দখিনের সময় ডেস্ক:
ভারতের দিল্লিতে সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠেয় জি-২০ সম্মেলনে অংশ নিতে যাবেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই সময় আগামী ডিসেম্বর অথবা জানুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে দুটি বিশেষ বার্তা ভারত দিতে পারে বলে এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়া। তাতে বলা হয়, সে বার্তা শুধু ভারত দেবে, এমনটি নয়। এতে যুক্ত থাকবে আমেরিকাও।
ভারত ও আমেরিকার নিরাপত্তা বিভাগের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার বরাতে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়া বলছে, বার্তা দুটি স্পষ্ট। এক. বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হতে হবে। দুই. আওয়ামী লীগকে অবশ্যই চীনপন্থী ও ইসলামপন্থী নেতাদের দল থেকে নির্মূল করে অসাম্প্রদায়িক ও জনপ্রিয় নেতাদের বেছে নিতে হবে।
টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়া ডটকমে লেখা নিবন্ধে কলাম লেখক দেবাদীপ পুরোহিত বলেন, এই দুই বার্তার মাধ্যমে বাংলাদেশ ইস্যুতে আমেরিকা ও ভারতের মধ্যে ঐকমত্যের নমুনা পাওয়া গেছে। আর এর কারণ হচ্ছে চীন। দুই দেশই চাইছে, বাংলাদেশে চীনের প্রভাব না থাকুক। এ ব্যাপারে ভারতের নিরাপত্তা বিভাগের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বলেন, ‘বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ভারত ও আমেরিকার নিরাপত্তা বিভাগের কর্মকর্তারা বেশ কয়েকবার বৈঠক করেছেন। এ বৈঠক ভারত ছাড়াও আশপাশের দেশগুলোতে অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২০১৮ সালে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে দুই দেশের মধ্যে একতা ছিল না। এবার তা স্পষ্ট। শেখ হাসিনা দিল্লিতে গেলে সে বার্তাই পাবেন।’
এই সরকারের অধীনেই বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হয়-সরকারের এমন দাবির পরও অনেক দেশ এ ব্যাপারে বেশ আগ্রহী। বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে দিল্লি কোনো প্রশ্ন না রাখলেও আমেরিকা ও পশ্চিমা দেশগুলো বিশেষত ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনের দিকে ইঙ্গিত করে নানা প্রশ্ন তুলছে।এখানে বলা প্রয়োজন, ২০১৮ সালের নির্বাচনে জয়লাভের পর শেখ হাসিনাকে সবার আগে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
ভারত এ ব্যাপারে তেমন জোর করবে না বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। ঢাকার এক কূটনীতিক বলেন, ‘শেখ হাসিনা এখন আর পুরোপুরি ভারতের পছন্দের নেত্রী নন। গত কয়েক বছরে বেশ কিছু পরিবর্তন এসেছে। এ কারণে এবার দিল্লি এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না করে থাকতে পারছে না।’ তবে আওয়ামী লীগ সরকার ভারতকে অনেক সুবিধা দিয়েছে বলেই দাবি করা হয় প্রতিবেদনে। এরপরও চীনের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের নৈকট্য ভারতকে ভাবিয়ে তুলেছে। আর এ কারণেই বাংলাদেশ ইস্যুতে এক হয়ে গেছে ভারত ও আমেরিকা।
টেলিগ্রাফের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের প্রশাসন ও আওয়ামী লীগের মধ্যে অনেক চীনপন্থী ও ইসলামপন্থী রয়েছেন বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ভারত ও আমেরিকা। দ্রুত এদের সরানোর জন্য শেখ হাসিনাকে বার্তা দেবে দেশ দুটি। এ ছাড়া নির্বাচন কমিশনকে আরও ক্ষমতা দিতে বলা হবে। নির্বাচনে বিদেশি পর্যবেক্ষকদের রাখার ব্যবস্থাও চাওয়া হবে। প্রতিবেদন বলছে, বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ বিরোধী দলগুলো তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার দাবি করছে। তবে এর কোনো দরকার নেই বলেই মনে করেন দুই দেশের নিরাপত্তা বিভাগের কর্মকর্তারা। দুর্নীতিবাজ ও ঋলখেলাপিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে হবে, এই বার্তাও থাকবে। দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধিতে রাশ টানার জন্যও বলা হবে বাংলাদেশকে।
আমেরিকার ভিসা নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে ভারতীয় কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে দেবাদীপ পুরোহিত লিখেছেন, দিল্লির কর্মকর্তারা আমেরিকার সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা করেছেন। বাংলাদেশের কারও ওপর এ নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার আগে দেশটি ভারতের সঙ্গে যেন আলোচনা করে, সেই বার্তা দেওয়া হয়েছে। দেবাদীপ পুরোহিত তাঁর লেখা শেষ করেছেন একটি প্রশ্ন দিয়ে। তাঁর লেখা নিবন্ধের শেষ বাক্যটি হচ্ছে- বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কি ভারত ও আমেরিকার এসব যৌথ বার্তা আমলে নেবেন?