রাজনৈতিক প্রসঙ্গ না তোলার শর্ত থাকলেও শেষতক কৌশলে এ প্রসঙ্গ তুললাম। শুরু করলাম স্কুল দিয়ে। উত্তরে শেখ রেহানা বললেন, স্কুলে পড়ার সময় ছাত্র রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলাম। কলেজে উঠে অবশ্য রাজনীতি এড়িয়ে চলতাম। মা’রও নিষেধ ছিল। কিন্তু বড় ভাই চাইতেন আমি রাজনীতির সাথে জড়িত থাকি। আমার রাজনীতি না করার ব্যাপারে বড় ভাইয়ের কাছে নালিশও আসত। তখন সরাসরি রাজনীতি না করলেও মিছিল শুনতাম, খবরাখবর রাখতাম। এখন তো ওসব একেবারে পছন্দ করি না।
: কারণ কী?
: আপনি কিন্তু রাজনৈতিক প্রশ্ন করছেন!
: স্বাভাবিক কারণেই এ প্রশ্ন আসে, কারণ আপনার পিতা একজন বিরাট রাজনীতিক ছিলেন এবং তাঁর পরিচয়ই আপনার সবচেয়ে বড় পরিচয়।
আমার দৃঢ়তায় নরম হলেন শেখ রেহানা। বললেন, এ দেশে কিসের রাজনীতি বলুন। যে দেশে বঙ্গবন্ধুর মতো একজন নেতাকে হত্যা করা হয় সে দেশে আমার রাজনীতির প্রশ্নই ওঠে না। এরপর শেখ রেহানা কিছুটা অভিযোগের স্বরেই বললেন, এতবড় নেতার লাশ পড়ে থাকল, কেউ দেখতে গেল না। খুনিরা দেশে-বিদেশে বড় বড় চাকরি পায়, পুরস্কার পায়। আমাদের সন্তানদের কী শিক্ষা দেব বলুন। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকা-ের পরবর্তী সরকারের মন্ত্রিসভায় যোগদানকারীদের সম্পর্কে মন্তব্য করতে বলা হলে শেখ রেহানা বলেন: কী মন্তব্য করব। তাদের প্রতি করুণা হয়।
এরপরে প্রশ্ন ছিল, রাজনীতিতে কবে আসবেন? উত্তরে শেখ রেহানা বলেছিলেন, কোনোদিন রা-জ-নী-তি-তে যাব না!
: শেখ হাসিনাও কিন্তু রাজনীতিতে আসতে চাননি।
: পরিস্থিতির কারণে তাঁকে রাজনীতিতে আসতে হয়েছে। অবশ্য কেউ কেউ তাকে পুতুল হিসেবে ব্যবহার করতে চেয়েছিল। কিন্তু তা তিনি মোকাবিলা করতে পেরেছেন। নিজের যোগ্যতায় তার পক্ষে অবস্থান দৃঢ় করে নেওয়া সম্ভব হয়েছে।
: বঙ্গবন্ধুর রাজনীতির বিকাশের জন্য আপনার অংশগ্রহণ প্রয়োজন হতে পারে…।
: সে জন্য আমাদের একজনকে তো দিয়েছি। আমার পক্ষে রাজনীতি করা সম্ভব নয়। আমার ধৈর্য কম। হাসিনা আপার পক্ষেই রাজনীতি করা সম্ভব। আব্বার মতো সবাইকে ক্ষমা করে দেওয়ার গুণ তাঁর আছে; আমার তা নেই। অনেক কথা আছে, সব বলা যায় না।
: আপনার সময় কাটে কীভাবে?
: সংসার নিয়ে আছি। অবসরে পুরনো স্মৃতির আবর্তে ক্ষতবিক্ষত হই।
আমাদের জমির ধান বেঁচা টাকায়
খোন্দকার মুশতাকের সংসার চলত
অন্য এক প্রশ্নের উত্তরে শেখ রেহানা ১৯৮৭ সালে নেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন: “কাকে কি বলব বলুন। আজকে আব্বার বিরুদ্ধে যারা কথা বলেন তাদের অনেককেই এক সময় আব্বার অনুকম্পায় চলতে হয়েছে। আমাদের জমির ধান বিক্রির টাকায় খোন্দকার মুশতাকের সংসার চলত। অলি আহাদ তো বলতে গেলে আমাদের বাসায়ই থাকতেন। আজকের আমেনা বেগম আব্বার বিরুদ্ধে বাজে মন্তব্য করেন। অথচ স্বাধীনতার আগের দিনগুলোতে জনসভায় যাওয়ার আগে মা’র শাড়ি পরে যেতেন। তার একটা ভালো শাড়ি পর্যন্ত ছিল না।
আজকে অনেক নেতা আছেন যারা আব্বার ছত্রছায়ায় বেড়ে উঠেছেন। অথচ এখন কেউ কেউ উল্টাপাল্টা কথা বলেন। আবদুর রাজ্জাকের কথাই বলেন না। আওয়ামী লীগ পুনর্জন্মের সময় কেউ কেউ বাকশাল পুনর্জন্মের প্রস্তাব করেছিলেন। কিন্তু আবদুর রাজ্জাক এ প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছেন। তার বক্তব্য ছিল, জনগণ এ সময় বাকশাল স্বাভাবিকভাবে নেবে না। অথচ কয়েকদিন পর নিজেই বাকশাল গঠন করে একটা কনফিউজড পরিস্থিতি সৃষ্টি করলেন। কোরবান আলীর কথা ধরেন। বর্তমান সরকারে (এরশাদ সরকার) যোগ দেওয়ার কয়েকদিন আগেও লন্ডনে গিয়ে আমাদের বাসায় ছিলেন। স্বামীর স্বল্প আয়ে আমাদেরই চলতে কষ্ট হচ্ছিল। তবুও তাকে যতদূর সম্ভব সমাদর করেছি। এরপর শুনলাম, সে বর্তমান সরকারের (এরশাদ সরকার) সাথে হাত মিলিয়েছে। শেখ শহীদের কথা আর বলবেন না।
# আগামী কাল নবম ও শেষ পর্ব: “১৫ আগস্টের পর আমি আর কাউকে বিশ্বাস করতে পারি না”