Home নির্বাচিত খবর হাসান আজিজুল হকের প্রয়াণে যা বললেন নবীন-প্রবীণ কথাশিল্পী-কবিরা

হাসান আজিজুল হকের প্রয়াণে যা বললেন নবীন-প্রবীণ কথাশিল্পী-কবিরা

দখিনের সময় ডেস্ক:
কথাশিল্পী হাসান আজিজুল হকের মৃত্যুতে শোকসন্তপ্ত নবীন-প্রবীণ কথাশিল্পী-কবিরা। তারা বলছেন, হাসান আজিজুল হক ছিলেন বাংলা সাহিত্যের দিকপাল। জাতির বিভিন্ন ক্রান্তিকালে বলিষ্ঠ নেতৃত্বের মাধ্যমে তিনি তরুণদের পথ দেখিয়েছেন। তার সাহিত্যে ফুটে উঠেছে স্বদেশ-স্বভাষা ও ব্রাত্যশ্রেণির মানুষের প্রতি অকৃত্রিম দরদ। তার প্রয়াণের সঙ্গে সঙ্গে এই কথাশিল্পী-কবিদের মনে নেমে এসেছে গভীর কালো মেঘের ছায়া।

গভীর শোক প্রকাশ করে কবি নির্মলেন্দু গুণ বলেন, ‘হাসান আজিজুল হক একজন বড় মাপের লেখক ছিলেন। একসময় ইস্ট পাকিস্তান রাইটার্স ইউনিয়ন নামে সংগঠন ছিল। ওই সংগঠনের একটা পত্রিকা ছিল। সেখানে তার তার প্রথম বই নিয়ে আলোচনা করেছিলাম। তার মৃত্যুতে দুঃখ ও শোক প্রকাশ করছি।’

কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন বলেন, ‘হাসান আজিজুল হক আমাদের কথাসাহিত্যের অন্যতম দিকপাল। ষাটের দশকে এসে তিনি লেখালেখি শুরু করেন। তার গল্পের যে বৈচিত্র্য, যে শাশ্বত জীবনবোধ ও প্রকাশের অনবদ্য ভঙ্গি, এসব কিছু মিলিয়ে তিনি আমাদের সাহিত্যের একটি বড় দিগন্ত প্রসারিত করেছেন। আমরা সেই দিগন্ত রেখা ধরে সাহিত্যের স্রোতে বহমান আছি। তার মৃত্যুতে যে শূন্যতা সৃষ্টি হলো, তা কখনোই পূরণ হবে না।’

হাসান আজিজুল হকের মৃত্যুতে যে শূন্যতা তৈরি হয়েছে, তা কখনোই পূরণ হবে না বলে মন্তব্য করেছেন কবি অসীম সাহা। তিনি বলেন, ‘হাসান আজিজুল হক ব্যক্তি জীবনে ছিলেন আদর্শবান। তার মৃত্যুতে বাংলা সাহিত্যের অপূরণীয় ক্ষতি হলো।’ একই অনুভূতি প্রকাশ করেছেন কবি-নাট্যকার-সাংবাদিক সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল। তিনি বলেন, ‘আমি বাকরুদ্ধ! বেদনাক্রান্ত। শোকার্ত। তার খণ্ড খণ্ড স্মৃতি ভাবতে ভাবতে চোখ ভিজে যাচ্ছে। মনে পড়ছে, আমার সম্পাদিত ‘কথাশিল্পীদের কবিতা’র জন্য কবিতা দিতে এসে আজিজ মার্কেটে আমার অফিসে আড্ডা দিয়েছিলেন। এরপর ২০০৯ সাল। নিউ ইয়র্কে মুক্তধারা বইমেলা। বাংলা সাহিত্যের দুই দিকপালের সঙ্গে আমিও মঞ্চে। আমার কড়া আলোচনা সমরেশ মজুমদার ও হাসান আজিজুল হক মন দিয়ে শুনলেন।’

সংক্ষিপ্ত মূল্যায়নসহ শোকপ্রকাশ করেন কবি-ফোকলোরবিদ ও বাংলা একাডেমির উপ-পরিচালক ড. তপর বাগচী। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের ছোটগল্পে হাসান আজিজুল হক এক অপরিহার্য নাম। শুধু বাংলাদেশ বলি কেন, বাংলা ভাষাভাষী সব অঞ্চলেই তার নাম সর্বাগ্রে উচ্চারিত হতে পারে। সেই ষাটের শুরু থেকে কেবল গল্প বুনে চলেছেন। কিংবা বলা যায় যাপিত জীবনের সমুদয় অভিজ্ঞতাকে তিনি গল্পের কাহিনী ও চরিত্রে ধরে রেখেছেন। তিনি কেবল গল্পকারই নন, বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেছেন। দর্শনশাস্ত্র পড়িয়েছেন। শিক্ষক হিসেবেও তিনি সামাজিক দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক আন্দোলনে রাজধানী থেকে দূরে থেকেও সামনের কাতারে অবস্থান করেছেন। এমনকি ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির মতো সাহসী সংগঠনের তিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন, জীবনের ঝুঁকি নিয়েছেন। এরপরও লেখালেখিকেই তিনি মুখ্য ভেবেছেন। আজ তার মহাপ্রয়াণের মধ্য দিয়ে একটি যুগের অবসান হলো। এই মহান সাহিত্যিকের প্রতি আমার পরম শ্রদ্ধা।’

