Home শীর্ষ খবর কোনো রা-জ-নৈ-তি-ক কথা হবে না, বললেন শেখ রেহানা

কোনো রা-জ-নৈ-তি-ক কথা হবে না, বললেন শেখ রেহানা

শেখ রেহানার মুখোমুখি প্রথমবার হলাম ১৯৮৭ সালের ৩ মার্চ। তিনি আমাদের নিয়ে গেলেন বসার ঘরে। মাঝারি সাইজের বসার ঘর, আহামরি কিছু নয়। কিন্তু বেশ গুছানো। একটু বসুন আসছি- বলে বসার ঘর থেকে ভিতরে যেতে গিয়ে আবার ঘুরে দাঁড়ালেন শেখ রেহানা। বললেন, কোনো রা-জ-নৈ-তি-ক কথা কিন্তু হবে না! আমি সুবোধ বালকের মতো মাথা নাড়লাম। বললাম, ঠিক আছে, কোনো রাজনৈতিক কথা হবে না।
আমার উদ্দেশ্য ছিল, লক্ষ্য পর্যন্ত পৌঁছানো। শেখ রেহানার সাক্ষাৎকার গ্রহণকালে অনেক সাবধান ছিলাম। রাজনৈতিক কথা না বলার শর্ত থাকলেও শেখ রেহানার সঙ্গে রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। প্রথমে বুঝতেই পারিনি, কি কারণে তিনি বারবার রাজনৈতিক প্রসঙ্গ না তোলার জন্য বলছেন। যার ধমনীতে একজন মহিরুহু রাজনৈতিকের রক্ত প্রবাহিত। জন্মের পর বেড়ে উঠেছেন একটি রাজনৈতিক পরিবেশে। এরপরও রাজনৈতিক প্রসঙ্গ এড়িয়ে যাওয়ার কারণ প্রথমে আমার বোধগম্য হয়নি। ফলে তাঁর ওই বক্তব্যকে যৌক্তিক ভিত্তির ওপর দাঁড় করানো ছিল কঠিন। মনে হয়েছে অসংলগ্ন। কিন্তু এর কারণ আমার কাছে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে সাক্ষাৎকার গ্রহণের শেষ পর্যায়ে। তখন মনে হয়েছে, কারণটি না বুঝলেই ভালো হতো। কেননা মানুষের মনের গভীরে যে বেদনা থাকে তা সহজেই সংক্রমিত হয়।
শর্ত ছিল রাজনৈতিক প্রশ্ন করা যাবে না, যদিও আমার প্রধান লক্ষ্য ছিল রাজনৈতিক প্রসঙ্গ। কিন্তু সরাসরি এ প্রসঙ্গে যাওয়ার উপায় ছিল না। তাই শুরু করলাম একেবারে ছেলেবেলা দিয়ে। এতে দুটো কাজ হলো। এক. তাঁর জীবনের কিছু সাধারণ ঘটনাও পাঠকের কাছে অসাধারণ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। দুই. ছেলেবেলার স্মৃতি বলতে শুরু করলে মানুষ অনেক কথাই বলে অতি সহজে, যা ফর্মাল প্রশ্নে বলতে চায় না।
১৯৮৭ সালের ৩ মার্চ নেয়া সাক্ষাৎকার থেকে উদ্ধৃত করা যাক: “দাদুর প্রসঙ্গ বলতে অনুরোধ করা হলে চলে আসে শেখ রেহানার ছেলেবেলার কথা। তিনি বললেন, আজ দাদুর অনেক স্মৃতিই তো মনে পড়ে। কোনটা বলি। মনে আছে দাদুর সাথে গ্রামের হাটে যেতাম। সে কি আনন্দ! তাঁর সাথে নৌকায় চড়ে শিকারে যাওয়াও অনেক আনন্দের ছিল। দাদু প্রায়ই লেখাপড়া নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন করতেন। নামতা ধরতেন। মুখেমুখে কঠিন অংক করতে বলতেন। তখন সত্যিই বেকায়দায় পড়তাম। হঠাৎ হয়ত তিনি বলে বসতেন, আমাকে অমুক সুরাটা একবার শোনাও তো।…দাদীর কথা বেশি করে মনে পড়ে। গ্রামের বাড়িতে গেলে তিনি সারাক্ষণ শুধু খাওয়াতে চাইতেন। এখান থেকে এটা, ওখান থেকে ওটা বের করতেন। যেন তাঁর কাজই ছিল কত বেশি খাওয়ানো; আর দুধ খাওয়ানোর ওপর জোর ছিল একটু বেশি। কিন্তু আমি খেতে চাইতাম না। প্রায়ই তিনি দুধের বাটি নিয়ে পিছনে পিছনে ছুটতেন। এমন আদর এখন আর পাই না। তিনি বিভিন্ন উপদেশ দিতেন। বলতেন, কারো সাথে উচ্চকণ্ঠে কথা বলবে না; কেউ মন্দ বললে চুপ করে থাকবা। ”
লক্ষ করলাম, দাদা-দাদীর স্মৃতিচারণকালে শেখ রেহানার কণ্ঠে এক ধরনের আবেগ কেঁপে কেঁপে উঠছে। এতে অনেকখানি জুড়ে ছিল অপার আনন্দ, বাকিটা ছিল বেদনার। উল্লেখ্য, তাঁর দাদী ’৭৪ সালের ৩১ মে এবং দাদা ’৭৫ সালের ৩০ মার্চ মৃত্যুবরণ করেন। ছয় মাসের এ ব্যবধান না হলে হয়তো পিতার কাঁধে সন্তানের লাশ উঠত পাহাড় বহনের মতো।
দাদা-দাদীর প্রসঙ্গে স্মৃতি রোমন্থন করতে করতে অল্প সময়ের মধ্যেই শেখ রেহানা আমাদের বেশ আস্থায় নিলেন। পত্রিকার অচেনা লোকের দেওয়াল ভেঙে তিনি আমাদের পরিচিত জনের মতোই গ্রহণ করলেন। এরপরও রাজনৈতিক প্রসঙ্গ তোলার ভরসা পাচ্ছিলাম না। ঝুঁকি কমিয়ে রাখার জন্য ব্যক্তিগত স্মৃতি রোমন্থনের মধ্যে আরো কিছুক্ষণ থাকার সিদ্ধান্ত নিলাম। এদিকে ফরিদ বাশার ইশারায় তাগাদা দিচ্ছিলেন, দ্রুত শেষ করার জন্য। বেশিরভাগ ক্যামেরাম্যানের যা স্বভাব। কিন্তু আমি তখনও আসল কাজই শুরুই করতে পারিনি। এ অবস্থায় মূল লক্ষ্যে দ্রুত যাওয়ার জন্য মায়ের সঙ্গে স্মৃতি প্রসঙ্গ তুললাম।
অগামী কাল তৃতীয় র্পব, “মা যেন দুঃখ ভোগ করতেই পৃথিবীতে এসেছিলেন”

