Home বিশেষ প্রতিবেদন মেজর জলিলকে দেখে উল্লাশে ফেটেপড়ে ছাত্র-জনতা

মেজর জলিলকে দেখে উল্লাশে ফেটেপড়ে ছাত্র-জনতা

পুলিশ লাইন্স থেকে অস্ত্র আনার পর মহুরী আবদুল মান্নানকে পাঠানো হয় উজিরপুর থেকে মেজর জলিলকে আনার জন্য। পাকিস্তান আর্মিতে মেজর হিসেবে পদোন্নতি পাবার পর এম এ জলিল ছুটিতে এসে গ্রামের বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। ছুটি থেকে ফেরার পর তাঁকে আনুষ্ঠানিকভাবে মেজরের ব্যাস পরানোর কথা ছিলো। তখন তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে হতেন মেজর। কিন্তু তা আর হয়ে ওঠেনি। উল্টো তিনি হয়েগেলেন, বরিশালের মুক্তিকামী জনতার নয়নের মনি।

মেজর এম এ জলিল

মুক্তিযোদ্ধা এনায়েত চৌধুরীর ভাষ্য মতে, ২৬ মার্চ সকাল সাড়ে দশটার দিকে মহুরী আবদুল মান্নানের ভেসপায় চেপে মেজর জলিল বরিশাল শহরে নূরুল ইসলাম মঞ্জুরের বাসা এসে পৌছান। তাঁকে দেখে উল্লাশে ফেটেপড়ে ছাত্র-জনতা। এ প্রসঙ্গে ১৯৮৩ সালের দিকে লেখকের সঙ্গে আলাপকালে মেজর জলিল বলেছেন, স্বাধানীনতাকামী জনতার উচ্ছাসের জোয়ারে পাক আর্মিতে লোভনীয় চাকুরীর মোহ বিলিন হয়েগিয়েছিলো।

১৯৮৩ সালে মেজর এম এ জলিলের সাক্ষাৎকার গ্রহণ

সদর গার্লস স্কুলের টিটার্স রুমে প্রায় ৪৫ মিনিট বৈঠক শেষে নূরুল ইসলাম মঞ্জুর মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য স্বাধীনবাংলার দক্ষিনাঞ্চলীয় প্রথম সচিবালয়ের দায়িত্ব প্রাপ্ত ৯ জনের নাম ঘোষণা করেন। এরপর মহিউদ্দিন আহমেদ ঘোষণা করেন অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব প্রাপ্ত নূরুল ইসলাম মঞ্জুর ও মেজর জলিলের নাম।
এনায়েত চৌধুরী জানান, ২৬ মার্চ মেজর জলিল দায়িত্ব নেবার পর বেলসপার্কে মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র প্রশিক্ষণ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। তিনি জানান, আগে বন্টন করা অস্ত্র ফেরত নেয়া হয়। আর প্রশিক্ষনের জন্য অস্ত্র পুলিশ লাইনন্স থেকে সকালে আনা হতো এবং সন্ধ্যায় জমা রাখা হতো অস্ত্রাগারে।
বেলসপাকে প্রশিক্ষণ শুরুর সূচনা বক্তব্যে মেজর জলিল বড়বড় বাড়ির কথা উল্লেখ করে বলেছিলেন, আমরা এ ধরনে বাড়িতে থাকবো না। তিনি ক্যাম্পের তাবু দেখিয়ে বলেছিলেন, আমরা এ ধরনের তাবুতে থাকবো। মেজর জলিলের এই বক্তব্য উপস্থিত সকলকে আরো উদ্দীপ্ত করেছে বলে উল্লেখ্য করেন এনায়েত চৌধুরী। তিনি আরো দাবী করেন, পুলিশ লাইন্স থেকে কোন অস্ত্র সদর গার্লস স্কুলে নেয়া হয়নি।
এদিকে প্রাথমিকভাবে বিএম কলেজের ইউটিসির ট্রেনিংপ্রাপ্ত ছাত্ররাই অস্ত্র প্রশিক্ষণ দেবার দায়িত্ব নিয়েছিলো। পুলিশ লাইনন্স থেকে আনা অস্ত্র নিয়ে জোর প্রশিক্ষণ শুরু হলো বেলসপার্ক (বর্তমানে বঙ্গবন্ধু উদ্যান), বিএম কলেজ ও লেডিস পার্ক মাঠে। তবে সবচেয়ে জমজমাট ছিলো বেলস পার্ক। সেখানে শতশত ছাত্র-যুবক-জনতা প্রশিক্ষণ শুরু করে। ট্রেনিং-এর ধরণ ছিলো সাধারণ পদাতিক বাহিনীর মতো। আত্মরক্ষা ও প্রতিরোধের উপর বেশি জোর দেয়া হয়েছে। এদিকে গেরিলা ট্রেনিং-এর জন্য বাছাই করা হয় লাকুটিয়া জমিদার বাড়ির কাছে লাকুটিয়া হাই স্কুল মাঠ।

মনসুরুল আলম মন্টুর ভাষ্যমতে গেরিলা ট্রেনিং দেবার ক্যাম্পের দায়িত্বে ছিলেন, নূরুর হক বাচ্চু। ইনস্ট্রাকটর আবদুল মান্নান ও মো: শাজাহান। শুরুর দিকে গেরিলা ট্রেনিং নেয় ৩০/৩৫ জন। মনসুরুল আলম মন্টু বরিশালের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে তাঁর গ্রন্থে লিখেছেন, ‘আমরা লাকুটিয়া ক্যাম্পে ট্রেনিং নিতে চলে আসি। মনে পড়ে, আমাদের ত্রিশ পয়ত্রিশ জনের মত প্রধানত ছাত্র নেতা-কর্মীদের নাম লিষ্ট করে আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ একটি ট্রাক বোঝাই করে লাকুটিয়ায় পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। আমাদের বলা হয়েছিলো, ওখানে ১৫ দিনের সংক্ষিপ্ত ট্রেনিং নিতে হবে।’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

রয়্যাল এনফিল্ডের বৈদ্যুতিক বাইক আসছে

দখিনের সময় ডেস্ক: বৈদ্যুতিক বাইকের বাজারে ইতোমধ্যেই পা রেখেছে রিভল্ট এবং ওলা। ওলার বাইক বাজারে না এলেও আকর্ষণীয় ডিজাইনের সঙ্গে কম জ্বালানি খরচ নজর কেড়েছে...

দুধের বিকল্প হিসেবে যা খেতে পারেন

দখিনের সময় ডেস্ক: উদ্ভিদ-ভিত্তিক দুধ বর্তমানে জনপ্রিয় হতে শুরু করেছে। এটি বাদাম, ওট, নারিকেল বা মটরশুঁটি যাই হোক না কেন, দুধের এই বিকল্পগুলো স্বাস্থ্যকর ডায়েট...

খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ছাত্র নেতাদের সাক্ষাৎ

দখিনের সময় ডেস্ক: বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে কুশল বিনিময় করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের। বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) সশস্ত্র বাহিনীর দিবস উপলক্ষ্যে সেনাকুঞ্জে আয়োজিত অনুষ্ঠান...

স্কলারশিপ-এ পাকিস্তানে পড়ার সুযোগ ১০০ বাংলাদেশি, প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন

দখিনের সময় ডেস্ক: বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য স্কলারশিপের অনুমোদন দিয়েছে পাকিস্তান। দেশটির প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ স্কলারশিপে ১০০ বাংলাদেশিকে পাকিস্তানে পড়ার সুযোগ দেওয়ার বিষয়টির অনুমোদন দিয়েছেন। সংবাদমাধ্যম...

Recent Comments