দখিনের সময় ডেস্ক:
সরকারের সঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) শান্তিচুক্তির দুই যুগ পূর্তী আজ। চুক্তির পর গত দুই যুগে পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলায় সড়ক যোগাযোগসহ ব্যাপক অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে। চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী সংগঠন জেএসএসসহ আঞ্চলিক রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর বিরোধিতা সত্ত্বেও মূল ভূখণ্ড থেকে নানিয়ারচর পর্যন্ত পাহাড়ি জনপদের সবচেয়ে দীর্ঘ সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। একটি প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও একটি মেডিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
সরকারদলীয় পাহাড়ি নেতারা বরাবরই বলছেন, চুক্তির কারণে পার্বত্য তিন জেলায় প্রত্যাশার চেয়েও বেশি উন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু পাহাড়ি আঞ্চলিক সংগঠনগুলোর অন্তর্দ¦ন্দ্ব ও হানাহানি তাদের শঙ্কিত করে রাখে। রাঙামাটি স্থানীয় সরকার পরিষদ চেয়ারম্যান অংশুইপ্রু চৌধুরী বলেন, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে বসে বসে টেনশন করলে তো নিজেকে সুখী বলতে পারি না। চারটি দল আছে। সবাই আধিপত্য বিস্তার করতে চায়। জড়িয়ে পড়েছে চাঁদাবাজিতে। সাধারণ মানুষের মধ্যে হয়তো এ নিয়ে খুব মাথাব্যথা নেই, কিন্তু রাজনীতিতে তো একটা সংকট তৈরি হয়েছে। পাহাড়ে পূর্ণ শান্তি বজায় থাকতে হলে আঞ্চলিক দলগুলোকে সমঝোতায় আসতে হবে।
জেএসএসের প্রচার সম্পাদক নগেন্দ্র চাকমা এ প্রসঙ্গে বলেন, চাঁদাবাজিসহ যা কিছু হচ্ছে তা হলো চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ার উপসর্গমাত্র। পাহাড়ে উন্নয়ন হোক তা আমরা চাই। তবে সবার আগে শান্তিচুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন হতে হবে। নইলে পাহাড়ে শান্তি ফিরবে না। ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর সরকার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) মধ্যে একটি শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর হয়। ওইদিন খাগড়াছড়ি স্টেডিয়ামে জেএসএস সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমা প্রধানমন্ত্রীর হাতে অস্ত্র জমা দেন। সে সঙ্গে তার অনুসারীরা অস্ত্রসমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফেরেন।
চুক্তি সম্পাদনের দিন পর্যন্ত জেএসএস ছিল পাহাড়িদের প্রতিনিধিত্বকারী একমাত্র আঞ্চলিক রাজনৈতিক সংগঠন। কিন্তু চুক্তির দিনই খাগড়াছড়ি মাঠে ব্যানার তুলে ধরে পার্বত্য শান্তি চুক্তি প্রত্যাখ্যান করে জন্ম হয় ইউপিডিএফের। যেটির নেতৃত্ব দেন সন্তু লারমারই একসময়ের শিষ্য প্রসিত বিকাশ খীসা। সংগঠনটি পার্বত্য চট্টগ্রামে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন দাবি করে। পরে জেএসএস ও ইউপিডিএফের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘাত শুরু হয়।