Home মতামত কুকুর মারলে জেল-জরিমানা, সাংবাদিক মারলে কী?

কুকুর মারলে জেল-জরিমানা, সাংবাদিক মারলে কী?

বহু যন্ত্রনার মধ্য দিয়ে যেতে হয় মানুষকে। সাম্প্রতি যন্ত্রনা প্রসঙ্গে আসার আগে ইতিহাসের পাতায় একটু নজর দেয়া যাক। এর একটি সুদূর এবং অপরটি কাছাকাছি। একটি দেশে, অপরটি সীমনা পেরিয়ে বহু দূরে। সুদূরের ঘটনা হচ্ছে, অটোমান সাম্রাজ্যে নতুন সুলতান সিংহাসনে বসেই যুবরাজদের হত্যা করতেন। আর সিংহাসনে বসার পর ভাইদের হত্যা করা ছিলো আইনসিদ্ধ।
এ ক্ষেত্রে ইতিহাস খ্যাত নির্মমতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন সুলতান মেহমেত তৃতীয়। অটোমান সাম্রাজ্য ক্ষমতার চরম শিখরে অবস্থানকালে ১৫৯৫ সালে মেহমেত তৃতীয় সিংহাসনে বসার দিনটি ইতিহাসে বিশেষভাবে চিহ্নিত। তবে ইতিহাসে সেই দিনটি স্মরণীয় হয়ে থাকার কারণ নতুন সুলতানের আগমন নয়, দিনটি খ্যাত ইস্তাম্বুলের প্রাসাদে ১৯ জন রাজকুমারকে হত্যার ঘটনায়। আবার এটি মনে করার কোনই কারণ নেই, ভাইদের হত্যা করেছেন একমাত্র সুলতান মেহমেত।
অটোমান সাম্রাজে যে আইন বা ঐতিহ্যের অধীনে রাজপুত্র এবং রাজকুমারীদের মৃত্যুদন্ড দেয়া হতো তা প্রতিষ্ঠিত হয় ১৫ শতকে। সুলতান দ্বিতীয় মেহমেত ১৪৮১ সালে তার মৃত্যুর কয়েক বছর আগে একটি নির্দেশ জারি করেছিলেন। এটি কেবল অটোমান সাম্রাজ্যের জন্য নয়, এটি বিশ্বের জন্য ভালো- এমনটাই বলা হয়েছিলো আইনের ব্যাখ্যায়।
সুলতানদের আদেশে ভাই বোনদের হত্যা করার আইনটি ছিলো খুবই কঠিন। ফলে অতি দয়ালু হিসেবে পরিচিত সুলতান মুরাদকেও ৯ জন রাজকুমারদের শ্বাসরোধ করে হত্যার নির্দেশ দিতে হয়েছে। এ ঘটনায় সুলতান মুরাদের হৃদয় ভেঙে পড়েছিলো। এরপরও তাকে হত্যা করার আইন মানতে হয়েছে। উল্লেখ্য, অটোমান সাম্রাজ্যের শত শত বছরের রাজত্বে ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকার বেশিরভাগ অংশ শাসন করেছে। যা অনেকটাই দাড়িয়ে ছিলো বক্তপাত আর হত্যার উপর।
আমাদের রাষ্ট্রেও কিন্তু হত্যার বিধান আছে। বিচারিক প্রক্রিয়ায় আদম সন্তানের প্রাণ সংহারের বিষয়টি সবারই জানা। তবে এটি করা হয় সাধারণের দৃষ্টিসীমার বাইরে, নানান আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে। এর সঙ্গে রাষ্ট্রীয় সংস্থার বয়ানীতে ক্রসফায়ারে হত্যার একটি ধারা বেশ চলমান ছিলো আমেরিক্যার স্যাংশনের আগে। এটিও সবারই জানা। কিন্তু হয়তো অনেকেরই অজানা, প্রকাশ্যে হত্যার রাষ্ট্রীয় বিধানও আমাদের দেশে ছিলো যা এই সেদিনের বিষয়। তবে মানুষ নয়, হত্যা করা হতো বেওয়ারিশ কুকুর। কুকুর হত্যা করা ছিলো পৌরসভার আইনগত দায়িত্ব।
প্রথম দিকে এই কর্ম করা হতো ঘুমন্ত অথবা বিশ্রামরত কুকুরের মাথায় আঘাত করে। পরে বিষয়টি একটু ‘মানবিক’ করা হয়েছে। নিধনের জন্য কুকুর ধরে ইনজেকশন পুশ করা হতো। তবে এতে কুকুর পুরো মরতো না। হয়তো মশামার অষুধের মতো কুকুর মারার অষুধও ভেজাল ছিলো। অথবা ছিলো নিম্ন মানের। ফলে ময়লার স্তুপে ফেলেদেয়া কুকুরগুলো যন্ত্রণায় ধুকেধুকে মরতো। পরে উচ্চ আদালতের নির্দেশে কুকুর নিধনের তান্ডব বন্ধ হয়েছে। শুধু তাই নয়, কুকুর মারলে জেল-জরিমানাও বিধান করা হয়েছে। কিন্তু সাংবাদিক মারলে কী হয়? কিছুই না! প্রতিবাদের ধারাও যেনো মরুপথে পথ হারাচ্ছে।
# কালবেলায় প্রকাশ, ৩ সেপ্টমার ২০২৩

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

রয়্যাল এনফিল্ডের বৈদ্যুতিক বাইক আসছে

দখিনের সময় ডেস্ক: বৈদ্যুতিক বাইকের বাজারে ইতোমধ্যেই পা রেখেছে রিভল্ট এবং ওলা। ওলার বাইক বাজারে না এলেও আকর্ষণীয় ডিজাইনের সঙ্গে কম জ্বালানি খরচ নজর কেড়েছে...

দুধের বিকল্প হিসেবে যা খেতে পারেন

দখিনের সময় ডেস্ক: উদ্ভিদ-ভিত্তিক দুধ বর্তমানে জনপ্রিয় হতে শুরু করেছে। এটি বাদাম, ওট, নারিকেল বা মটরশুঁটি যাই হোক না কেন, দুধের এই বিকল্পগুলো স্বাস্থ্যকর ডায়েট...

খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ছাত্র নেতাদের সাক্ষাৎ

দখিনের সময় ডেস্ক: বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে কুশল বিনিময় করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের। বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) সশস্ত্র বাহিনীর দিবস উপলক্ষ্যে সেনাকুঞ্জে আয়োজিত অনুষ্ঠান...

স্কলারশিপ-এ পাকিস্তানে পড়ার সুযোগ ১০০ বাংলাদেশি, প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন

দখিনের সময় ডেস্ক: বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য স্কলারশিপের অনুমোদন দিয়েছে পাকিস্তান। দেশটির প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ স্কলারশিপে ১০০ বাংলাদেশিকে পাকিস্তানে পড়ার সুযোগ দেওয়ার বিষয়টির অনুমোদন দিয়েছেন। সংবাদমাধ্যম...

Recent Comments