গানবোট থেরেক ভারী অস্ত্রের গোলায় মুক্তিবাহিনীর বাংকাগুলো ধ্বংস হয়ে যায়। এ সময় অনেকে শহীদ ও আহত হন। জুনাহারে ইছাকাটির আবদুল মোতালেব আকন্দ, গৌরনদী থানার স্যারালের সিপাহী সিরাজুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ হন।
ভারী অস্ত্রের সাথে টিকতে না পেরে মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটতে শুরু করেন।
প্রায় ৩ ঘন্টা যুদ্ধের পর ঝুনাহারে মুক্তিবাহিনীর ঘাঁটির পতন ঘটে। মুক্তিবাহিনী ঝুনাহার ত্যাগ করার পরও পাকিস্তানী নৌবাহিনী অজানা আতংকে ঝুনাহার অতিক্রম করার সাহস পায়নি।
পাকবাহিনীর আক্রমণ প্রতিরোধে চরবাড়িয়া ইউনিয়নের মহাবাজ বিদ্যালয়ে মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্পে অন্তত ২৫০ জন মুক্তিযোদ্ধা অবস্থান করছিলো। ক্যাম্পের কমান্ডে ছিলেন ফ্লাইট সার্জেন্ট ফজলুল হক, ক্যাপ্টেন মেহেদী আলী ইমাম ও সুবেদার পঞ্চম আলী। পাকবাহিনীর আক্রমণ প্রতিরোধে ছিল ৫ মাইল উত্তর-পূর্ব কোণে ঝুনাহার ঘাঁটি। ঝুনাহার ঘাঁটি আক্রমণের আধাঘন্টার মধ্যে পাকবাহিনী চরবাড়িয়া আক্রমণের জন্য দুটি হেলিকপ্টারে ছত্রী সেনা নামায়। এরপর একযোগে আক্রমণ করে।
তালতলীর পশ্চিমে গানবোট নোঙর করে। এ সময় গানবোট থেকে প্রচন্ডভাবে গুলিবর্ষণ চলতে থাকে। কামানের গুলি ৩/৪ মাইল দূরে গিয়ে আঘাত হানে। পাকসেনারা যাকে সামনে পায় তাকেই গুলি করে হত্যা করে। এ সময় মহাবাজে নাজিরবাড়ির মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্প আক্রমণ করা হয়। পাকসেনারা গণহত্যার পাশাপাশি ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিতে থাকে। এদিকে নিরাপদ অবস্থানে সরেযেতে থাকেন বরিশাল শহরে অবস্থান নেয়া মুক্তিযোদ্ধারা।
বরিশাল দখলের দিন চরবাড়িয়া উইনিয়নে পাক বাহিনী যে বর্বরতা চালিয়েছে তা ইতিহাসে বিরল। নারী-পুরুষ-শিশু নির্বিশেষে সবাইকে হত্যা করেছে।
শয্যাশায়ী ৯০ বছরের বৃদ্ধাকেও রেহাই দেয়নি, বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করেছে। ট্রেঞ্চ ও সদ্য খনন করা পুকুরে যারা আশ্রয় নিয়েছে তাদেরকে হত্যা করা হয় ব্রাশ ফায়ারে। ২৬ এপ্রিল রাতে চরবাড়িয়া ইউনিয়নে লাশ ছাড়া আর কিছু ছিলো না। ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া মানুষগুলো পাশের গ্রামে আশ্রয় নিয়েছিলো।
ঝুনাহারে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধ ব্যবস্থা অল্প সময়ের মধ্যে গুড়িয়ে দেবার পরও হানাদার বাহিনীর গানবোট শহরের দিকে এগোয়নি। ঝুনাহারে গানবোট স্থির রেখে পাকিস্তানী সৈন্যদের একটি দল নামে তালতলিতে। তারা গণহত্যা চালায়। গুলীর রেইঞ্জের মধ্যে যাকে পায় তাকেই গুলী করে। পুড়িয়ে দেয় ঘরবাড়ী। তবে কেউ বলছেন, পাকবাহিনী ঝুনাহারে গান বোট থেকে নামেনি। গানবোট থেকে মটার সেল ছুড়ে হত্যালীলা চালিয়েছে।
(আগামী কাল ১৮তম পর্ব)