Home শীর্ষ খবর কিছুই হবে না ১০ ডিসেম্বর: বিএনপির লক্ষ্য সংসদর নির্বাচন, কৌশলী...

কিছুই হবে না ১০ ডিসেম্বর: বিএনপির লক্ষ্য সংসদর নির্বাচন, কৌশলী আওয়ামী লীগ

আলম রায়হান:
কি হবে ১০ ডিসেম্বর? এটি এখন টক অফ দ্যা কান্ট্রি। এবং এ নিয়ে দানাবেধেছে নানান আশংকা। যতই দিন যাচ্ছে ততই বাড়ছে জনউদ্বেগ। প্রায় সবারই আতংকের প্রশ্ন, কি হবে ১০ ডিসেম্বর। উল্লেখ্য, এই দিন ঢাকায় সমাবেশ ডেকেছে বিএনপি। এর আগে বিভাগীয় শহরগুলোতে সফল সমাবেশ করেছে  সাবেক ক্ষমতাসীন এই দলটি। ঢাকার আগে ৩ ডিসেম্বর বিএনপির সমাবেশ হবে রাজশাহীতে।
বিএনপির পক্ষ থেকে ঘোষণা একটাই, সরকারের পতন। ইতোমধ্যে দলটির শীর্ষস্থানীয় এক নেতা আমান উল্লাহ আমান ঘোষণা দিয়েছেন, আগামী ১০ ডিসেম্বর থেকে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের কথায় দেশ চলবে।  এই ঘোষণার অটল থেকেই একের পর এক সমাবেশ করেছে দেশের বিভাগীয় শহরগুলোতে। তবে এরই মধ্যে কথা ঘুরিয়েছে বিএনপি। বিষয়টি কেউ বলছেন বিএনপির বোধোদয়, কেউ বলছেন কৌশল
এদিকে বিএনপির সমাবেশে সরকার বা ক্ষমতাসীন দল এখন পর্যন্ত দৃশ্যত জোরালো বাঁধা দেয়নি। তবে মামলা হয়রানী আছে। সঙ্গে কথিত পরিবহন ধর্মঘটের নামে হাস্যকর ঘটনা ঘটেছে। যদিও এর কোন নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি সমাবেশে। উল্টো বিএনপির উপকার হয়েছে। নেতা-কর্মীরা অধিকতর চাঙ্গা হয়েছেন। পাশাশি জনসহানুভুতি বেড়েছে বিএনপির পক্ষে। এরপরও আতংক বিরাজ করছে ১০ ডিসেম্বরকে কেন্দ্র করে। প্রশ্ন হচ্ছে, সেদিন সমাবেশের নামে কী ঘটাবে বিএনপি? এবং মোকাবিলার নামে কতদূর কি করবেন ক্ষমতাসীনরা? এই প্রধান দুটি প্রশ্নে জবাবের বিষয়ে ধারণা পেতে কয়েকটি প্রসঙ্গ বিবেচনায় নেয়া প্রয়োজন।
এর মধ্যে প্রধান হচ্ছে, দেশের দৃশ্যমান প্রধান দুই রাজনৈতিক শক্তি আসলে কী চায়? তারা কী দেশের ক্ষমতা বলয়ে থাকতে চায়? নাকি পিঠা বানরের হাতে চলেগেলে অধিকতর তৃপ্তি বোধ করবে? নাকি জেদের ভাত কুকুরকে খাওয়াতে চান আমাদের দেশের রাজনীতিকরা? অনেকেই মনে করেন, এ রকম আত্মঘাতী পরিস্থিতি তারা ঘটাবেন না। বরং বিএনপির লক্ষ হচ্ছে আগামী সংসদ নির্বাচন। আর পরিস্থিতি মোকাবিলায় অতীতের যেকোন সরকারের চেয়ে অধিকতর কৌশলী বর্তমান সরকার। এর পরও আশংকা থেকেই যায়। কারণ রাজনীতিতে সব সময়ই তৃতীয় পক্ষের খেলা থাকে।
সবচেয়ে বড় কথা হলো কঠোর আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতা দখলের রাজনৈতিক বাস্তবতা এখন আশা করা বাস্তবসম্মত নয়। তেমনি রাজপথে সহিংস কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি মানুষ প্রত্যাশা করে না। সর্বোপরী সবারই জীবনের মায়া আছে। এসব বিবেচনায় নির্বাচনেই হলো ক্ষমতা পরিবর্তনের একমাত্র পথ। যা কিছু খেলা তা নির্বাচনেই হতে হবে। এর বাইরে অন্য কিছু নয়।
চলমান তৎপরতায় বিএনপি একা চলার আওয়াজ দিয়েছে। বলা হচ্ছে, জোট নয়, একাই চলছে বিএনপি। বিশ্লেষকরা মনে করেন, জোট প্রশ্নে বিএনপির এই নাটকের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে রাজনীতির ময়দানে মাসেল পাওয়ার এবং ভোট ব্যাংকের ক্ষেত্রে প্রধান ভরসা জামায়াতের সঙ্গে বিচ্ছেদের ধারণা দেয়া। কিন্তু বাস্তবতা মোটেই এমনটা নয়। এবং বাস্তবে এটি সম্ভবও নয়। কেননা বাংলাদেশের রাজনীতিতে ৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পরাজিত শক্তি এবং ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বিজয়ী শক্তি এখনো সক্রিয় এবং ঐক্যবদ্ধ।
অনেকেই বিএনপি-জামায়তকে বলেন, একই বৃন্তে দুটি ফুল। এটি আসলে ভুল। রাজনীতিতে ৭১ পরজিত শক্তির বিভিন্ন ফ্রন্টের প্রধান দুটি শক্তি হচ্ছে বিএনপি এবং জামায়াত। রাজনীতিতে বিএনপি ও জামায়াত হচ্ছে এক দেহ-এক প্রাণ। আর দানব হোক, অথবা হোক মানব- দেহ থেকে দুই হাত বিচ্ছিন্ন করলে তার আর কোন কার্যকারিতা থাকে না। ফলে প্রধান মিত্র জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করার কথা বিএনপি বললেও তা কতটা সত্য তা নিয়ে সন্দেহের যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে। ফলে ধারণা করা যেতে পারে, সরকার-বিরোধী রাজনৈতিক কর্মসূচিতে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জামায়াত অতীতের মতোই বিএনপি সঙ্গেই আছে এবং থাকবে। বিএপি যদি থাকে রাজপথে তা হলে জামায়াত থাকবে গলিতে। এভাবেই দখল নিতে চায় গলি থেকে রাজপথ। মানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন। কিন্তু বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিএনপির পক্ষে আওয়ামী লীগ সরকারের পটন ঘটানো কতোটা সম্ভব?
