Home প্রযুক্তি ফেসবুকে প্রতারণার ফাঁদ:অসহায় দুস্থদের ছবি দিয়ে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে লাখ লাখ টাকা

ফেসবুকে প্রতারণার ফাঁদ:অসহায় দুস্থদের ছবি দিয়ে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে লাখ লাখ টাকা

দখিনের সময় ডেস্ক:

তথ্যপ্রযুক্তির এ যুগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক চেনেন না বা নাম শোনেননি এমন মানুষ খুব কমই আছে। প্রতিদিনই সবাই নিজের ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিকসহ নানা বিষয় ফেসবুকে শেয়ার করে থাকেন। বাদ যায় না অসহায়দের মানবিক সহায়তার আবেদনও। একটু সহযোগিতা পাওয়ার আশায় অনেকেই নিজে বা কোনো স্বজনের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে উন্নত চিকিৎসাসহ বিভিন্ন ধরনের সহায়তার মানবিক আবেদন জানিয়ে পোস্ট করে থাকেন। এ জন্য জুড়ে দেন হৃদয়স্পর্শী কোনো ছবি। ফেসবুকে দুস্থ মানুষদের এই মানবিক আবেদনকেই হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে আসছে একটি চক্র।

চক্রটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে পাওয়া মানবিক পোস্ট ও ছবি নিয়ে নিজেদের ভুয়া ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ও বিভিন্ন গ্রুপে এডিট করে পোস্ট দিত। এগুলোর সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হতো নিজেদের বিকাশ, নগদ ও রকেট অ্যাকাউন্টের নম্বর। কোনো হৃদয়বান ব্যক্তি ওই পোস্ট দেখে সহযোগিতা করতে চাইলে ওই নম্বরগুলোতে টাকা পাঠাতে বলা হতো। এভাবে কমপক্ষে ১০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পর ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের হাতে গ্রেফতার হয়েছে চক্রটির চার সদস্য। তারা হলেন- মো. রেজাউল ইসলাম, মো. হাফিজুল ইসলাম, মো. মেহেদী হাসান ওরফে আকাশ ও মো. তানভীর আহম্মেদ। গত সোমবার ধারাবাহিক অভিযানে রংপুর ও রাজধানীর মিরপুর থেকে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ২৭টি ফেসবুক আইডি, ১০টি মোবাইল, বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট সংবলিত ১৫টি সিম কার্ড ও প্রতারণা করে হাতিয়ে নেওয়া ২ লাখ টাকা জব্দ করা হয়েছে। গতকাল ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তাদের বিরুদ্ধে ডিএমপির রমনা থানায় মামলা দায়ের করে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করে আদালতে পাঠানো হয়। পরে আদালত শুনানি শেষে রাজধানীর মিরপুর থেকে গ্রেফতার তানভীরকে তিন দিন ও রংপুর থেকে গ্রেফতার অন্য তিনজনের দুই দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।

সিটিটিসির সূত্র বলছে, চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে ফেসবুকে বিভিন্ন মানবিক পোস্ট ব্যবহার করে প্রতারণা করে আসছিল। এ জন্য তারা বিভিন্ন নামে ফেসবুকে ভুয়া ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ও গ্রুপ খোলে। পরে সেখানে অসহায়দের মানবিক পোস্টগুলো কপি-পেস্ট করে হুবহু পোস্ট করত। শুধু সাহায্য পাঠানোর নম্বরগুলোর জায়গায় নিজেদের বিকাশ, নগদ ও রকেট অ্যাকাউন্ট নম্বর দিত। এভাবে তারা প্রতি মাসে ২০-২৫ জন সাহায্যকারীকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে হাতিয়ে নিতো মোটা অঙ্কের টাকা। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সাহায্যকারী বুঝতেই পারেন না, তিনি প্রতারিত হচ্ছেন। সঠিক দুস্থ মানুষের কাছে তার সহযোগিতার টাকা পৌঁছাচ্ছে না।

তবে সাহায্যের আবেদনকারীরা অনেক সময় নিজের করা পোস্ট অন্য অ্যাকাউন্টে বা গ্রুপে দেখে মোবাইল নম্বরের মিল না দেখে বিষয়টি বুঝতে পারলেও বাড়তি ঝামেলার ভয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেন না। ফেসবুকে ‘মো. জুয়েল রানা’ ও ‘বৈদ্যুতিক প্রকৌশলী বিশ্বাস’ নামে ভুয়া আইডি খুলে। তারা ‘আমরা পুরান ঢাকাবাসী’, ‘নক্সে বন্দি হাসানুর রহমান হোসাইন সাইবার টিম’, ‘হেল্প মি (আমাকে সহায়তা করুন)’ নামে গ্রুপে সংযুক্ত থাকে। গ্রুপ তিনটির মধ্যে ‘আমরা পুরান ঢাকাবাসী’ গ্রুপে ১২ হাজার, ‘নক্সে বন্দি হাসানুর রহমান হোসাইন সাইবার টিমে’ ৭৫ হাজার ও ‘হেল্প মি (আমাকে সহায়তা করুন)’ গ্রুপে ১১ হাজার সদস্য রয়েছে। ফেসবুক থেকে মানবিক পোস্ট সংগ্রহ করে নিজেদের মোবাইল ব্যাংকিং জুড়ে দিয়ে এই গ্রুপগুলোতে পোস্ট করা হতো। এ চক্রে মারুফা আক্তার মীম ওরফে রেশমী নামে এক তরুণীও রয়েছে।

