দখিনের সময় ডেস্ক:
‘আমরা তো বেকার। কেউ টিউশনি করে, কেউ ধার করে, কেউবা পরিবারের সদস্যদের কাছে চেয়ে নিয়ে বাসভাড়া জোগাড় করি। এখন জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় বাসের ভাড়াও বেড়ে গেল। আমাদের কষ্ট আরও বাড়ল।’ কথাগুলো বলছিলেন রংপুর কারমাইকেল কলেজ থেকে পাস করা তরুণ মো. আসাদুজ্জামান। তিনি চাকরির পরীক্ষা দিতে রংপুর থেকে নিয়মিত ঢাকায় আসেন।
আসাদুজ্জামান জানান, রংপুর থেকে ঢাকার নন-এসি বাসের ভাড়া ৭০০ টাকা। তবে গতকাল রোববার সকাল থেকে এসব বাসে ভাড়া বেশি নেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া এসি বাসের ভাড়া ১০০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
আসাদুজ্জামানের মতো আরও অনেক চাকরিপ্রার্থী তরুণের কপালে ভাঁজ ফেলে দিয়েছে হঠাৎ বেড়ে যাওয়া বাসের ভাড়া। চাকরিপ্রার্থীরা বলছেন, এই ভাড়া বৃদ্ধির কারণে তাঁদের ঢাকা যাওয়া-আসার খরচ যেমন বাড়বে, তেমনি ভোগান্তিও বাড়বে অনেক গুণ। এ ছাড়া ঢাকায় থাকা ও খাওয়াতেও প্রভাব পড়বে এই মূল্যবৃদ্ধি।
পঞ্চগড়ে থাকেন মো. রিমন শেখ। ঢাকা কলেজ থেকে সমাজবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর করার পর ঢাকার আজিমপুরে মেসে থাকতেন। পরে করোনার কারণে তিনি ঢাকার মেস ছেড়ে বাড়িতে গিয়ে চাকরির প্রস্তুতি নিচ্ছেন। রিমন জানান, তাঁর বড় এক ভাই একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। তাঁর কাছ থেকে টাকা নিয়ে চলছেন তিনি। তিনি অনেক সরকারি-বেসরকারি চাকরিতে আবেদন করেছেন। প্রায় সব পরীক্ষা যেহেতু শুক্র ও শনিবার হয়, তাই তিনি বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন।
রিমন বলেন, ‘এবার তেলের দাম বেড়ে যাওয়ার পর বৃহস্পতিবারের ঢাকার টিকিট কাটতে গিয়ে শুনি, নন-এসি বাসের ৬০০ টাকার ভাড়া ৭৫০ টাকা হয়ে গেছে। এখন নিরুপায় হয়ে টিকিট কাটতে হলো। এভাবে মাসে কয়েক হাজার টাকা বেশি লাগবে। আমাদের মতো যারা বেকার, তাদের জন্য এই চাপ “মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা”।’
রিমন আরও বলেন, ‘ঢাকায় গেলে বিভিন্ন বন্ধু ও আত্মীয়ের বাসায় থেকে চাকরির পরীক্ষা দিই। এখন তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে মানুষের খরচ এমনিতে বেড়ে গেছে, এর ওপর মানুষের বাড়িতে গিয়ে উঠতে ইতস্তত লাগবে। আবার হোটেলে থেকে চাকরির পরীক্ষা দিলেও খরচে কুলাতে পারব না। এখন কী করব, ঠিক করতে পারছি না। সব মিলিয়ে আগেও হতাশ ছিলাম, এখন হতাশা আরও বাড়ল।’
গাবতলী বাস টার্মিনালে কথা হয় চাকরিপ্রার্থী আল আমিনের সঙ্গে। ঢাকা থেকে রাজশাহীতে চাকরির পরীক্ষা দিতে যাচ্ছেন এই তরুণ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ এ পথে ভাড়া ৬০০ টাকা ছিল। এখন যেতে হচ্ছে ৭২০ টাকায়। হঠাৎ করেই ভাড়া ১২০ টাকা বেড়ে গেল। এভাবে চললে বেকারেরা মাঠে মারা যাবেন।’
রাষ্ট্র সবার সঙ্গে ব্যবসা করবে, এটা ঠিক নয়। বেকারদের এমনিতেই টাকার সমস্যা। এর মধ্যে বাসের ভাড়া বেড়ে গেলে তাঁদের অনেক কষ্ট হবে মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী, বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব।
গাবতলীতে হানিফ এন্টারপ্রাইজের কাউন্টার থেকে জানানো হয়, ঢাকা থেকে আগে কুড়িগ্রামের ভাড়া ছিল ৮০০ টাকা, এখন ১ হাজার টাকা। নওগাঁর ভাড়া ছিল ৫৫০ টাকা, এখন ৭০০ টাকা। পঞ্চগড়ের ভাড়া ছিল ৯৫০ টাকা, এখন ১ হাজার ৪০ টাকা। ঠাকুরগাঁওয়ের ভাড়া ছিল ৯০০ টাকা, এখন ১ হাজার টাকা। খুলনার ভাড়া ছিল ৬৯০ টাকা, এখন ৮০০ টাকা। যশোরের ভাড়া ছিল ৫৫০ টাকা, এখন ৬৫০ টাকা। বরিশালের ভাড়া ছিল ৬০০ টাকা, এখন ৭০০ টাকা। বরগুনার ভাড়া ছিল ৮০০ টাকা, এখন ৮৫০ টাকা। কুয়াকাটার ভাড়া ছিল ৮৫০ টাকা, এখন ৯২০ টাকা। ঝালকাঠির ভাড়া ছিল ৬৫০ টাকা, এখন ৭৫০ টাকা।
চাকরিপ্রার্থীরা গ্রুপ করে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এদের মতো অনেকেই চাকরির পরীক্ষা দিতে ঢাকায় আসেন। তবে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় পরিবহনের ভাড়া বেড়ে যাওয়ায় খরচ বাড়বে তাদেরও
বাসের ভাড়া বেড়ে যাওয়ায় অনেক তরুণ চাকরিতে আবেদন কমিয়ে দিতে পারেন বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা তরুণ আবদুল্লাহ আল মামুন। তিনি বলেন, ঢাকার বাইরে থেকে হাজারো চাকরিপ্রার্থী পরীক্ষা দিতে আসেন। তাঁরা অনেকেই সব ধরনের চাকরির আবেদন করেন। এখন বাসের ভাড়া বেড়ে যাওয়ায় অনেকে চাকরিতে আবেদনের সংখ্যা কমিয়ে দেবেন। এভাবে বেকারদের কষ্ট বেড়ে যাবে। বেকারত্বও বেড়ে যাবে।