দখিনের সময় ডেস্ক:
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে তিন বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে দেশটির আদালত। রায় দেওয়ার আধা ঘণ্টার মধ্যেই তাকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠিয়েছে পাঞ্জাব পুলিশ। তবে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীদের কারাগারে যাওয়া ইতিহাস এই প্রথম নয়।
পাকিস্তানের সূচনালগ্ন থেকেই সামারিক শাসকদের রোষানলে পড়ে কারাবরণ করতে হয়েছে দেশবরেণ্য রাজনীতিবিদদের। সামরিক শাসকেরা নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীদের গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। স্বাধীনতা লাভের পর ৭৫ বছর পেরিয়েছে পাকিস্তান। এই দীর্ঘ সময়ের অর্ধেক জুড়েই দেশটির নিরাপত্তা, পররাষ্ট্রনীতির পাশাপাশি রাজনীতিতেও হস্তক্ষেপ ও অনধিকার চর্চা করে আসছে পাকিস্তান সেনাবাহিনী। যা দেশটির রাজনৈতিক ইতিহাসকে করেছে কলুষিত।
হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী: এ তালিকার শুরুতেই রয়েছে পাকিস্তানের পঞ্চম প্রধানমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নাম। রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে ১৯৬২ সালের জানুয়ারি মাসে গ্রেপ্তার করা হয় তাঁকে। প্রকৃতপক্ষে জেনারেল আইয়ুব খানের সামরিক অভ্যুত্থানে সমর্থন জানাতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করায় সোহরাওয়ার্দীর ওপর এমন খড়্গ নেমে আসে। বিনা বিচারে তাকে করাচির কেন্দ্রীয় কারাগারের নির্জন প্রকোষ্ঠে আটকে রাখা হয়।
জুলফিকার আলী ভুট্টো: এরপর পাকিস্তানের নবম প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টোকে গ্রেপ্তার করা হয় ১৯৭৭ সালের সেপ্টেম্বরে। মূলত ১৯৭৪ সালে একজন রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে হত্যার ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার অভিযোগ তোলা হয়েছিল তাঁর বিরুদ্ধে। এই অভিযোগে তাকে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেওয়া হয়। অবশেষে ১৯৭৯ সালের ৪ এপ্রিল রায়টি কার্যকরও করা হয়।
বেনজির ভুট্টো: জুলফিকার আলী ভুট্টোর মেয়ে বেনজির ভুট্টোও পরবর্তী সময় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। দুই মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা বেনজির পাকিস্তানের প্রথম নারী সরকারপ্রধান। তিনি বিশ্বের প্রথম মুসলিম নারী প্রধানমন্ত্রীও ছিলেন। ১৯৮৮ সালে প্রথমবারের মতো ক্ষমতায় বসেন বেনজির। তবে সরকারপ্রধান হওয়ার আগেই ১৯৮৫ সালের আগস্টে প্রথমবারের মতো আটক হয়েছিলেন বেনজির। ওই সময় তাকে ৯০ দিন গৃহবন্দী রাখা হয়। পরবর্তীতে ১৯৯৯ সালের এপ্রিলে আবারও বেনজিরকে গ্রেপ্তার করা হয়। দুর্নীতির মামলায় তাকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। সবশেষ ২০০৭ সালের তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তখন জেনারেল পারভেজ মোশাররফকে ক্ষমতা থেকে হটাতে উত্তাল হয়ে উঠেছিল পাকিস্তান। ২০০৭ সালের ২৭ ডিসেম্বর এক নির্বাচনী সভায় আত্মঘাতী বোমা হামলায় নিহত হন বেনজির।
নওয়াজ শরিফ: কারাবরণ করতে হয়েছে পাকিস্তানের তিনবারের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকেও। জেনারেল পারভেজ মোশাররফের আমলে তিনি টানা ১০ বছর বিদেশে নির্বাসিত ছিলেন। পাকিস্তানে ফিরে এলে ২০০৭ সালের সেপ্টেম্বরে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে আবারও সৌদি আরবে নির্বাসনে পাঠানো হয়। ২০১৮ সালের জুলাইয়ে আবার গ্রেপ্তার হন নওয়াজ। দুর্নীতির মামলায় তাকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তবে দুই মাস পর তার সাজা স্থগিত হলে তিনি কারামুক্ত হন। একই বছরের ডিসেম্বরে তিনি আবার গ্রেপ্তার হন। একটি মামলায় তাকে ৭ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। চিকিৎসার জন্য ২০১৯ সালের নভেম্বরে দেশত্যাগের অনুমতি পান তিনি।
শহীদ খাকান আব্বাসি: ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের মে পর্যন্ত পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন পিএমএল-এন নেতা শহীদ খাকান আব্বাসি। দুর্নীতির অভিযোগে ২০১৯ সালের জুলাইয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। জামিন পাওয়ার পর ২০২০ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি তিনি কারামুক্ত হন।
ইমরান খান: পাকিস্তানের ২২তম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ইমরান খান ২০১৮ সালের আগস্ট থেকে ২০২২ সালের এপ্রিল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। গত বছরের এপ্রিলে পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে বিরোধীদের আনা আস্থা ভোটে হেরে ইমরানের সরকার ক্ষমতা হারায়। পরে শাহবাজ শরিফের নেতৃত্বে বিরোধীরা জোট সরকার গঠন করে। ক্ষমতা হারানোর পর ইমরানের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা হয়। জারি হয় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা। সর্বশেষ দেশটির নির্বাচন কমিশনের দায়ের করা তোষাখানা মামলার রায়ে তিন বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে ইমরানকে। রায় দেওয়ার আধা ঘণ্টার মধ্যেই তাকে গ্রেপ্তার হয়েছেন তিনি। বর্তমানে পাকিস্তানের পাঞ্জাবে কুখ্যাত ‘আতক’ কারাগারে বন্দি রয়েছেন।