Home বিশেষ প্রতিবেদন ভারত থেকে আনা অস্ত্র খালাশ হয় কালীজিরা নদী তীরে

ভারত থেকে আনা অস্ত্র খালাশ হয় কালীজিরা নদী তীরে

স্থানীয় ভাবে সংগ্রহের পাশাপাশি ভারত থেকে অস্ত্র আনার খবর ছিলো পাক গোয়েন্দাদের কাছে। এমন কি অস্ত্রের প্রথম চালান আসার দিনক্ষণও জানাছিলো তাদের। কিন্তু এ অস্ত্র খালাশের স্থান বদল করার কারণে বিফলে যায় মাথা মোটা পাক বাহিনীর বিমান হামলা। বরং এ থেকে বাস্তবতা অনুধাবন করেন বরিশালের নেতৃবৃন্দ।
ঢাকায় ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তান বাহিনীর আক্রমনের খবর জানার কিছু ক্ষণের মধ্যেই অস্ত্র সংগ্রহ করার জন্য বরিশালের নেতৃবৃন্দ ছুটেযান পুলিশ লাইন্সে। এনায়েত চৌধুরীর দেয়া তথ্য মতে, নানান ইকোয়েশন মিলিয়ে ৭৫ রাইফেল ও ২৫ পেটি গুলি আনতে প্রায় ভোর হয়ে যায়। এ খবর নিশ্চয়ই হানাদার বাহিনীর কাছে ছিলো।
বরিশাল নগরীর সদর গালর্স স্কুলের মাঠে বিএম কলেজের ইউটিসির ডামি রাইফেল দিয়ে ছাত্রদের অস্ত্র প্রশিক্ষণ শুরু হয়ে যায় আগেই। শুরুতে এ ছাত্রদের সংখ্যা ছিলো ৩৫/৪০ জন। এদিকে দিনের বেলা চলে প্রশিক্ষণ আর সন্ধ্যায় শুরু হয় উম্মুক্ত মাঠে জাগরণী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, চলে গভীর রাত পর্যন্ত। সভাসমাবেশ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়েছে কৃষি অফিস চত্বরেও। বরিশালে সর্বত্র মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি। সে এক অবর্ণনীয় উদ্দীপনা।
এসব খবর ছিলো প্রতিপক্ষের কাছে। কারোকারো মতে হানাদার বাহিনীর কাছে আরো খবর ছিলো, ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষণের পর বরিশালের অন্দোলনকারীরা ভারত থেকে অস্ত্র সংগ্রহ করছেন। কিন্তু পাকিস্তানীদের এই খবর ছিলো ভিত্তিহীন। তবে ১৭ এপ্রিল যে সময় বরিশাল শহরে পাকিাস্তানী বিমান বাহিনী বিমান হামলা চালায় তখন লঞ্চেকরে ভারত থেকে অস্ত্র পৌঁছেছিলো বরিশালে। বীর মুক্তিযোদ্ধা্ ও সাংবাদিক নূরুল আলম ফরিদ জানান, ভারত থেকে এ অস্ত্র নিয়ে এসেছিলেন সে সময় বরিশালের প্রধান নেতা নূরুল ইসলাম মঞ্জুর।

