বিশেষ প্রতিনিধি:
বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজ করপোরেশনের (পেট্রোবাংলা) তথ্য বলছে, দেশে মাত্র ৯-১০ বছর ব্যবহারের জন্য গ্যাস মজুদ আছে। পেট্রোবাংলার তথ্য অনুযায়ী, দেশে এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত ২৮টি গ্যাসক্ষেত্রের মোট প্রামাণিক মজুদের পরিমাণ ২৯ দশমিক ৯ ট্রিলিয়ন ঘনফুট, যা থেকে চলতি মাস পর্যন্ত ১৯ দশমিক ১১ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা হয়েছে।
দেশের গ্যাস মূলত বিদ্যুৎ উৎপাদন, সারসহ অন্যান্য শিল্প কারখানার উৎপাদন প্রক্রিয়ায় এবং বাসাবাড়িতে রান্নার কাজে ব্যবহৃত হয়। দেশে বর্তমানে ২০টি গ্যাসক্ষেত্রের বেশিরভাগ থেকেই আগের তুলনায় কম গ্যাস উৎপাদন হচ্ছে। সরকারের জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের হাইড্রোকার্বন ইউনিট থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, মাত্র ৪টি গ্যাসক্ষেত্রে আগের চেয়ে বেশি উৎপাদন হচ্ছে।
বর্তমানে সবচেয়ে বেশি উৎপাদনকারী গ্যাসক্ষেত্র বিবিয়ানায় প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে ২৬টি কূপের মধ্যে চলতি মাসের শুরুতে ৬টির উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেলে দেশে গ্যাসের তীব্র সংকট দেখা দেয়। রমজানের প্রথম দিন থেকেই প্রায় এক সপ্তাহ পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন শহরের গ্রাহকেরা গ্যাসের ঘাটতিতে পড়েন বা স্বল্পচাপ অনুভব করেন।
হাইড্রোকার্বন ইউনিটের তথ্য অনুযায়ী, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ৩টি এবং ২টি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের অধীন পরিচালিত গ্যাসক্ষেত্রগুলো থেকে ২০২১ সালে প্রতিদিন ২ হাজার ৩৫২ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন হয়। অথচ ২০১৬ সালে দেশে প্রতিদিন ২ হাজার ৬৬৬ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন হতো।
সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেডের সবচেয়ে বড় গ্যাসক্ষেত্র কৈলাশটিলা থেকে ২০১৬ সালে প্রতিদিন প্রায় ৬৯ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন হতো, চলতি বছরের জানুয়ারিতে সেটা নেমে এসেছে ২৯ মিলিয়ন ঘনফুটে।
১৯৬২ সালে আবিষ্কৃত এই গ্যাসক্ষেত্র থেকে গ্যাস উত্তোলন শুরু হয় ১৯৮৩ সালে। মোট ৭টি কূপের ৫টি থেকেই এখন গ্যাস উত্তোলন বন্ধ আছে। কর্তৃপক্ষ বলছে, ওই ৫টি কূপের তিনটির উৎপাদন আগেই বন্ধ হয়েছে। গত বছর দুটো কূপে গ্যাসের বদলে পানি আসায় বন্ধ করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গ্যাস উৎপাদন কমে যাওয়া দেশের জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য উদ্বেগের বিষয়। তারা নতুন নতুন গ্যাসক্ষেত্র ও কূপের জন্য জোরেশোরে অনুসন্ধান চালানোর কথা বলছেন। তাদের মতে, সরকার সঠিকভাবে গ্যাস অনুসন্ধান চালায়নি। তাই এখনো অনেক জায়গায় গ্যাসক্ষেত্র অনাবিষ্কৃত থাকতে পারে।