সরকারের পতন ঘটাবে বিএনপি, আর টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ বসে থাকবে? এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কথা বিবেচনায় নেয়া যায়। তিনি বলেছেন,  ১০ ডিসেম্বর কিছুই হবে না। ওই দিন আমরাও মাঠে থাকব। তাদের (বিএনপি) কোনো বাধা দেব না। কিন্তু তাঁরা যদি আগুন নিয়ে খেলতে চান, লাঠি নিয়ে খেলতে চান, তাহলে আমরা তা হতে দেব না। বিএনপির সঙ্গে খেলা হবে, খেলা হবে নির্বাচনে।
বিএনপিকে মোকাবিলায় আওয়ামী লীগেরও নিশ্চয়ই একাধিক পরিকল্পনা রয়েছে। তাছাড়া আল্টিমেটাম দিয়ে আওয়ামী লীগের মতো শক্তিশালী দলের সরকারের পতন ঘটানো যায় না। উল্লেখ্য,, ২০০৪ সালের ৩০ এপ্রিলের কথা। বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে এটি একটি বড় রকমের আতঙ্কের দিন ছিল।  দিনটিকে সরকার পতনের দিন হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেছিলেন আওয়ামী লীগের তৎকালীণ সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিল। এপ্রিলের শুরুর দিন এক সংবাদ সম্মেলনে আবদুল জলিল ঘোষণা দেন, ৩০ এপ্রিলের মধ্যে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের পতন ঘটবে। আবদুল জলিল বলেছিলেন, এমন ট্রাম্পকার্ড তার কাছে আছে, যার প্রয়োগে সরকারের পতন হবেই।  কিন্তু আওয়ামী লীগের ঘোষণা অনুসারে ৩০ এপ্রিল বিএনপি সরকারের পতন হয়নি। তা হলে বিএনপির ঘোষণা অনুসারে ১০ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হবার বোধগম্য কোন কারণ আছে? উত্তর নিশ্চিতভাবে নেতিবাচক।
২০০৪ সালের ৩০ এপ্রিলের দুই দিন আগে ২৮ এপ্রিল থেকে দুই দিনের হরতাল পালন করে আওয়ামী লীগ। কিন্তু ৩০ এপ্রিল বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার বহাল থাকে। সেদিন ঢাকায় বা দেশের কোথাও বড় কোনো রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা যায়নি। জীবনযাত্রা ছিল অনেকটাই স্বাভাবিক। বিকালে বিএনপির পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে আওয়ামী লীগকে জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে বলা হয়েছিলো! এবারও বিএনপিকে হয়তো আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও ক্ষমা চাইতে বলা হবে বড়জোর।  হয়তো বিএনপি নেতা আমানের আল্টিমেটামও আওয়ামী লীগ নেতা জলিলের আল্টিমেটামে মতো পরিনতি লাভ করবে।
আবার আল্টিমেটাম দেবার জন্য যে সময়টি বিএনপি বেছে নিয়েছে তা নিয়েও নানান প্রশ্ন রয়েছে। সবাই জানে, ডিসেম্বর হচ্ছে বাংলাদেশের গৌরবের ইতিহাসের সঙ্গে ওতপ্রতোভাবে জড়িত একটি মাস। এমাসে হানাদার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে চুড়ান্ত বিজয় অর্জন করেছে বাংলাদেশে। ফলে আর যাই হোক, এই মাসে আওয়ামী লীগকে পরাজিত করার চিন্তা সোনার পাথরবাটির মতোই অসম্ভব বিষয় বলে বিচনা করা হয়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, পরিস্থিতি ঘোলাটে করার শক্তি বিএনপির আছে। আছে জনপ্রিয়তাও। কিন্তু আওয়ামী লীগকে টপকানোর অবস্থায় বিএনপি এখনো যেতে পারেনি। আর আওয়ামী ক্ষতায়, বিএনপি ক্ষমতারে বাইরে। সংসদেও বিএনপি আছে মাছির চোখের মতো। এ অবস্থায় রাজপথে শক্তি প্রয়োগ করতে চাইলে বিএনপির জন্য দুটি বিপদের আশংকা প্রবল হিসেবে বিচেনা করা হয়। এক. রাজনীতির গিলোটিনের দিকে নিজকে এগিয়ে দেয়। দুই. ক্ষমতার পিঠা বানদের হাতের দিকে এগিয়ে নেয়া। নিশ্চয়ই এর কোনটিই বিএনপির জন্য নিরাপদ নয়। লাভজনক তো নয়ই।
বিএনপির জন্য লাভজনক হচ্ছে, জনসমাবেশের মাধ্যমে সাম্প্রতি দৃশ্যমান জনসমর্থনকে আগামী নির্বাচন পর্যন্ত ধরে রাখা। যদিও তা খুব সহজসাধ্য নয়। কারণ, শুরুটা অনেক আগে হয়েগেছে। এরপরও অনেকেই বলেন, নানান ইকোয়েশনে আগামী নির্বাচনে বিএনপির ভাগ্যের সিকা ছিড়লেও ছিড়তে পারে। নিদেন পক্ষে ক্ষমতা বলয়ে দাপটের অবস্থান লাভ অবধারিত। আর্থাৎ আগামী নির্বাচনে ক্ষতায় যাওয়া সম্ভব না হলেও শক্তিশালী বিরোধী দল হিসেবে সংসদে প্রবেশ করার স্বর্নদ্বার বিএনপির জন্য খুলে যেতে পারে।
পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন, বিএনপি আসলে আগামী সংসদ নির্বাচনকে বিচনায় রেখেই অগ্রসর হচ্ছে। আর বিএনপিসহ অন্যান্য শক্তির দৃশ্যমান ও অদৃশ্য খেলাধুলাকে মোকাবিলায় ক্ষতাসীনরা বেশ কৌশলী খেলা খেলছে। আর সরকারেও লক্ষ্য হচ্ছে রাজনৈতি পরিস্থিতি আগামী নির্বাচন পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া। ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ও মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের তো বলে যাচ্ছেন, ‘বিএনপির সঙ্গে খেলা হবে, খেলা হবে নির্বাচনে!’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

