দখিনের সময় ডেস্ক:
রাজশাহী সিটি নির্বাচনে নিজ দলের এমপিদের বিরোধিতার কবলে পড়েছেন সিটিং মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। খোদ লিটনই এমন অভিযোগ তুলেছেন। এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র। এবারও সিটি নির্বাচনে মেয়রপ্রার্থী হিসেবে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন তিনি।
হাইকমান্ড বরাবরই বলে আসছে, দল যাকে মনোনয়ন দেবে, দলের নেতাকর্মী সবাই একাট্টা হয়ে তার পক্ষে কাজ করতে হবে। কিন্তু বাস্তবে তা হচ্ছে না। গত বছরের অক্টোবরে রাজশাহীতে ছাত্রমৈত্রীর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে ফজলে হোসেন বাদশা এমপি মেয়র লিটনকে ইঙ্গিত করে বলেছিলেন, আমি আঙুল উঁচিয়ে বলে দিতে পারি কারা, কীভাবে জামায়াত-বিএনপির সঙ্গে আঁতাত করে রাজনীতি করেন। এখানে মনে হচ্ছে, এক নেতা রাজতন্ত্র কায়েম করেছেন। পরবর্তীকালে একটি সাক্ষাৎকারেও বাদশা হুমকি দিয়েছিলেন, লিটনের বিরুদ্ধে ১৪ দলের কেন্দ্রীয় সমন্বয় সভায় অভিযোগ করার। এর পর নানা অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যেও তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের নানা সিদ্ধান্তের কঠোর সমালোচনা করেছেন। বাদশার এমন আওয়ামী লীগবিরোধী ভূমিকার কারণে ক্ষমতাসীন এ দলের স্থানীয় অনেক নেতাই তাকে এড়িয়ে চলছিলেন। আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মীই বলছেন, বাদশা লিটনবিরোধী তৎপরতায় প্রকাশ্যেই জড়িত। জেলা আওয়ামী লীগের
সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াদুদ দারা বলেন, লিটন সবাইকে নিজের বানাতে চান। দলীয় প্রোগ্রামে দলের অধস্তন নেতা-এমপিদের নিয়ে কুৎসা ও বাজে মন্তব্য করছেন। ২০০৮ ও ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত এমপি দারা আরও বলেন, সিটির নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে দলের স্থানীয় নেতা-এমপিদের বিরুদ্ধে লিটন যা বলছেন, তা ভাষায় প্রকাশযোগ্য নয়।
মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বলছেন, লিটনকে ঘায়েল করতে একাট্টা আওয়ামী লীগের বেশির ভাগ এমপি। রাজশাহীর ৬টি সংসদীয় আসনের মধ্যে একজন ছাড়া সবাই লিটনবিরোধী ভূমিকায় অবতীর্ণ। বিভিন্ন সময়ে তারা লিটনকে একঘরে করার চেষ্টা করেছেন। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কাছে লিটনের নামে কুৎসা রটনায় ব্যস্ত তারা। বঙ্গবন্ধু পরিবারের ঘনিষ্ঠ হওয়ার কারণেই লিটনের বিরুদ্ধে বারবার ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলে মনে করছেন নেতাকর্মীরা। বঙ্গবন্ধুকন্যা ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ‘গুডবুক’ থেকে শহীদের সন্তান লিটনের নাম কাটাতে নানামুখী অপতৎপরতা চলছে। তারা বলছেন, লিটনকে নিয়ে যারা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত, তাদের দু-একজন ছাড়া অন্যরা কেউ আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান নন। তাদের কেউ কেউ আবার ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের সময় বিএনপির মনোনয়ন পেতে ধরনা দিয়ে ব্যর্থও হয়েছিলেন। কেউ কেউ আবার এমপি হওয়ার আগ পর্যন্ত দলের সঙ্গে যুক্তই ছিলেন না। ফলে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখা হাসিনা জাতীয় চার নেতার অন্যতম এএইচএম কামারুজ্জামানের সন্তান হিসেবে লিটনের ওপর যেভাবে ভরসা রেখেছেন তা অন্যরা মানতে পারছেন না।
এমপিদের ভূমিকা নিয়ে মুখ খুলেছেন লিটন নিজেও। গত ২৪ এপ্রিল ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমান নেতাদের উদ্যোগে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে খায়রুজ্জামান লিটন অভিযোগ করেন নিজ দলের এমপিরাই তার পেছনে লেগেছেন। লিটন তার বক্তব্যে বলেন, বিভিন্ন সময় আমাকে নিয়ে ষড়যন্ত্র হয়েছে এবং তা অব্যাহত আছে। কেন আমাকে বারবার আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হতে হয়? এখানে ছয়টি সংসদীয় আসন আছে। তাদের মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আল্লাহর পরে নেত্রীকে বলার ব্যাপারে কারও যদি বেশি ভূমিকা থাকে, সেটি আমার। কেউ বুকে হাত দিয়ে অস্বীকার করতে পারবেন না। আমাদের এক প্রতিমন্ত্রী মহোদয় থেকে শুরু করে আয়েন উদ্দিন, ফজলে হোসেন বাদশা পর্যন্ত কেউ বলতে পারবেন না যে, তার নির্বাচনে প্রার্থিতার ব্যাপারে এবং তাকে জিতিয়ে আনার ব্যাপারে আমার সহযোগিতা ছিল না।
তার পর কিছুদিন যেতে না যেতেই কেন আমার পেছনে লেগে গেলেন? এমনকি যারা রাজনীতি থেকে ১০০ মাইল দূরে ছিলেন? কেউ কেউ গার্মেন্টসের ব্যবসা করে ফুলেফেঁপে বটগাছ হয়ে গিয়েছিলেন। ঢাকাতেই থাকতেন, এলাকায় আসতেন না, যোগাযোগও নেই। এলাকায় তাদের আত্মীয়স্বজন বলতে কেউই নেই। নানি শাশুড়ির দেশের মানুষ হিসেবে তিনি ভোটে দাঁড়িয়ে এমপি হলেন। যারা আমার পেছনে ২০০৮ সালের নির্বাচনে ঘুরলেন, তারা আমার ২০১৩ সালে (সিটি নির্বাচনে) পরাজয়ের পরে দুই-তিন মাসের মধ্যে চোখ উল্টিয়ে ফেললেন।
অনুষ্ঠানে লিটন আরও বলেন, আমি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আসন্ন সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে দলীয় মনোনয়নপত্র তুললাম। জমা দিলাম। কিন্তু আমার মহানগর সেক্রেটারির মাথায় কী বিকার উঠল, তিনি দৌড়ে গিয়ে লম্ফঝম্প করে মনোনয়নপত্র তুলে জমা দিলেন। কে তাকে বলল? নেত্রী তাকে বলবেন? অসম্ভব। তিনি বলতেই পারেন না। কারণ নেত্রী আমাকে বলেই দিয়েছেন সুন্দরভাবে, তুমিই মনোনয়নপত্র তোল, তোমার দরকার আছে।