স্টাফ রিপোর্টার ॥
দুই ঈদে বাংলাদেশের মানুষ ব্যাপকভাবে গ্রামের বাড়িতে যায়। করোনা মহামারীও এই প্রবনতা থেকে মানুষকে খুব একটা নিবৃত করতে পারেনি। যা প্রকটভাবে প্রমানিত হয়েছে গত ঈদুল ফিতরে।
গত রোজার ঈদে লকডাউনের মধ্যেও অনেক মানুষ গাদাগাদি ভিড় করে ঢাকা ছেড়ে গেছেন। এদিকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের হিসেব অনুযায়ী, করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যার হিসেবে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে ঢাকা মহানগরী। গত ঈদের মতো এবারের ঈদেও গণপরিবহন চলাচলে লাগাম টানার পরামর্শ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের।
যতো টেস্ট হচ্ছে তার ২৩% থেকে ২৫% পজিটিভ ফলাফল আসছে। যদি মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা না হয়, তাহলে ঈদ-পরবর্তী সময়ে সংক্রমণ বেড়ে যাবে। সীমিত পরিসরেও যদি চলে সেখানে গণপরিবহনগুলো কতোটা সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করতে পারবে সেটা নিয়ে সন্দেহ আছে। বাস্তবে গণপরিবহনে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব হয় না। ঈদের সময় তো এর কোন বালাই থাকে না।
ঈদুল আহজা, কুরবানীর ঈদ সমাগত। এবারও মানুষ গ্রামের বাড়িতে ফিরবে– এটি ধরে নেয়া যায়। এর ফলে আর একদফা করোনা ভাইরাস সংক্রমন বৃদ্ধির আশংকা করছেন অনেকেই। কুরবানির ঈদের ছুটি শুরু হতে এক সপ্তাহের মতো সময় বাকি। এরই মধ্যে প্রিয়জনের সাথে ঈদ করতে শহর ছেড়ে গ্রামে এবং গ্রাম ছেড়ে শহরের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেছেন সাধারণ মানুষ। ঈদে এমন চিত্র স্বাভাবিক হলেও করোনাভাইরাসের এই প্রাদুর্ভাবের সময়ে বিপুল সংখ্যক মানুষের যাতায়াত এই ভাইরাস ছড়িয়ে দেয়ার ঝুঁকি বাড়াবে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বাংলাদেশে প্রতিবছর ঈদকে কেন্দ্র করে সড়কপথ ও রেলপথে প্রায় ৬৫ লাখ মানুষ ঢাকা ছেড়ে যান। বাংলাদেশে যা বছরের সবচেয়ে বড় অভ্যন্তরীণ চলাচল।
গত রোজার ঈদে লকডাউন পরিস্থিতি এবং গণপরিবহণ বন্ধ থাকার কারণে অনেকেই এক জেলা থেকে আরেক জেলায় যাতায়াত করতে পারেনি। কিন্তু কুরবানির ঈদে দূরপাল্লার গণ-পরিবহনে চলাচলে এখন পর্যন্ত সরকারি কোন নিষেধাজ্ঞা না থাকায় এবার বেশি সংখ্যক মানুষ চলাচল করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
যে মুহূর্তে দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে, সে সময়ে করোনাভাইরাস উপদ্রুত ঢাকা শহর থেকে একসঙ্গে এতো মানুষের চলাচল ঢাকার বাইরে অন্যান্য জেলায় ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ শারমিন ইয়াসমিন। তিনি বলেন, রোজার ঈদে লকডাউন থাকা সত্ত্বেও আমরা নৌপথে দেখেছি মানুষ কিভাবে গাদাগাদি করে চলাচল করেছে। কেউ কোন স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা করেনি। এরপর করোনাভাইরাসের প্রকোপ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল। এবারও একই আশংকা করা হচ্ছে। রোজার ঈদের চাইতে এবারের করোনাভাইরাস পরিস্থিতি আরও নাজুক থাকায় ঝুঁকি কয়েকগুণ বেশি বলেই তিনি মনে করছেন। এমন অবস্থায় এবারের ঈদেও গণ চলাচলে লাগাম টানার পরামর্শ দেন এই জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ।