Home বিশেষ প্রতিবেদন ভাস্কর্য বিরোধী চক্রের বিরুদ্ধে কংক্রিট কৌশল হচ্ছে রাজনীতি এবং রাজনীতি: গাজী নঈমুল...

ভাস্কর্য বিরোধী চক্রের বিরুদ্ধে কংক্রিট কৌশল হচ্ছে রাজনীতি এবং রাজনীতি: গাজী নঈমুল হোসেন লিটু

কাজী হাফিজ ও জুবায়ের আল মামুন ॥

রাষ্ট্র আইন প্রয়োগ করে জঙ্গীবাদ দমন করেছে। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য বিরোধিতা যদি জঙ্গীবাদের দিকে নিয়ে যাওয়ার অপচেষ্টা করা হয় তা হলে রাষ্ট্র নিশ্চয়ই আইন অনুসারে ব্যবস্থা নেবে। তবে সে পর্যন্ত যেতে হবে বলে আমার মনে হয় না। এর আগেই বিশ্বনেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছেন। এ নিয়ে তেমন দুশ্চিন্তার কারণ আছে বলে মনে হয় না। আমার বক্তব্য হচ্ছে, ভাস্কর্য বিরোধী চক্রের বিরুদ্ধে ‘কংক্রিট কৌশল’ হচ্ছে রাজনীতি এবং রাজনীতি! সঙ্গে ভাস্কর্যের বিরোধিতাকারী চক্রের কাছে আমার প্রশ্ন, কোন্ সভ্য দেশে ভাস্কর্য নেই? যারা ভাস্কর্য বিরোধী তান্ডব করার চেষ্টা করছে তাদের গুরু পাকিস্তানেও ভাস্কর্য আছে। সেখানে বেনজির ভুট্টোরও ভাস্কর্য আছে। মুসলিম দেশে ভাস্কর্যের অভাব নেই। আসলে আন্দোলন নয়, একটি ইস্যুকে কেন্দ্র করে দেশের স্থিতিশীলতা নষ্ট করতে নতুন করে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। এর সঙ্গে বিএনপি-জামায়াত-জঙ্গী জড়িত। তারা ভিতরে ভিতরে প্রস্তুত হচ্ছে।

দৈনিক দখিনের সময়-এর সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে এভাবেই বললেন, বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের ১৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর গাজী নঈমুল হোসেন লিটু। তবে তিনি যত না কাউন্সিলর তার চেয়ে বেশি রাজনীতিক। এ ব্যাপারে তার বক্তব্য, ‘আমি কাউন্সিলর হবার জন্য রাজনীতিতে আসিনি, রাজনীতিতে এসে কাউন্সিলর হয়েছি। কিন্তু রাজনীতিতে আসার সময় কাউন্সিলর হবার স্বপ্ন ছিলো না। আমার এলাকার কাউন্সিলর ডিভি পেয়ে আমেরিকা যাবার পর উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কাউন্সিলর নির্বাচন করেছি। বাবা বেঁচে থাকলে হয়তো কাউন্সিলর নির্বাচন করতে দিতেন না।’

উল্লেখ্য, কাউন্সিলর জনাব লিটুর পিতা অধ্যাপক হোসেন আলী ছিলেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ। মেধা-মনন ও সততায় শিক্ষক সমাজে তিনি এক আদর্শ হয়ে আছেন। অধ্যাপক হোসেন আলী বরিশাল কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল হিসেবে অবসরে গেছেন। পিতার পদাংক অনুসরন করে গাজী নঈমুল হোসেন লিটুও পেশা হিসেবে শিক্ষকতাকে গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু রাজনীতির চাপে মানুষ গড়ার কারিগর হিসেবে তার আর থাকা হয়নি। তিনি এখন নগর সেবক। রাজনীতিই এখন তাঁর ধ্যানজ্ঞাণ। খেলাঘরের মাধ্যমে সাংগঠনিক দক্ষতা অর্জন এবং ৮৩ সালে শুরু করা রাজনৈতিক পথ চলার ক্লান্তিহীন পথিক হিসেবে গাজী নঈমুল হোসেন লিটু ধারবাহিকভাবে তিনবারের ওয়ার্ড কাউন্সিলর।

