Home লাইফস্টাইল কন্যাশিশুর কম উচ্চতা ও টার্নার সিনড্রোম

কন্যাশিশুর কম উচ্চতা ও টার্নার সিনড্রোম

দখিনের সময় ডেস্ক:

শিশুর খর্বাকৃতি হওয়ার নানা কারণ রয়েছে। আবার অনেক সময় কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। তবে কন্যাশিশু খাটো হলে বা আশানুরূপ না বাড়লে অবশ্যই টার্নার সিনড্রোমের কথা ভাবতে হবে।

রোগটি যদিও জন্মগত, তবে এর বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বংশানুক্রমিক কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। এটি ক্রোমোজমের সমস্যা, যাতে শিশু ভ্রূণ থেকে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হওয়ার সময় একটা সেক্স ক্রোমোজম হারিয়ে যায় বা পরিবর্তিত হয়। তাই টার্নার সিনড্রোমের শিশুদের বেশির ভাগেরই ৪৬টির (স্বাভাবিক) পরিবর্তে ৪৫টি ক্রোমোজম থাকে। যদিও শতকরা ৯৯ ভাগ টার্নার সিনড্রোমের ভ্রূণ গর্ভে ২৮ সপ্তাহ হওয়ার আগেই মারা যায় ও গর্ভপাত ঘটে। এরপরও গড়ে প্রতি ২ হাজার ৫০০ জীবিত মেয়েশিশুর মধ্যে একজন এ সমস্যায় আক্রান্ত হয়।

লক্ষণ
বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বাহ্যিক লক্ষণ দেখে রোগটি নির্ণয় করা যায়। যেমন জন্ম নেওয়া মেয়েশিশুর হাত-পা ফোলা, বিশেষ মুখাকৃতিসহ ছোট থুতনি, ঢেউয়ের মতো ও ক্ষুদ্রাকৃতির ঘাড়, পেছন দিকের চুলের রেখা নিচে নামানো, ঢালের মতো বক্ষ, স্তন যুগলের বেশি দূরত্ব, হাতের কোণ বেড়ে যাওয়া, চোখের সমস্যা ইত্যাদি। শতকরা ৯০ ভাগ ক্ষেত্রে এদের বুদ্ধিমত্তা স্বাভাবিক থাকে। তবে ৭০ ভাগেরই লেখাপড়ায় নানা ধরনের অসুবিধা হয়।

বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পা ও মেরুদণ্ড বেঁকে যাওয়া, ঘন ঘন কান পাকা ও উচ্চতায় না বাড়লে টার্নার সিনড্রোমের অন্য উপসর্গ অনুসন্ধান করতে হবে। অন্যদিকে বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পা ও মেরুদণ্ড বেঁকে যাওয়া, ঘন ঘন কান পাকা ও উচ্চতায় না বাড়লে টার্নার সিনড্রোমের অন্য উপসর্গ অনুসন্ধান করতে হবে। সন্দেহ হলে পরীক্ষা করে রোগ নির্ণয় করতে হবে। ত্রুটিযুক্ত ডিম্বাশয়ের কারণে সময়মতো বয়ঃসন্ধি হয় না। ফলে অন্য শিশুদের তুলনায় তারা লক্ষণীয়ভাবে কম উচ্চতার হয়। ৮০ থেকে ৯০ ভাগেরই সময়মতো মাসিক শুরু হয় না।

এ ছাড়া বিশেষ ক্ষেত্রে জন্মের আগেই পরীক্ষার মাধ্যমে গর্ভস্থ শিশুর এ সমস্যা চিহ্নিত করা যেতে পারে। যেমন সন্তান মায়ের পেটে আসার ১০ থেকে ১৮ সপ্তাহের মধ্যে আলট্রাসনোগ্রাম করা, মায়ের রক্ত নিয়ে বা মায়ের পেটের পানি নিয়ে পরীক্ষা করা (এমনিওসেটেসিস), ভ্রূণের টিস্যু নিয়ে পরীক্ষা (সিভিএস) করা।

টার্নার সিনড্রোম সন্দেহ হলে কিডনির আলট্রাসনোগ্রাম, ইকোকার্ডিওগ্রাম, গোনাডোট্রপিন ও সেক্স হরমোনের সঙ্গে জরায়ু ও ডিম্বাশয়ের আলট্রাসনোগ্রাম করা প্রয়োজন। রোগ নিশ্চিত হতে ক্রোমোজমের পরীক্ষা ক্যারিয়োটাইপিং করা আবশ্যক।

চিকিৎসা
টার্নার সিনড্রোমে শিশুর উপসর্গভিত্তিক চিকিৎসার পাশাপাশি উচ্চতা বৃদ্ধি ও বয়ঃসন্ধিজনিত সমস্যার চিকিৎসা করা হয়। সাত বছর বয়স থেকে গ্রোথ হরমোন দিয়ে উচ্চতা বৃদ্ধি এবং পরবর্তী সময়ে ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন হরমোনের মাধ্যমে বয়ঃসন্ধিজনিত সমস্যার চিকিৎসা করা হয়। এ ছাড়া উচ্চ রক্তচাপ, কান, হাড়ের সমস্যা, কোলেস্টেরল ও থাইরয়েডের চিকিৎসা দরকার পড়ে।

লেখা:ডা. রবি বিশ্বাস, শিশু হরমোন রোগবিশেষজ্ঞ, সহযোগী অধ্যাপক, ঢাকা শিশু হাসপাতাল

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

শিবিরের ঢাবি শাখার পূর্ণাঙ্গ কমিটির ঘোষণা শিগগিরই: শিবির সভাপতি

দখিনের সময় ডেস্ক ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলাম বলেছেন, দু-একদিনের মধ্যে সেক্রেটারিসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শাখার পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হবে। গতকাল শনিবার রাতে গণমাধ্যমকে...

সাবেক অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মেহেদী হাসান গ্রেপ্তার

দখিনের সময় ডেস্ক সাবেক অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার মেহেদী হাসান চৌধুরীকে রাজধানীর আদাবর থানার একটি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। আজ রবিবার রাজধানীর...

শিশুর বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার

দখিনের সময় ডেস্ক: কক্সবাজারের টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপে বাড়ির সামনে থেকে তাহমিনা আক্তারের (৭) নামে এক শিশুর বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) রাত...

স্ত্রীকে কুপিয়ে হত্যা, থানায় এসে স্বামীর আত্মসমর্পণ

দখিনের সময় ডেস্ক: রাজধানীর পল্লবীতে শামসুন্নাহার (৫২) নামের এক নারীকে নিজ হাতে বটি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছেন তার স্বামী। ঘাতক স্বামীর নাম মোখলেছুর রহমান (৫২)।...

Recent Comments