গ্রেফতারকৃত মেহেদী হাসান জানিয়েছেন, গ্রেফতার হাফিজুল ও পলাতক থাকা রেশমীর কাছ থেকে তিনি এ ধরনের প্রতারণা শিখেছেন। বিভিন্ন সাহায্যকারীর সঙ্গে প্রতারণা করে প্রাপ্ত টাকা উত্তোলন করা হতো গ্রেফতার রেজাউলের ব্যবহৃত মোবাইল নম্বর থেকে।

সিটিটিসির সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) ধ্রুব জ্যোতির্ময় গোপ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, একজন অসুস্থ শিশুর সাহায্য সংক্রান্ত একটি ফেসবুক পোস্ট বাংলাদেশ পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতির (পুনাক) সভানেত্রীর নজরে আসে। তিনি সেই শিশুটির বাবাকে চিকিৎসাপত্রসহ সাহায্য গ্রহণ করার জন্যে আহ্বান করেন। কিন্তু সাহায্যপ্রার্থী হাজির না হয়ে নানা টালবাহানা করেন। পররর্তীতে একই ছবি দিয়ে আরেকটি পোস্ট দেখলে পুনাক কর্তৃপক্ষের সন্দেহ হয়। এরপর বিষয়টি সিটিটিসিকে জানানো হলে চক্রটির চার সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়।

জানা গেছে, গ্রেফতার তানভীর দুই বছর ধরে প্রতারণা করে আসছে। সে প্রতারণার মাধ্যমে ৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। তার কাছ থেকেই প্রতারণার ২ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার পাস তানভীর কিডনি হাসপাতালের এক ডাক্তারের অ্যাসিস্ট্যান্ট ছিলেন। ফেসবুক থেকে অসহায় মানুষের সাহায্যের আবেদন কপি করতেন এবং এডিট করে তার ফেসবুক গ্রুপে (বৈদ্যুতিক প্রকৌশলী বিশ্বাস) পোস্ট দিতেন। গ্রেফতার অন্য তিনজন দেড় বছর ধরে প্রতারণা করে আসছেন। গ্রেফতার রেজাউল একজন ভ্যানচালক। তার নাম ব্যবহার করে তারই মেয়ে রেশমী সাহায্যের আবেদন পোস্ট দিতেন। রেজাউলের জামাই হাফিজ ভার্সিটি পড়ুয়া এবং তার স্বজন গ্রেফতার আকাশ এসএসসি পরীক্ষার্থী। তারা বিভিন্ন গ্রুপে দুস্থ অসহায় মানুষের পোস্ট দিয়ে প্রতারণা করে আসছিল। প্রতারক রেশমীকে ধরতে অভিযান চলছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

স্মার্টফোনে ইন্টারনেট চলে যাচ্ছে? জেনে নিন গতি বাড়ানোর কৌশল!

দখিনের সময় ডেস্ক: অনেকেই মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার করার সময় হঠাৎ করেই দেখেন, নেটওয়ার্ক চলে গেছে। আশেপাশের অন্যরা নির্বিঘ্নে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারলেও আপনার ফোনেই সমস্যা...

প্রতিদিন ৩-৪ লিটার পানি পান করলে কী হয়?

দখিনের সময় ডেস্ক: ওজন কমানো একটি চ্যালেঞ্জিং কাজ হতে পারে। কঠোর ডায়েট অনুসরণ করা, খাবারের প্রতি লোভ নিয়ন্ত্রণ করা, প্রতিদিন জিমে যাওয়া, কঠোর ওয়ার্কআউট করা...

ডিভোর্সের দুদিন পরই সুখবর দিলেন এ আর রহমান

দখিনের সময় ডেস্ক: নিন্দুকরা মনে করছে বাংলার মেয়ে গিটার বাদক মোহিনী দে-র জন্যই হয়ত সায়রাকে ছেড়েছেন ভারতের অস্কারজয়ী সংগীতশিল্পী ও সুরকার এ আর রহমানের। তবে...

যৌন পর্যটনের নতুন কেন্দ্র টোকিও, সেক্স ইন্ডাস্ট্রির জড়িত কিছু চক্র

দখিনের সময় ডেস্ক: যখন স্বর্ণযুগ ছিল, শহরটি অর্থনীতিতে ব্যাপক উন্নতি দেখেছে। এটি এখনো বিশ্বের অন্যতম বাসযোগ্য শহর হিসেবে নিজের অবস্থান ধরে রেখেছে। তবে আশঙ্কার বিষয়...

Recent Comments