আলম রায়হান:
আবুল খায়ের আবদুল্লাহ সেরনিয়াবাত ওরফে খোকন সেরনিয়াবাত বরিশালে বসবাস শুরু করেছেন। তিনি বরিশাল নগরীর কালু শাহ সড়ক এলাকায় ‘জজ সাহেবের বাড়ি’ হিসেবে পরিচিত একটি আবাসিক ভবনের ফ্লাট ভাড়া নিয়েছেন। সূত্র বলছে, বরিশাল জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হবেন খোকন সেরনিয়াবাত। উল্লেখ্য, ঘোষিত তফসিল অনুসারে জেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১৭ অক্টোবর।
সূত্র জানিয়েছে বরিশাল জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হবার ব্যাপারে গ্রীন সিগনাল পেয়ে বরিশালে এসেছেন খোকন সেরনিয়াবাত। গত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনেও তার প্রার্থী হবার বিষয়টি আলোচনায় এসেছিলো। কিন্তু এক্ষেত্রে তাঁকে প্রার্থী না করে সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহকে প্রার্থী করেছেন আওয়ামী লীগের হাই কমান্ড। সূত্র মতে, বরিশালের মেয়র পদ যেকোন বিবেচনায় অধিক জটিল, কঠিন ও রাজনীতি সম্পৃক্ত। এ হিসেবে খোকন সেরনিয়াবাতের জন্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের পদ অধিকতর উপযুক্ত বলে মনে করা হচ্ছে বলে সূত্র জানিয়েছে।
জেলা পরিষদের গত নির্বাচনে প্রথমে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান খান আলতাফ হোসেন ভুলু। কিন্তু পরে এই সিদ্ধান্ত পাল্টে যায়। এরপরও তিনি প্রার্থী হন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেব প্রার্থী হন জাতীয় পার্টি থেকে আসা মাইদুল ইসলাম। তিনিও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। কিন্তু এ দুইজনের কাউকেই দলীয় প্রতীক নৌকা দেয়নি আওয়ামী লীগ। দুজনের জন্যই নির্বাচন উম্মুক্ত ছিলো। এ নির্বাচনে মাইদুল ইসলাম ‘বিজয়ী’ হন। অবশ্য এই নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি ও কারসাজীর অভিযোগ করেছেন খান আলতাফ হোসেন ভুলু। এবারও তিনি দলীয় মনোনয়নের জন্য লবিং করছেন বলে জানাগেছে। তবে সূত্র বলছে, যে যতই লবিং করুক না কেন, এবারে জেলা পরিষদ নির্বাচনে বরিশাল আওয়ামী লীগের প্রার্থী হচ্ছেন আবুল খায়ের আবদুল্লাহ সেরনিয়াবাত ওরফে খোকন সেরনিয়াবাত।
উল্লেখ্য, খোকন সেরনিয়াবাত গণমানুষের নেতা এবং ১৫ আগস্টে শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাতের মেজো ছেলে এবং দক্ষিণ বঙ্গের রাজনীতির অভিভাবক আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর ভাই। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নৃশংস ঘাতকের হত্যা মিশনে গুলীবিদ্ধ হয়েও ভাগ্যক্রমে প্রানে বেঁচেগেছেন খোকন সেরনিয়াবাত। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তিনি বড় ভাই আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর মেয়ে কান্তা এবং ছেলে সাদিককে নিয়ে রিক্সায় করে পুরান ঢাকায় এক আত্মীয়ের বাসায় যান। সেখানে ভাইর দুই সন্তানকে রেখে তিনি বোনের শ্বশুড় বাড়ি পক্ষের এক আত্মীয়ের প্রিন্টিং প্রেসে আশ্রয় গ্রহণ করেন। এখানে গোপনে ডাক্তার ডেকে তার শরীর থেকে একটি গুলী বের করা হয়। কিন্তু অপরটি বের করা সম্ভব হয়নি।
এদিকে দেশব্যাপী সেনাবাহিনী সেরনিয়াবাত পরিবারের বেঁচে যাওয়া সদস্যদের খুঁজতে বিভিন্ন এলাকায় তল্লাশি শুরু করে। এ অবস্থায় খোকন সেরনিয়াবাত গোপনে চট্রগ্রাম চলে যান। সেখান থেকে আবার ফেনি আসেন। সেখান থেকে সবুজ নামে এক যুবকের সহায়তায় তিনি কলাগাছ অবলম্বন করে সাঁতার কেটে ফেনী নদী পার হয়ে ফেনীর ছাগলনাইয়া এসে এক বাড়িতে আশ্রয় গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে আবার তিনি চট্টগ্রামে এসে নিউমার্কেট এর পাশে সুখতারা হোটেলে অবস্থান করেন। পরে তার শিক্ষকের পরামর্শ ও সহযোগিতায় ফেনীর ছাগলনাইয়া ফিরে এসে তিনি ভারত যান। ততদিনে অক্টোবর মাস চলে আসে। গুলী থেকে যাওয়া স্থানে পচন ধরেগেছে। এ অবস্থায় ১২ অথবা ১৩ অক্টেবর তিনি ভারতে প্রবেশ করেন। একদিন পর বিএসএফ তাকে আগরতলা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে তার শরীর থেকে দ্বিতীয় গুলিটি বের করা হয়। যে অপারেশ করা ছিলো খুবই ঝুকিপূর্ণ। হাসপাতালে ২২-২৩ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর কার্গো বিমানে করে কলকাতা আসেন। কোলকাতায় তিনি আশ্রয় নেন বরিশালের চিত্তরঞ্জন সুতারের বাড়িতে।
ভারতে চার বছর রাজনৈতিক আশ্রয়ে থাবার পর দেশে ফেরেন খোকন সেরনিয়াবাত। প্রথমে তিনি ঢাকায় আসেন। কিন্তু ছিলেন আতংকে। এক পর্যায়ে বরিশালের কালিবাড়ি রোডের পৈত্রিক বাড়িতে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন। কিন্তু তা সম্ভব হয়নি। কারণ জিয়াউর রহমান বাড়িটি সিজ করে নিয়েছিলেন। ফলে অই বাড়িতে তাদের প্রবেশাধিকার ছিলো না। এ অবস্থায় এবাড়ি-ওবাড়ি করে নিদারুণ কষ্টে সময় পার করতে হয়েছে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের মতো খোকন সেরনিয়াবাতকেও। তিনি বরাবরই রাজনীতি সম্পৃক্ত মানুষ। অনেকেই তার মধ্যে পিতা আবদুর রব সেরসিনয়াবাতের নম্রতার প্রতিচ্ছবি দেখতে পান।