দখিনের সময় ডেস্ক
বগুড়ার ধুনটে বখাটেদের ধর্ষণচেষ্টার শিকার হয়ে লিপি খাতুন (১৭) নামে এক কলেজছাত্রীর বিষপানে আত্মহত্যার ঘটনায় প্রধান আসামি বাবুল মিয়াকে (৪০) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শুক্রবার বিকালে তাকে গ্রেফতার করা হয় বলে জানিয়েছেন ধুনট থানার ওসি কৃপা সিন্ধু বালা। এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান লিপি খাতুন।
রাতেই এ ঘটনায় ধুনট থানায় ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন ওই ছাত্রীর বাবা কৃষক ফজলুল হক।ওসি কৃপা সিন্ধু বালা জানান, শুক্রবার বিকালে প্রধান আসামি বাবুলকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অপর আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে। এছাড়া ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পর পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, লিপি খাতুন ধুনট উপজেলার চৌকিবাড়ি ইউনিয়নের কৈগাতী গ্রামের কৃষক ফজলুল হকের মেয়ে। তিনি এ বছর স্থানীয় জালশুকা হাবিবুর রহমান ডিগ্রি কলেজ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে এইচএসসি পাশ করেন। পার্শ্ববর্তী রুদ্রবাড়িয়া গ্রামের মৃত কান্দু সরকারের ছেলে বাবুল মিয়া প্রায় দুবছর ধরে লিপি খাতুনকে কুপ্রস্তাব ও উত্ত্যক্ত করে আসছে। অত্যাচারে অতিষ্ঠ ছাত্রীর বাবা ফজলুল হক এ ব্যাপারে গ্রামের মাতবরদের কাছে নালিশ করলেও লাভ হয়নি।
বিচার চাওয়ায় বাবুল মিয়া আরও ক্ষুব্ধ হয়। গত ১২ এপ্রিল সকাল ৯টার দিকে বাড়িতে কেউ না থাকায় বাবুল ও তার সহযোগী রফিকুল ইসলাম লিপি খাতুনের ঘরে প্রবেশ করে। তারা ধারাল অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। নিজেকে রক্ষায় লিপি চিৎকার করতে থাকলে প্রতিবেশীরা ছুটে আসেন। তখন বাবুল ও রফিকুল পালিয়ে যায়। ঘটনাটি জানাজানি হলে লোকলজ্জায় লিপি বিষপান করে অসুস্থ হয়ে পড়েন।
পরিবারের সদস্যরা তাকে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে তাকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেলে কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। চিকিৎসকের পরামর্শে পরদিন ১৩ এপ্রিল তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার রাত ১২টার দিকে লিপি খাতুন মারা যান।
লিপির পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেছেন, ধর্ষণচেষ্টার পরপরই বাবা ফজলুল হক ধুনট থানায় বাবুল ও রফিকুলসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেন। কিন্তু পুলিশ অভিযোগটি আমলে নেয়নি। বৃহস্পতিবার রাতে লিপি রাজশাহী মেডিকেলে মারা যাওয়ার খবর পেয়ে পুলিশ অভিযোগটি মামলা হিসেবে রেকর্ড করে।
বাবা ফজলুল হক সাংবাদিকের কাছে অভিযোগ করে বলেন, মেয়েকে উত্ত্যক্তের বিচার চেয়ে গ্রামের মাতবরদের শরণাপন্ন হলেও তাদের সাড়া মেলেনি। থানায় অভিযোগ করা হলেও পুলিশ খোঁজ নেয়নি। তিনি তার মেয়ের মৃত্যুর জন্য দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে বলেন, বখাটেদের কারণে আর কোনো মেয়েকে যেন জীবন দিতে না হয়। ওসি জানান, লিপিদের বাড়ির পাশে পাকা রাস্তার কাজ চলছে। রাস্তায় থাকা খুঁটি সরানো নিয়ে তাদের সঙ্গে ঠিকাদারের লোক বাবুল মিয়ার বাগবিতণ্ডা হয়। এরপর বাড়িতে ঢুকে ধর্ষণচেষ্টা হয়েছে কিনা তা জানা নেই। বিষপানে অসুস্থ ওই ছাত্রী বৃহস্পতিবার রাতে রাজশাহীতে মারা যাওয়ার পর তার বাবা ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা দিলে তা রেকর্ড করেছেন। তবে দায়িত্ব অবহেলার কথা অস্বীকার করেছেন পুলিশের এ কর্মকর্তা।
Post Views:
56