দৈনিক দখিনের সময়-এর সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে গাজী নঈমুল হোসেন লিটু বলেন, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন হয়েছে বলেই আমরা এখানে পৌছাতে পেরেছি। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বপরিবারে হত্যার মাধ্যমে দেশের চাকা উল্টো দিকে ঘুরানো না হলে অনেক আগেই আমরা অকল্পনীয় উচ্চতায় পৌঁছাতে পারতাম।

প্রশ্ন: এই প্রত্যাশার ভিত্তি কী?
উত্তর: প্রত্যাশার ভিত্তি অত্যন্ত পরিস্কার। তা হচ্ছে, বঙ্গবন্ধুর মেধা, দক্ষতা ও নেতৃত্বের উচ্চতা; সর্বোপরি দেশ ও মানুষের প্রতি তাঁর অপার মমতা। সামগ্রিক গুণাবলীর কারণেই ৪৯ বছর বয়সে বঙ্গবন্ধু বিশ্বনেতা হয়েছেন। সাত কোটি মানুষকে নিয়ে তার একটি কমিটমেন্ট ছিলো। তিনি মানুষে-মানুষে বৈষম্য দূর করতে চেয়েছেন। যারা নেতৃত্বে আছেন তাদেরকে বঙ্গবন্ধুর এই গুনাবলী ও আদর্শ অনুসরণ করতে হবে। আমরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করি। আর বঙ্গবন্ধুর রক্ত-আদর্শ-রাজনীতির উত্তরাধিকার হিসেবে বাংলাদেশকে অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কেবল তাই নয়, ২১ বছরের ধারাবাহিক অপশাসন ও অপকৌশলের জাল ছিন্ন করে আওয়ামী লীগ সভাপতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশকে সঠিক পথে স্থাপন করেছেন। এরপর তিনি দেশকে দ্রুত গতিতে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। দেশ যে আজ কোন সক্ষমতায় পৌঁছেছে তার মূর্তমান প্রতীক হয়ে আছে, পদ্মাসেতু। শুধু তাই নয়, করোনা মহামারির কারণে বিশ্ব যখন টালমাটাল অবস্থায় পড়েছে সেখানে বাংলাদেশ পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মেধা ও দক্ষতা দিয়ে অক্লান্ত পরিশ্রম করে দেশ ও জাতিকে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।
প্রশ্ন: এতো প্রধানমন্ত্রীর সেবার কথা বললেন, নগর সেবক হিসেব আপনারা বরিশাল নগরবাসীকে কতটুকু সেবা দিতে পেরেছেন?
উত্তর: আপনার প্রশ্নের মধ্যে ইঙ্গিত খুবই পরিস্কার! নগরবাসীর দৃষ্টিতে আমাদের ব্যর্থতা অস্বীকার করা যাবে না। আমার নিজেরও অনেক ব্যর্থতা আছে। অনেক রাস্তা মেরামত করা যায়নি। গত ৭ বছরে হোসেন আলী সড়ক করতে পারিনি। বর্ষা হলে নগরীর অনেক সড়ক ডোবে, ঘরে পানি ওঠে; নগরে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়।
প্রশ্ন: তা হলে আপনাদের নিয়ে নগরবাসীর হতাশাই কপালের লিখন?
উত্তর: মোটেই তা নয়! সাধারণ ভাবে দৃশ্যমান নগর সেবা বলতে যা বুঝায় তা কিন্তু শুরু হয়েগেছে। রাস্তা হচ্ছে। জলাবদ্ধতা দূর করার জন্য খাল পরিস্কার করা হচ্ছে। আধুনিক পদ্ধতিতে এই খাল খনন করা হবে। দুই তীরে রাস্তা হবে। এরই মধ্যে খালের তীরের বাড়ির প্লান দেয়া বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। খাল ও খালের তীর থেকে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করা হবে। মাননীয় মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ বড় পরিকল্পনা নিয়ে আগাচ্ছেন। ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্টের জন্য ভারতের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। এদিকে জার্মানের কে.এফ.ডব্লিউর সাথে চুক্তি হয়েছে। এ চুক্তির আওতায় খাল ও রাস্তার জন্য ১২শ’ কোটি টাকা পাওয়া যাবে। এর মধ্যেই ১৩৩ কোটি টাকার কাজের টেন্ডারের পর কার্যক্রম শুরু হয়েগেছে। এদিকে রাস্তার জন্য ৬৫৫ কোটি টাকার প্রকল্প একনেকের অনুমোদন প্রক্রিয়ায় রয়েছে।
প্রশ্ন: তা হলো এক আরব্য রজনির গল্পের মতো, কাহিনী শেষ হবার আগেই রাত শেষ হয়ে যাবে?
উত্তর: না। মোটেই এমনটি নয়!
প্রশ্ন: ফান্ডিং-এর যে গতি তাতে অর্থ পেলেও আপনারা কাজ কতটা করতে পারবেন? কাজ করতে তো সময় লাগে। আপনাদের মেয়াদ তো আর অনন্ত কাল নয়!
উত্তর: না। কারো জীবন বা দায়িত্বের মেয়াদ অন্ততকাল হয় না। তা আপনি ভালো করেই জানেন। আর আপনি সময়সীমা প্রসঙ্গে যে কথা বলছেন তা পুরনো ধারণা প্রসুত। এখন বাস্তবতা ভিন্ন। এখন কাজ হয় আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে। এটা সময় সাশ্রয়ী, সময় খুবই কম লাগে। পাশাপাশি টেকসই হয়। এই ধরেন, বিটুমিন গলানোর সনাতনী পদ্ধতি টেকসই নয়। রাস্তায় ব্যবহৃত বিটুমিনের কার্যকারিতা নির্ভর করে গলানোর জন্য তাপমাত্রার মাত্রার উপর। বিটুমিন অধিক তাপমাত্রা অথবা স্বল্প তাপমাত্রায় গলালে হবে না। এই তাপমাতার একটি নির্দিষ্ট মাত্রা আছে। এটি আগে বিবেচনায় নেয়া হতো না, বর্তমান মেয়র বিষয়টি পুরো বিবেচনায় নিয়েছেন। মাননীয় মেয়র ছয়-সাত বছরের গ্যারান্টি নিয়ে রাস্তা নির্মান করার শর্ত দিয়েছেন। আগের মেয়রদের মতো কাজ দেখাবার জন্য সদর রোডের রাস্তা এক বছরে তিনবার মেরামত করার অপকৌশলে বর্তমান মেয়র চলেন না। চার বছরে পাঁচবার সদর রোড করা আর হবে না


বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের ১৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর গাজী নঈমুল হোসেন লিটুর সঙ্গে দখিনের সময় পরিবারের একাধিক সদস্যের কথা হয় গত ১৯ ডিসেম্বর শনিবার নতুন বাজারস্থ কাউন্সিলরের কার্যালয়ে। খুবই রুচিসম্মত অফিস। ছিমছাম গুছানো, পরিকল্পিত অফিস। এ প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের উত্তরে যথাযথভাবে প্রয়োজনীয় রেকর্ড সংরক্ষনের কথা জানালেন আদর্শবান শিক্ষকের সন্তান সংস্কৃতিমনা মিডিয়া বান্ধব গাজী নঈমুল হোসেন লিটু। তবে বরিশালের মিডিয়ার উপর তার ক্ষোভেরও কিন্তু অন্ত নেই। এ প্রসঙ্গে গাজী নঈমুল হোসেন লিটু বললেন, আমি সকল ধরনের অনিয়ম থেকে নিজকে দূরে রেখেছি। এরপরও আমার চরিত্র হনণ করা হয়েছে। এমনকি আমাকে ভূমিদস্যুও বলা হয়েছে পত্রিকায়। যা মোটেই সত্য নয়। সংবাদপত্রকে বলা হয় সমাজের দর্পন। কিন্তু বরিশালে সেই অবস্থা আছে বলে মনে হয় না। অথচ শিল্প-সংস্কৃতি-সাংবাদিকতায় বরিশালের গর্ব করার মতো ঐতিহ্য রয়েছে। আশির দশকেও এই ধারা অব্যাহত ছিলো। এখনো অনেকে আছেন, যারা সঠিক সাংবাদিকতার ধারা অব্যাহত রাখার চেষ্টা করছেন। কিন্তু এর বিপরিতের সংখ্যাই বেশি। এদের অনেকে সাংবাদিকতা পেশায় আছেন যারা সাংবাদিকতার ‘স’ জানে না। এদের কে কোন পত্রিকার বলা কঠিন। চরম এক অরাজক অবস্থা চলছে! আসলে কালচারের মান অনেক নেমেগেছে।