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

প্রতিদিন খেজুর খাবেন যে কারণে

দখিনের সময় ডেস্ক: আপনার কি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার জন্য সুস্বাদু কোনো খাবার প্রয়োজন এবং সেইসঙ্গে অতিরিক্ত ওজন কমাতে চাইছেন? এক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো হতে পারে খেজুর।...

পরীমণি প্রথম স্বামীর পরদিন মারাগেলো প্রথম পরিচালক

দখিনের সময় ডেস্ক: লাইফ সাপোর্টে থেকেই না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন ঢাকাই সিনেমার আলোচিত নায়িকা পরীমণির প্রথম সিনেমা ‘ভালোবাসা সীমাহীন’-এর পরিচালক শাহ আলম মণ্ডল।  গুলশানের...

বাউফলে ইউএনও’র বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিল

নয়ন সিকদার, বাউফল প্রতিনিধি পটুয়াখালীর বাউফলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ বশির গাজীর বিরুদ্ধে অনিয়ম,দুনীতি ও অপসারনের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বৈশোম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। গতকাল...

নিজের চেয়ার ঠিক রাখতেই ব্যস্ত পুলিশ কর্মকর্তারা

দখিনের সময় ডেস্ক: জুলাই ২৪-এর আন্দোলনে গণহত্যার জন্য একক বাহিনী হিসেবে পুলিশকে দায়ী করা হয়। মানুষের ক্ষোভের আগুনে পুড়েছে বাহিনীটির শতশত থানা, যানবাহন। জীবন গেছে...

Recent Comments