Home বিশেষ প্রতিবেদন বিমান হামলায় পরিস্কার হলো বাস্তবতা, দখলদারদের আগমন বার্তা

বিমান হামলায় পরিস্কার হলো বাস্তবতা, দখলদারদের আগমন বার্তা

বরিশালে শহরে বিমান হামলা বাস্তবতা পরিস্কার করেদিলো। বরিশালের নেতৃত্ব অনুধাবন করলেন, পাকিস্তানী বাহিনীর দখল থেকে বরিশালকে রক্ষা করা অসম্ভব। জল ও স্থল পথে কিঞ্চিত বাঁধা দেয়া গেলেও, আকাশ পথের আক্রমনে প্রতিরোধের সকল আয়োজন ভন্ডুল হয়ে যাবে।
বিমান হামলার পর বরিশাল শহরটা অন্য রকম রূপ ধারণ করলো। সর্বগ্রাসী আতংক। থমথমে অবস্থা। অনেকেই দ্রুত শহর ছাড়তে শুরু করেন। সাধারণেরও ধারণা হয়, পাক বাহিনী শহর আক্রমন করলে মুক্তিযোদ্ধারা খুব বেশী সময় টিকতে পারবে না। প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত অনেক মুক্তিযোদ্ধার মনোবলেও চিড় ধরেছিলো। অনেকেই অনুধাবন করতে পেরেছিলেন, বিরাজমান বাস্তবতায় পাকিস্তান সেনা বাহিনীর মুখোমুখি হলে খামোখা প্রাণ দিতে হবে, অর্জন কিছুই হবে না।

জেড আই খান পান্না

বলা হয়, পাকিস্তানী বিমান হামলার পর বাস্তবতা নিয়ে চিন্তা করার তাগিত বোধ করলেন বরিশালের নেতৃত্ব। মনসুরুল আলম মন্টুর ভাষ্য মতে সে সময়ই জেড আই খান পান্না বলেছিলেন, ‘ওরা(পাকবাহিনী) জলে স্থলে এবং অন্তরীক্ষে আক্রমন চালাবে। আর আমার মতে শুধু আকাশ পথেই চালালে যথেষ্ট।’ সেই আকাশ পথের নমুনায়ই সর্বগ্রাসী আতংক ছড়িয়ে পড়ে।
বরিশালে বিমান হামলার পর কেউ স্মরণ করেন সেই প্রবচন, ‘সাহস ভালো, কিন্তু দুঃসাহস ভালো নয়।’ বরিশালের নেতৃত্ব আরো অনুধাবন করলেন, পাকিস্তানী হানাদারদের সঙ্গে প্রতিরোধ যুদ্ধের যে প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে, তা দুঃসাহসেরই নামান্তর। এতে লাভের চেয়ে কেবল ক্ষতি নয়; সর্বনাশ হবে।
এদিকে পাকিস্তানী ফাইটার বিমানের এ হামলার সামরিক তাৎপর্য স্পষ্ট ছিলো বলে মনে করেন নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা। এব্যাপারে ক্যাপ্টেন বেগ তাঁর গ্রন্থে লিখেছেন, ‘স্যাবর জেট লেলিয়ে দেওয়ার অর্থ হলো শীঘ্রই আর্মি আসবে বরিশাল শহর দখল নিতে। জেট বিমান দুইটি তাদের আগমনের ক্ষেত্র প্রস্তুত করেগেলে।’
এ প্রসঙ্গে মনসুরুল আলম মন্টুর গ্রন্থের তথ্যমতে তিনি বিষয়টি নিয়ে আমির হোসেন আমুর সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি তাঁর ‘মুক্তিযুদ্ধের সদরে অন্দরে’ গ্রন্থে লিখেছেন, ‘আমরা বরিশাল রক্ষা করার জন্য পাক মিলিটারিদের সঙ্গে যুদ্ধের যে ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছি তা দুঃসাহসেরই নামান্তর বটে। লাভের চেয়ে লোকশানই হবে।……….আমু ভাইকে আমার মনে কথা সবই খুলে বললাম। যুক্তিগুলো বোধকরি বেশ গুছিয়ে বলতে পেরেছিলাম। আমু ভাইও বোধহয় এ রকমই কিছু চিন্তা করছিলেন। তিনি শুধু বললেন, আমরা রাজনীতি করি, সাধারণ মানুষকে তো অন্ধকারে রাখতে পারি না। আক্রমন প্রতিহত করাটাও গুরুত্বপূর্ণ এবং তুমি যা বলেছো তাও এড়ানো যায় না। আমু ভাই তখন ত্রাণের দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি বললেন, কিন্তু কোলকাতায় যে যাবো, এখানে তো কাজও কম নয়।…….আমি বললাম, আমরা স্বাধীনতার জন্য এমন যুদ্ধ করতে চাই যা অর্থবহ হবে। কাজের যুদ্ধ হবে। যার রেজাল্ট আছে। আমি দৃঢ় মত জানিয়ে দিলাম যে, আমরা ভারত যাবো, সত্যিকার অর্থে প্রশিক্ষণ নেব, উপযুক্ত অস্ত্র দ্বারা ওদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবো। আমার সঙ্গে পান্না সায় দিল, বলল, আমরা তো সিভিল ওয়ার করছি না, আমরা একটা নিয়মিত সৈন্য বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছি। সুতরাং আমাদেরকে নিয়মিত বাহিনীর মতই যুদ্ধ করতে হবে।’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

রয়্যাল এনফিল্ডের বৈদ্যুতিক বাইক আসছে

দখিনের সময় ডেস্ক: বৈদ্যুতিক বাইকের বাজারে ইতোমধ্যেই পা রেখেছে রিভল্ট এবং ওলা। ওলার বাইক বাজারে না এলেও আকর্ষণীয় ডিজাইনের সঙ্গে কম জ্বালানি খরচ নজর কেড়েছে...

দুধের বিকল্প হিসেবে যা খেতে পারেন

দখিনের সময় ডেস্ক: উদ্ভিদ-ভিত্তিক দুধ বর্তমানে জনপ্রিয় হতে শুরু করেছে। এটি বাদাম, ওট, নারিকেল বা মটরশুঁটি যাই হোক না কেন, দুধের এই বিকল্পগুলো স্বাস্থ্যকর ডায়েট...

খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ছাত্র নেতাদের সাক্ষাৎ

দখিনের সময় ডেস্ক: বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে কুশল বিনিময় করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের। বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) সশস্ত্র বাহিনীর দিবস উপলক্ষ্যে সেনাকুঞ্জে আয়োজিত অনুষ্ঠান...

স্কলারশিপ-এ পাকিস্তানে পড়ার সুযোগ ১০০ বাংলাদেশি, প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন

দখিনের সময় ডেস্ক: বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য স্কলারশিপের অনুমোদন দিয়েছে পাকিস্তান। দেশটির প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ স্কলারশিপে ১০০ বাংলাদেশিকে পাকিস্তানে পড়ার সুযোগ দেওয়ার বিষয়টির অনুমোদন দিয়েছেন। সংবাদমাধ্যম...

Recent Comments