দখিনের সময় ডেস্ক:
আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির সঙ্গে রাজনৈতিক সমঝোতার সম্ভাবনা নাকচ করেছে সরকার। গতকাল রবিবার দুপুরে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন সরকারের এই অবস্থানের কথা জানান।যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস সদস্য এড কেইস ও রিচার্ড ম্যাককরমিকের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল গতকাল আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ সফর শুরু করে। সফরের প্রথম দিনই তাঁরা বৈঠক করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে।
মার্কিন কংগ্রেস প্রতিনিধিদলের এ সফর মূলত রোহিঙ্গা ইস্যুতে। তবে নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও সমঝোতার সম্ভাবনার বিষয়ে খোঁজখবর নিয়েছে প্রতিনিধিদলটি। তিন দিনের আনুষ্ঠানিক সফরের প্রথম দিন তাঁরা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের বাসায় আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টি এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী গতকাল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় কংগ্রেস প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক ও মধ্যাহ্নভোজের পর আলোচনার বিষয়ে সাংবাদিকদের জানান।পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘তারা বলেছে, তোমাদের কোনো সমঝোতার পথ আছে কি না ওদের (বিএনপি) সঙ্গে। আমরা বলেছি, তাদের যে দাবি, সরকারের পদত্যাগ, ওটাতে সমঝোতার কোনো সুযোগ নেই।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, কংগ্রেস সদস্যদের তিনি প্রশ্ন করেন, নির্বাচন উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্রে সরকারের পতন হয় কি না। তিনি কংগ্রেস সদস্যদের বলেন, ‘নির্বাচনের সময় তোমাদের দেশে কি সরকারের পতন হয়? নিশ্চয়ই না।এমন দাবি থাকলে তোমরা কি আলোচনায় বসবে? ওগুলোর প্রশ্নই উঠতে পারে না। আমরা আমাদের শাসনতন্ত্র অনুযায়ী নির্বাচন করব।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সরকার বা নির্বাচন কমিশন চাইলেই সহিংসতামুক্ত নির্বাচনের বিষয়ে ‘গ্যারান্টি’ দিতে পারে না। দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর আন্তরিকতা থাকলে সুষ্ঠু ও সহিংসতা ছাড়া নির্বাচন সম্ভব। যতগুলো দল আছে সব দল যদি নির্বাচনে যোগদান করে, তারা যদি আন্তরিকভাবে সিদ্ধান্ত নেয়; অবাধ, সুষ্ঠু ও সহিংসতা ছাড়া নির্বাচন চায়, তাহলে নির্বাচন সহিংসতা ছাড়া হবে।
মোমেন বলেন, ‘তাদের (দুই কংগ্রেস সদস্য) কাছে বিভিন্ন লোকজন বলেছে, বাংলাদেশ একটি ভয়ংকর জায়গা। এরা চীনের খপ্পরে পড়ে গেছে। এখানে অশান্তি আর অশান্তি। পুলিশ সব লোকজনকে ধরে মেরে ফেলছে। এ ধরনের একটি ধারণায় ভয় তাদের। তবে এসব কোনোটিই সত্য নয়।’ নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ হবে, এ বিষয়ে কংগ্রেস সদস্যরা আশ্বস্ত হয়েছেন কি না—এ প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সেটি তাদের জিজ্ঞেস করুন।’
রোহিঙ্গা ইস্যুতে আলোচনা হয়েছে বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘কংগ্রেস সদস্যরা রোহিঙ্গাদের কাজ দেওয়ার জন্য বলেছে। আমরা বলেছি, আমাদের ঘনবসতি। আর আমাদেরই প্রতিবছর ২০ লাখ যুবক কাজের বাজারে যোগ হয়। তোমরা মাত্র ৬২ জন রোহিঙ্গা নিয়েছ। পারলে আরো রোহিঙ্গাদের নিয়ে যাও।’
বৈঠকে উভয় পক্ষ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল নিয়েও আলোচনা করেছে। বাংলাদেশ সংক্ষেপে তার ইন্দো-প্যাসিফিক আউটলুক সম্পর্কে কথা বলেছে। বৈঠকে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসও উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অন্যদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক বিশেষ দূত সাবের হোসেন চৌধুরী, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ ও মোহাম্মদ এ আরাফাত উপস্থিত ছিলেন।