এই অস্ত্র আসার বিষয়ে পাক্কা খবর ছিলো পাক গোয়েন্দাদের কাছে। যে কারণে ঘাটে নোঙ্গার করা ‘পাঁচ পীর’সহ ঘাট ছেড়ে যাওয়া বেশ কয়েকটি লঞ্চের উপর বোমা বর্ষণ করা হয়েছে যুদ্ধ বিমান থেকে। কিন্তু পাক গোয়েন্দা তথ্যে ঘাটতি ছিলো। ভারত থেকে সেদিন অস্ত্র ঠিকই এসেছিলো। এবং অইদিনই তা খালাশ করা হয়েছে। তবে তা সদর ঘাটে বা শহরের কাছাকাছি আনা হয়নি। খালাশ করা হয়েছে শহর থেকে অন্তত দশ কিলোমিটার পশ্চিমে কলিজিরা নদী তীরে।
এদিকে মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অস্ত্র সরবরাহ নিয়ে নানান ধরনের বক্তব্য এবং তিক্ততা রয়েছে। কারো মতে, ভারত অস্ত্র সরবরাহের বিষয়ে নানান ধরনের ওজর আপত্তি করেছে। এর মধ্যে প্রধান ছিলো, বেসমরিক নেতাদের কাছে অস্ত্র হস্তান্তরে গড়িমসি। কারা মতে এক ধরনের রাইফেলের সঙ্গে দেয়া হয়েছে অন্য ধরনের গুলি সরবরাহ করা হয়েছে। আর পাক বাহিনীর হামলা প্রতিরোধের জন্য বরিশালে যে অস্ত্র দেয়া হয়েছে তা যে কোন নিয়মিত বাহিনীকে মোবাবিলার ক্ষেত্রে মোটেই কার্যকর নয়, তা নিশ্চয়ই ভারতের অজানা ছিরেঅ না। নিশ্চয়ই জানা ছিলো। কিন্তু অজানা ছিলো বরিশালের মুক্তিকামী মানুষের।
নিয়মিত সামরিক বাহিনী সম্পর্কে সম্যক ধারনা না থাকার কারনেই কেবল রাইফেল আর হালকা মেশিনগান দিয়ে হানাদারদেও গানবোটের উপর গুলী বর্ষণ করা হয়েছে। যার অনিবার্য প্রতিক্রিয়ায় ঘটেছে অসংখ্য মৃত্যু। আর শুধু রাইফেল আর হালকা মেশিন গান নয়, মরিচের গুড়া দিয়েও পাব বাহিনী মোকাবিলার ‘পরিকল্পনাও’ করা হয়েছিলো!
মনসুরুল আলম মন্টু তার ‘বরিশাল মুক্তিযুদ্ধের সদরে অন্দরে’ গ্রন্থে লিখেছেন, ‘বারেক ভাইর কথা মনে হলে একা শুয়ে শুয় হাসতাম। মার্চ মাসে তিনি একদিন আমাকে বলেছিলেন, ভয় পাচ্ছিস কেন, আমরা আমাদের নিজস্ব কায়দায় ওদের প্রতিরোধ করবো। সদর রোডের গুলবাগ হোটেলের উপর থেকে বাতাসে ছেড়ে দেব মরিচেন গুড়া। ওরা চোখে মুখে আর কিছু থেতে পাবে না। যতই চোখ মুছবে ততই জ্বানী হবে। তারপর গরম পানি। প্রতিরোধের এ রকম আরও কত পরিকল্পনা।’
এই ‘বারেক ভাই’ মানে আবদুর বারেক কোন সাধারন মানুষ ছিলেন না। উনসত্তর-সত্তুরে তিনি ছিলেন বরিশালের ডাক সাইটে ছাত্র নেতা। সেময় মুক্তিকামী ছাত্র-জনতার মুখেমুখে উচ্চারিত হতো, আমু-বারেক। মানে আমির হোসেন আমু ও আবদুর বারেক। লক্ষনীয় বিষয় হচ্ছে, বাতাসে মরিচের গুড়া উড়িয়ে পাকবাহিনীকে প্রতিহত করার পরিকল্পনা বাজারজাতকারী আবদুর বারেক বাতাসে মিলিয়ে গিয়েছিলেন ২৬ এপ্রিল বরিশার আক্রান্ত হওয়ার দিনই। মুক্তিযুদ্ধে তার কোন অংশ গ্রহণ ছিলো না। তিনি রাজনীতি থেকে দূরে চলেগিয়েছিলেন।
আবদুর বারেক পরে বরিশালে আবার আবির্ভিূত হন জাসদ নেতা হিসেবে। এ ব্যাপার রটনা আছে, ক্ষমতাসীন দলের এক যুব নেতার কামনার রোষানলে স্ত্রী লাঞ্চিত হবার ঘটনায় বিক্ষুব্দ হয়েই আবদুর বারেক আওয়ামী জারসী পদদলিত করে জাসদ নেতা হয়েগিয়েছিলেন। অবশ্য পরে তিনি জেনারেল এরশাদের দলে যোগ দিয়ে সংসদ সদস্য ও বরিশাল জেলা চেয়ারম্যান হয়েছেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

ছোটবেলার যৌন হেনস্তার শিকার হয়েছেন চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায়

দখিনের সময় ডেস্ক: মিটু বিতর্ককে উসকে দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিস্ফোরক পোস্ট করেছেন অভিনেত্রী চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি জানিয়েছেন শৈশবে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছিলেন। নারীর প্রতি যৌন...

একবার আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন বাইডেন

দখিনের সময় ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন একবার আত্মহত্যা করেতে চেয়েছিলেন। বিখ্যাত মার্কিন সাংবাদিক হাওয়ার্ড স্টার্নকে সম্প্রতি দেওয়া এক খোলামেলা সাক্ষাৎকারে এ তথ্য প্রকাশ করেছেন...

ভারতীয় মশলায় ক্যানসারের উপাদান

দখিনের সময় ডেস্ক: ক্যানসার-সৃষ্টিকারী উপাদানের উচ্চ-মাত্রার উপস্থিতি মেলায় ভারতীয় কোম্পানি এমডিএইচ ও এভারেস্ট স্পাইসেসের গুঁড়া মসলা বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে হংকং এবং সিঙ্গাপুর। এই নিষেধাজ্ঞার...

বাউফলে বৃষ্টির জন্য ইসতিসকার নামাজ আদায়

নয়ন সিকদা, বাউফল প্রতিনিধি শনিবার সকাল ৮টায় পটুয়াখালীর বাউফল পাবলিক মাঠে বৃষ্টির জন্য ইসতিসকার সালাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। সহস্রাধিক মুসুল্লির সঙ্গে জাতীয় সংসদের সাবেক চিফ হুইপ...

Recent Comments