দখিনের সময় ডেস্ক:
ভারতীয় নাগরিক হাফেজ আহম্মেদ। বাংলাদেশে এসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে সৌদি আরব পাড়ি দেন তিনি। দেশ ছাড়ার পর ওই ভারতীয় নাগরিকের আবেদনের মূল রেকর্ডপত্রসহ সব নথি পাসপোর্ট অফিস থেকে গায়েবও হয়ে যায়।
অথচ পুলিশ প্রতিবেদনে তার জালিয়াতির বিষয়টি ধরা পড়েছিল। অথচ বড় অঙ্কের লেনদেনের মাধ্যমে রাজশাহী পাসপোর্ট অফিসের অসাধু কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী জালিয়াতির বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্তে গোপন সব তথ্য-উপাত্ত বেরিয়ে আসে। অনুসন্ধান ও তদন্তে জালিয়াতির প্রমাণ মেলায় রাজশাহী পাসপোর্ট অফিসের সাত কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং হাফেজ আহম্মেদকে আসামি করে আদালতে চার্জশিট দাখিলে কমিশনের অনুমতি চাওয়া হয়েছে। দুদকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তদন্ত প্রতিবেদনে যাদের দায়ী করা হয়েছে তারা হলেন- পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক মো. আবজাউল আলম। তিনি বর্তমানে যাত্রাবাড়ী আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে কর্মরত। সাময়িক বরখাস্ত হওয়া অফিস সহায়ক রঞ্জু লাল সরকার ও হুমায়ুন কবির, রাজশাহী পাসপোর্ট অফিসের সাবেক উচ্চমান সহকারী ও আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসের সুপারিনটেনডেন্ট মো. দেলোয়ার হোসেন, ডাটা এন্ট্রি কন্ট্রোল অপারেটর আলমাস উদ্দিন, রেকর্ড কিপার মো. ইব্রাহিম হোসেন ও সাঁট মুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর মো. আব্দুল ওয়াদুদ। প্
রধান আসামি করা হচ্ছে ভারতীয় নাগরিক হাফেজ আহম্মেদকে। যদিও দুদকের রাজশাহী সমন্বিত জেলা কার্যালয় এর আগে তাদের বিরুদ্ধে এ সংক্রান্ত একটি মামলা দায়ের করে। ওই মামলায় তাদের সবাইকে আসামি করা হয়।
ভারতীয় নাগরিক হাফেজ আহম্মেদ ২০১৭ সালের ৬ জুন রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানার সাপুরা ডাকঘরের ছোট বনগ্রামের নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে পাসপোর্ট ইস্যুর জন্য রাজশাহী বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসে অনলাইনে আবেদন করেন। পাসপোর্ট অফিসের অফিস সহায়ক রঞ্জু লাল সরকার আবেদনপত্রটি অফিসিয়ালি জমা দেখিয়ে নিজ হেফাজতে রাখেন। এরপর রঞ্জু লাল সরকার তার পরিচিত ট্রাভেল এজেন্সির মালিক জনৈক গিয়াস উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
পাসপোর্টের আবেদনপত্র জমা থেকে শুরু করে পাসপোর্ট প্রদান পর্যন্ত সব কাজ সম্পন্ন করতে অবৈধ লেনদেনে চুক্তিবদ্ধ হন তারা। পরে রঞ্জু লাল সরকার রাজশাহী সিটি করপোরেশনের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর মো. নূরুল ইসলাম রাজুর মাধ্যমে জন্মসনদ তৈরি করেন। ২০১৭ সালের ১৩ জুন ট্রাস্ট ব্যাংকের মাধ্যমে পাসপোর্ট ফি-বাবদ তিন হাজার ৪৫০ টাকা পরিশোধ করা হয় এবং ২০১৭ সালের ৯ জুলাই পাসপোর্টের উচ্চমান সহকারী মো. দেলোয়ার হোসেনের নিকট আবেদনপত্রটি উপস্থাপন করা হয়। তার অনুমোদনের পর আবেদনপত্রটি অন্যান্য আবেদনপত্রের ন্যায় একই তারিখে বায়ো-এনরোলমেন্ট কার্যক্রম সম্পন্ন না করে ১২ জুলাই তা সম্পন্ন করা হয়। ২০১৭ সালের ৩১ জুলাই বাংলাদেশ পুলিশের রাজশাহী সিটি স্পেশাল ব্রাঞ্চের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট আবেদনসহ মোট ৪৩টি আবেদনের বিষয়ে পুলিশ প্রতিবেদন পাঠানো হয়। পুলিশ প্রতিবেদনে আবেদনকারী হাফেজ আহম্মেদকে ভারতীয় নাগরিক হিসেবে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু স্পেশাল ব্রাঞ্চের মডিউলের দায়িত্বপ্রাপ্ত পাসপোর্ট অফিসের কর্মচারী আসামি মো. হুমায়ুন কবির অসৎ উদ্দেশ্যে বিষয়টি কম্পিউটার সিস্টেমে ইনপুট দেননি।
ফলে ১৮ আগস্ট আবেদনপত্রটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে অ্যাপ্রুভাল মডিউলে চলে যায়। রাজশাহী বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক মো. আবজাউল আলম তার দাপ্তরিক বিভিন্ন কাজে সহায়তাকারী ডাটা এন্ট্রি কন্ট্রোল অপারেটর আলমাস উদ্দিনের মাধ্যমে ৩০ আগস্ট ডাটা কারেকশন (ঠিকানা- বাড়ির নম্বর সংশোধন) করে পাসপোর্ট প্রদানের চূড়ান্ত অনুমোদন দেন।