প্রশ্ন: এর কারণ কী?
উত্তর: একাধিক কারণ রয়েছে। এর মধ্যে প্রধান হচ্ছে, শিশু-কিশোরদের বেড়েওঠার মহল্লা ভিত্তিক প্রক্রিয়া ধ্বংস হয়ে যাওয়া। আমি খেলাঘর করেছি। আমাদের সময়ও মহল্লায় শিশু-কিশোরদের গড়ে ওঠার একাধিক অরাজনৈতিক প্লাটফর্ম ছিলো। কিন্তু ৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর মহল্লা ভিত্তিক এইসব অরাজনৈতিক সংগঠনের নেতৃত্ব বিএনপি নেতারা দখল করলেন। এই ধারায় সংগঠনগুলো ধ্বংস হয়েগেলো। ফলে চিন্তা-চেতনায় শিশু-কিশোরদের বেড়েওঠার সূতিকাগার আর থাকলো না। এরই বিরূপ প্রভাব পড়েছে বিভিন্ন ক্ষেত্রে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আরো অনেক কারণ। এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে এবং পেশায়। সবচেয়ে বিরূপ অবস্থা বিরাজ করছে সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে। এ থেকে উত্তরণ প্রয়োজন।

অপর এক প্রসঙ্গে গাজী নঈমুল হোসেন লিটু বেশ হতাশা নিয়েই বলেন, স্থানীয় সরকার সময়ের চাহিদা মতো কার্যকর হবার কথা ছিলো; কিন্তু তা হয়নি। ফলে যা হবার তাই হয়েছে। জনগনের টাকা লুটপাট হয়েছে। এই অবস্থা থেকে আমাদের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ বেরিয়ে আসতে চান।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

স্মার্টফোনে ইন্টারনেট চলে যাচ্ছে? জেনে নিন গতি বাড়ানোর কৌশল!

দখিনের সময় ডেস্ক: অনেকেই মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার করার সময় হঠাৎ করেই দেখেন, নেটওয়ার্ক চলে গেছে। আশেপাশের অন্যরা নির্বিঘ্নে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারলেও আপনার ফোনেই সমস্যা...

প্রতিদিন ৩-৪ লিটার পানি পান করলে কী হয়?

দখিনের সময় ডেস্ক: ওজন কমানো একটি চ্যালেঞ্জিং কাজ হতে পারে। কঠোর ডায়েট অনুসরণ করা, খাবারের প্রতি লোভ নিয়ন্ত্রণ করা, প্রতিদিন জিমে যাওয়া, কঠোর ওয়ার্কআউট করা...

ডিভোর্সের দুদিন পরই সুখবর দিলেন এ আর রহমান

দখিনের সময় ডেস্ক: নিন্দুকরা মনে করছে বাংলার মেয়ে গিটার বাদক মোহিনী দে-র জন্যই হয়ত সায়রাকে ছেড়েছেন ভারতের অস্কারজয়ী সংগীতশিল্পী ও সুরকার এ আর রহমানের। তবে...

যৌন পর্যটনের নতুন কেন্দ্র টোকিও, সেক্স ইন্ডাস্ট্রির জড়িত কিছু চক্র

দখিনের সময় ডেস্ক: যখন স্বর্ণযুগ ছিল, শহরটি অর্থনীতিতে ব্যাপক উন্নতি দেখেছে। এটি এখনো বিশ্বের অন্যতম বাসযোগ্য শহর হিসেবে নিজের অবস্থান ধরে রেখেছে। তবে আশঙ্কার বিষয়...

Recent Comments