দৈনিক দখিনের সময় :
শিশুরা কিছুটা দুরন্ত হবেই। হাসিখুশি থাকা, দুষ্টুমি করা সুস্থ শিশুর সাধারণ বৈশিষ্ট্য। তবে কোনো শিশু অতি দুরন্ত বা ডানপিটে হলে এডিএইচডি (অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপার অ্যাকটিভিটি ডিজঅর্ডার) নামক রোগে ভুগছে কি না, খতিয়ে দেখতে হবে। সাধারণত ১২ বছর বয়সের আগে যদি কোনো শিশু কমপক্ষে ৬ মাস ধরে অমনোযোগী থাকে, দুরন্তপনা ও অতিরিক্ত চঞ্চলতা দেখায়; তবে সে এডিএইচডি রোগে ভুগছে বলে সন্দেহ করা হয়।
মস্তিষ্কের ফ্রনটেল অংশে ডোপামিন নামের রাসায়নিক পদার্থের অস্বাভাবিক মাত্রার কারণে রোগটি হয় বলে ধারণা করা হয়। এ রোগের সঙ্গে ঘুমের ব্যাঘাত হওয়া, মৃগীরোগ ও পড়াশোনার নানা সমস্যা যুক্ত থাকতে পারে।
এ ধরনের শিশু ঘরে-বাইরে সব সময় অতিরিক্ত চঞ্চল থাকে। প্রায়ই দেয়ালের ওপর থেকে লাফ দেওয়া, ঘরের জিনিসপত্র ভাঙচুর করা, গাড়ি চলাচলের রাস্তায় হঠাৎ দৌড় দেওয়ার মতো বিপজ্জনক কাজ করে থাকে।
বিদ্যালয়ে এ ধরনের শিশুর আচরণের কারণে শিক্ষকদের কাছ থেকে নানা অভিযোগ আসে। অনেক সময় অন্য অভিভাবকেরাও অভিযোগ করে থাকেন।
অতি দুরন্ত শিশুরা সাধারণত কম সময় বিশ্রাম নেয়।
চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা
অতি দুরন্ত শিশুর শ্রবণশক্তি, দৃষ্টিশক্তি ও পড়াশোনার সমস্যা যাচাই করে দেখতে হয়। এ ছাড়া থাইরয়েড হরমোন, ফিনাইলকিটোনুরিয়া, অতিরিক্ত সিসাজনিত পয়জনিং বা বিষক্রিয়া—এসব কারণ প্রয়োজনে ল্যাব পরীক্ষার মাধ্যমে খতিয়ে দেখা হয়।
এডিএইচডি শিশুর চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা মা-বাবা, অভিভাবক, শিক্ষক, মনোবিদ, শিশুবিশেষজ্ঞ ও সমাজকর্মী মিলে যৌথ অংশীদারত্বের মাধ্যমে করা হয়।
এসব শিশুর চিকিৎসায় ‘বিহেইভিয়ারাল থেরাপি’ ও ‘ড্রাগস থেরাপি’, দুটির সমন্বয়ে কার্যকর ফল মেলে। এসব শিশুকে নিয়ে বাবা-মায়েরা বিব্রত ও অস্থির থাকেন। কিন্তু এর সুচিকিৎসা আছে এবং ধীরে ধীরে পরিবর্তন আসে, শিশু শান্ত হয়ে আসে। তাই হতাশ না হয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
অধ্যাপক ডা. প্রণব কুমার চৌধুরী, সাবেক বিভাগীয় প্রধান, শিশুস্বাস্থ্য বিভাগ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।