Home আন্তর্জাতিক সহিংসতায় মণিপুরে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলেছে

সহিংসতায় মণিপুরে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলেছে

দখিনের সময় ডেস্ক:
ভারতের সেভেন সিস্টার্সের ‘অনুদঘাটিত ভূস্বর্গ’ হিসেবে পরিচিত রাজ্য মণিপুরে সহিংসতায় মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এই রাজ্যটি ভারতের উত্তর-পূর্ব দিকে তিনটি রাজ্য নাগাল্যান্ড, মিজোরাম, আসাম দিয়ে বেষ্টিত। এর পূর্বদিকে রয়েছে মিয়ানমার, সেখানেও চলছে যুদ্ধ। মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের পর দেশটির অনেক নাগরিকই মণিপুরে আশ্রয় নিয়েছে।
মণিপুর রাজ্যের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী মেইতেই উপত্যকা অঞ্চলে বাস করে। এই জাতির সাংবিধানিকভাবে তফসিলি উপজাতির মর্যাদা পাওয়াকে কেন্দ্র করে ৩ মে থেকে শুরু হওয়া সহিংসতা এখনো অব্যাহত আছে। এই মর্যাদার লড়াই চলছে হিন্দু মেইতি ও খ্রীস্ট ধর্মালম্বী কুকিস ও নাগাদের মধ্যে। মেইতিদের তফসিলি মর্যাদা ঠেকাতে গিয়ে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়।
গত এপ্রিল মাসে ভারতের হাইকোর্ট মেইতেই সম্প্রদায়কে তফসিলি উপজাতিদের তালিকার অন্তর্ভূক্ত করা যায় কি না, তা খতিয়ে দেখতে রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দেয়। নির্দেশে রাজ্য সরকারকে চার সপ্তাহের সময় দেওয়া হয়। হাইকোর্টের এই নির্দেশের পর উত্তপ্ত হয়ে ওঠে মণিপুর। অল ট্রাইবাল স্টুডেন্ট ইউনিয়ন অব মণিপুর (এটিএসইউএম) ৩ মে সব ক’টি পাহাড়ি জেলায় ‘সলিডারিটি মার্চ’ করে। মার্চের পরপরই সংঘর্ষ শুরু হয়ে যায়।
পুলিশের বরাত দিয়ে গণমাধ্যমের দাবি, বুধবারের মিছিল থেকেই সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। এই সংঘর্ষে পাঁচজন আহত হয়। এরপর মণিপুরের বিভিন্ন জেলায় দুই জনগোষ্ঠীর মধ্য সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। তারা মনে করে, মেইতেই সম্প্রদায়ের সদস্যরা তফসিলি উপজাতিদের তালিকায় ঠাঁই পেলে রাজ্যে তারা ‘কাস্ট সার্টিফিকেট’ নিয়ে জমি কেনার অনুমতি পাবেন। সেটা কুকিস ও নাগা সম্প্রদায়ের লোকেরা মেনে নিতে রাজী নয়। অথচ বিগত ১০ বছর ধরে তারা আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতির দাবিতে আন্দোলন করে আসছিল।
৩ মের সংঘর্ষের আগে গত মার্চ মাসে মণিপুরের মন্ত্রিপরিষদ কুকি বিদ্রোহী গ্রুপ কুকি ন্যাশনাল আর্মি ও জুমি রিভলিউশনারি আর্মির সঙ্গে ‘সাসপেনশন অব অপারেশন’ চুক্তি প্রত্যাহার করে। কেন্দ্রীয় সরকার এই প্রত্যাহার সমর্থন করেনি। তাতে সশস্ত্র সংঘর্ষের পথ আরো বেশি উন্মুক্ত হয়েছে। আরেকটি ঘটনা হলো মণিপুরের রাজ্য সরকার রিজার্ভ বনাঞ্চলে অবৈধ অভিবাসীদের সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। কর্মকর্তারা বলেছেন, মিয়ানমারের অবৈধ অভিবাসীরা ১৯৭০ সাল থেকেই মণিপুরে এই বনাঞ্চলে আবাসন তৈরি করতে শুরু করে। উপজাতি গোষ্ঠীগুলি বলছে, অবৈধ অভিবাসন একটি অজুহাত, যার মাধ্যমে মেইতি জনগোষ্ঠী উপজাতীয় জনগোষ্ঠীকে তাদের জমি থেকে উচ্ছেদ করতে চায়। ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বিজেপি রাজ্য সরকার চুড়াচাঁদপুর, কাংপোকপি এবং টেংনৌপাল জেলাগুলিতে একটি উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে। তার আগে বনানঞ্চলের বাসিন্দাদের দখলকারী হিসাবে ঘোষণা করা হয়। বিজেপি সরকারের এই পদক্ষেপকে উপজাতি বিরোধী হিসাবে দেখা হয়।
উপত্যকা উত্তপ্ত হয়ে উঠতেই ভারত সরকার সেখানে ১০ হাজার সেনা ও প্যারামিলিটারি পাঠায়। রাজ্যটিতে পাঁচ দিনের জন্য ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়। ভারতীয় দণ্ডবিধির আওতায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। আইন-শৃংখলা নিয়ন্ত্রণে কোনো কোনো ক্ষেত্রে কারফিউতে ‘দেখা মাত্র গুলি’ করার নির্দেশ দেওয়া হয়।  ধ্বংসাত্মক সংঘর্ষের মধ্যে রাজ্যে অতিরিক্ত নিরাপত্তা বাহিনী পাঠানো হলেও তাতে উত্তেজনা বিন্দুমাত্র কমেনি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

টিকটকে নিরাপদ রাখবে যে ১০ ফিচার

দখিনের সময় ডেস্ক: ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করছে টিকটক। সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাথে যৌথভাবে কাজ শুরু করেছে টিকটক। যেখানে ‘ফিডস’ নেটওয়ার্কের...

প্রতিদিন খেজুর খাবেন যে কারণে

দখিনের সময় ডেস্ক: আপনার কি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার জন্য সুস্বাদু কোনো খাবার প্রয়োজন এবং সেইসঙ্গে অতিরিক্ত ওজন কমাতে চাইছেন? এক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো হতে পারে খেজুর।...

পরীমণি প্রথম স্বামীর পরদিন মারাগেলো প্রথম পরিচালক

দখিনের সময় ডেস্ক: লাইফ সাপোর্টে থেকেই না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন ঢাকাই সিনেমার আলোচিত নায়িকা পরীমণির প্রথম সিনেমা ‘ভালোবাসা সীমাহীন’-এর পরিচালক শাহ আলম মণ্ডল।  গুলশানের...

বাউফলে ইউএনও’র বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিল

নয়ন সিকদার, বাউফল প্রতিনিধি পটুয়াখালীর বাউফলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ বশির গাজীর বিরুদ্ধে অনিয়ম,দুনীতি ও অপসারনের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বৈশোম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। গতকাল...

Recent Comments