ডিভোর্সের দুদিন পরই সুখবর দিলেন এ আর রহমান

দখিনের সময় ডেস্ক: নিন্দুকরা মনে করছে বাংলার মেয়ে গিটার বাদক মোহিনী দে-র জন্যই হয়ত সায়রাকে ছেড়েছেন ভারতের অস্কারজয়ী সংগীতশিল্পী ও সুরকার এ আর রহমানের। তবে...

যৌন পর্যটনের নতুন কেন্দ্র টোকিও, সেক্স ইন্ডাস্ট্রির জড়িত কিছু চক্র

দখিনের সময় ডেস্ক: যখন স্বর্ণযুগ ছিল, শহরটি অর্থনীতিতে ব্যাপক উন্নতি দেখেছে। এটি এখনো বিশ্বের অন্যতম বাসযোগ্য শহর হিসেবে নিজের অবস্থান ধরে রেখেছে। তবে আশঙ্কার বিষয়...

শীত নিয়ে আবহাওয়া অফিসের বার্তা

দখিনের সময় ডেস্ক: দেশের কোথাও কোথাও আকাশ আংশিক মেঘলাসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। আবার কোথাও হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে বলে জানিয়েছে...

শেখ হাসিনা গুজব ছড়িয়ে দুর্বৃত্তদের উস্কানি দিচ্ছে: রিজভী

দখিনের সময় ডেস্ক: বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, বিদেশে বসে শেখ হাসিনা গুজব ছড়িয়ে দুর্বৃত্তদের উস্কানি দিচ্ছেন। ক্ষমতা নিশ্চিত করার জন্যই গত...

Recent Comments