশীল থাকায় ভূখ- ধীরে ধীরে সরতে থাকে, যেটিকে ‘অ্যাকটিভ ফল্ট’ বা সক্রিয় চ্যুতি বলা হয়। প্লেটের স্থানচ্যুতির সময় জমে থাকা শক্তি বিপুল বেগে বের হয়, তখন সংযোগস্থলে ভূকম্পন হয়।
বাংলাদেশের উত্তরে ইন্ডিয়ান প্লেট ও ইউরেশিয়ান প্লেটের সংযোগস্থল; পূর্বে বার্মিজ প্লেট ও ইন্ডিয়ান প্লেটের সংযোগস্থল। উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সিলেটের ডাউকি অঞ্চলে রয়েছে এমন ফল্ট। আর ‘সাবডাকশন জোন’সমুদ্র তলদেশের এমন এলাকা যেখানে দুটি টেকটনিক প্লেট মুখোমুখি অবস্থানে থাকে এবং প্লেট দুটি পরস্পরের দিকে এগিয়ে আসতে থাকে। এমন অবস্থায় একটি টেকটনিক প্লেট আরেকটি নিচে চলে গেলে সৃষ্টি হয় ভূমিকম্প। বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের উপকূল বরাবর বঙ্গোপসাগরের এক বিশাল ‘সাবডাকশন জোন’ রয়েছে।