Home নির্বাচিত খবর পার্বত্য শান্তি চুক্তি: পাহাড়ি জনগণের মর্যাদার স্বীকৃতি

পার্বত্য শান্তি চুক্তি: পাহাড়ি জনগণের মর্যাদার স্বীকৃতি

বিশেষ প্রতিনিধি:

পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতি পাহাড়ীদের সঙ্গে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ বন্ধ এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সম্পাদিত একটি শান্তি চুক্তি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ১৯৯৬ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণের পর পার্বত্য জেলায় দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতের শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক সমাধানের উদ্যোগ নেন।

এ লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর বাংলাদেশের সংবিধান ও দেশের বিধিবিধান ও আইন যথাযথ অনুসরণ করে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মধ্যে কয়েক দফা সংলাপের পর পার্বত্য শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তিতে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে স্বাক্ষর করেন আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ এবং শান্তি বাহিনীর পক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির নেতা সন্তু লারমা। পার্বত্য চট্রগ্রাম শান্তিচুক্তি পাহাড়ি জনগণের বিশেষ অবস্থান ও মর্যাদার স্বীকৃতি দিয়েছে।

১৯৭৩ সালের মার্চ মাসে সন্তু লারমার নেতৃত্বে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি নামে একটি রাজনৈতিক সংগঠন গড়ে ওঠে। পরবর্তী সময়ে এর সঙ্গে যোগ হয় শান্তি বাহিনী নামে একটি সামরিক শাখা। ১৯৭৫ থেকে ১৯৭৭ সাল এই সময়ের মধ্যে শান্তি বাহিনী সামরিক দিক থেকে অধিকতর সংগঠিত হয়। শান্তি বাহিনী ভারতের ত্রিপুরায় ঘাটি স্থাপন করে সেখান থেকে অভিযান পরিচালনা করে। ১৯৭৭ সালে তারা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি সাঁজোয়া বহরের উপর অতর্কিত হামলা চালায়। এ হামলার পর সেনাবাহিনী ঐ অঞ্চলে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করে এবং পার্বত্য চট্টগ্রামকে ২৪তম ডিভিশনের জিওসির অধীনে আনা হয়। এরপর বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পাল্টা আক্রমণ শুরু করে।

সামরিক পদক্ষেপের পাশাপাশি সরকার পাহাড়ি জনগণকে শান্ত করার লক্ষ্যে সেখানে অর্থনৈতিক উন্নয়ন কার্যক্রম শুরু করে। পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড গঠন করা হয়। তবে উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকান্ড ও ব্যবস্থাপনায় পার্বত্য জনগণের তেমন আস্থা ছিল না। সরকার পাহাড়িদের হারানো ভূমির জন্য পুরোপুরি ক্ষতিপূরণ দিতে চেষ্টা করে এবং আবাসনের জন্য কাজ ও শুরু করে। কিন্তু আশঙ্কা ও ভুল বুঝাবুঝি থেকে পাহাড়িদের মধ্যে জন্ম নেয় ক্ষোভ ও হতাশা।

এর পরিপ্রেক্ষিতে পার্বত্য চট্রগ্রাম শান্তিচুক্তির আওতায় তিন পার্বত্য জেলার স্থানীয় সরকার পরিষদ সমন্বয়ে একটি আঞ্চলিক পরিষদ গঠন করা হয়েছে। আঞ্চলিক পরিষদের গঠন কাঠামো নিম্নরূপ: চেয়ারম্যান ১, সদস্য (আদিবাসী) পুরুষ ১২, সদস্য (আদিবাসী) মহিলা ২, সদস্য (অ-আদিবাসী) পুরুষ ৬, সদস্য (অ-আদিবাসী) মহিলা ১।

বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রামে আর্থসামাজিকভাবেও অনেক উন্নয়ন হয়েছে। ভূমিবিষয়ক আইন ও বিধিমালা ছিল না। এখন ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি আইন ২০০১ প্রণয়ন এবং ২০১৬ সালে আইনটি সংশোধন করা হয়েছে যা চলমান রয়েছে। শান্তিচুক্তির পূর্বে যেখানে এডিপিভুক্ত প্রকল্প ছিল ১টি, এখন সেখানে ১৭টি প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। বর্তমানে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে পার্বত্য চট্টগ্রামে উন্নয়ন বাজেট দেয়া হয়েছে ৯১৫.৮৩ কোটি টাকা আগে (১৯৯৭-৯৮ অর্থবছরে) যা ছিল ৫০.৫৭ কোটি টাকা। ঢাকার বেইলি রোডে ১.৯৪ একর জমির ওপর ১২০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রাম কমপ্লেক্স। শান্তিচুক্তির পর পার্বত্য অঞ্চলের জেলাগুলোয় স্বাস্থ্য খাতে দ্রুত অগ্রগতি হয়েছে। পূর্বে পার্বত্য অঞ্চলে কোনো মেডিকেল কলেজ, নার্সিং ট্রেনিং ইন্সটিটিউট ও কমিউনিটি ক্লিনিক ছিল না। বর্তমানে ট্রাইবাল স্বাস্থ্য কর্মসূচি ২০১১-১৬ মেয়াদে তিন পার্বত্য জেলায় স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

স্মার্টফোনে ইন্টারনেট চলে যাচ্ছে? জেনে নিন গতি বাড়ানোর কৌশল!

দখিনের সময় ডেস্ক: অনেকেই মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার করার সময় হঠাৎ করেই দেখেন, নেটওয়ার্ক চলে গেছে। আশেপাশের অন্যরা নির্বিঘ্নে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারলেও আপনার ফোনেই সমস্যা...

প্রতিদিন ৩-৪ লিটার পানি পান করলে কী হয়?

দখিনের সময় ডেস্ক: ওজন কমানো একটি চ্যালেঞ্জিং কাজ হতে পারে। কঠোর ডায়েট অনুসরণ করা, খাবারের প্রতি লোভ নিয়ন্ত্রণ করা, প্রতিদিন জিমে যাওয়া, কঠোর ওয়ার্কআউট করা...

ডিভোর্সের দুদিন পরই সুখবর দিলেন এ আর রহমান

দখিনের সময় ডেস্ক: নিন্দুকরা মনে করছে বাংলার মেয়ে গিটার বাদক মোহিনী দে-র জন্যই হয়ত সায়রাকে ছেড়েছেন ভারতের অস্কারজয়ী সংগীতশিল্পী ও সুরকার এ আর রহমানের। তবে...

যৌন পর্যটনের নতুন কেন্দ্র টোকিও, সেক্স ইন্ডাস্ট্রির জড়িত কিছু চক্র

দখিনের সময় ডেস্ক: যখন স্বর্ণযুগ ছিল, শহরটি অর্থনীতিতে ব্যাপক উন্নতি দেখেছে। এটি এখনো বিশ্বের অন্যতম বাসযোগ্য শহর হিসেবে নিজের অবস্থান ধরে রেখেছে। তবে আশঙ্কার বিষয়...

Recent Comments