প্রায় একই অনুভূতি প্রকাশ করেছেন কবি-কথাসাহিত্যিক ড. রকিবুল হাসান। তিনি বলেন, “হাসান আজিজুল হক নেই। এটি শোনার পর চুপ করে বসে আছি। বুকের ভেতর দুমড়েমুচড়ে গেলো। একসময় তার স্নেহসান্নিধ্য লাভ করতে পেরেছিলাম। এটা আমার পরম সৌভাগ্য। তিনি তার উজান বাসভবনে ‘আগুনপাখি’ উপন্যাসের পাণ্ডুলিপির অনেকখানি আমাকে পড়ে শুনিয়েছিলেন। আবার তিনিও আমার ‘ভাঙন’ উপন্যাস ও ‘পথের কথা’ প্রবন্ধ বইয়ের ওপর খানিকটা আলোকপাত করেছিলেন। সেটা এক বিরল প্রাপ্তি। আমি একবার উদ্যোগ নিয়েছিলাম কয়েকজন ঔপন্যাসিকের কবিতা নিয়ে একটা সংকলন করবো। উদ্দেশ্য ছিল হাসান আজিজুল হকের কবিতা পাঠকের সামনে আনা। কারণ তিনি নিজের কবিতা প্রকাশ্যে আনতে চাইতেন না। আমি আর অনীক মাহমুদ স্যার অনেক চেষ্টা করে হাসান স্যারের কবিতা বের করতে পেরেছিলাম। সেসব কবিতা নিয়ে ‘নবতরঙ্গের ধ্বনিবন্ধ’ কবিতা সংকলন করেছিলাম। এই নামটিও হাসান আজিজুল হক স্যার দিয়েছিলেন।’’

ড. রকিবুল হাসান আরও বলেন, ‘মাথার ওপর থেকে একটা একটা করে নক্ষত্র খসে যাচ্ছে। আজ খসে গেলেন বিখ্যাত নক্ষত্র হাসান আজিজুল হক। এরকম নক্ষত্র যুগে যুগে জন্মায় না, শতাব্দীতেও না। বহু শতাব্দীর সাধনায় এরকম একটা নক্ষত্র জন্মায়। বাংলা সাহিত্যে তার যে অবদান, তা বিস্ময়কর। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে তিনি চির অমর। কালোত্তীর্ণ মহান এক কথাশিল্পী।’ তার শূন্যতা পূরণ হওয়ার নয় বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

উল্লেখ্য, সোমবার (১৫ নভেম্বর) রাত সাড়ে ৯টায় রাজশাহী মহানগরের চৌদ্দপাই বিশ্ববিদ্যালয় হাউজিং সোসাইটির নিজ বাসায় হাসান আজিজুল হক মৃত্যুবরণ করেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

প্রতিদিন কলা খাওয়ার উপকার

দখিনের সময় ডেস্ক: প্রতিদিন কলা খেলে মেলে অনেক উপকার। কলায় থাকে প্রয়োজনীয় অনেক ভিটামিন। যে কারণে চিকিৎসকেরা নিয়মিত কলা খাওয়ার পরামর্শ দেন। প্রতিদিন অন্তত দুটি...

মোহিনীর প্রেমের এআর রহমানের বিচ্ছেদ, যা বলছেন পুত্র

দখিনের সময় ডেস্ক: ব্যক্তিজীবন নিয়ে সংবাদের শিরোনামে এআর রহমান। সায়রা বানুর সঙ্গে দীর্ঘ ২৯ বছরের দাম্পত্যের অবসান। বুধবার রাতে রহমানের স্ত্রী সায়রার আইনজীবী এই খবর...

স্মার্টফোনে ইন্টারনেট চলে যাচ্ছে? জেনে নিন গতি বাড়ানোর কৌশল!

দখিনের সময় ডেস্ক: অনেকেই মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার করার সময় হঠাৎ করেই দেখেন, নেটওয়ার্ক চলে গেছে। আশেপাশের অন্যরা নির্বিঘ্নে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারলেও আপনার ফোনেই সমস্যা...

প্রতিদিন ৩-৪ লিটার পানি পান করলে কী হয়?

দখিনের সময় ডেস্ক: ওজন কমানো একটি চ্যালেঞ্জিং কাজ হতে পারে। কঠোর ডায়েট অনুসরণ করা, খাবারের প্রতি লোভ নিয়ন্ত্রণ করা, প্রতিদিন জিমে যাওয়া, কঠোর ওয়ার্কআউট করা...

Recent Comments