Home শীর্ষ খবর বরিশালে সাংবাদিক বিরোধী প্রবনতা বিষবৃক্ষে পরিনত হয়েছে

বরিশালে সাংবাদিক বিরোধী প্রবনতা বিষবৃক্ষে পরিনত হয়েছে

আলম রায়হান:
বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজে ২৬ আগস্ট সাত সাংবাদিককে পিটানো হয়েছে। যা বিশেষ ইঙ্গিতবহ। পাশাপাশি প্রকটভাবে ফুটে উঠেছে সাংবাদিক সমাজের দৈন্যতা, ডাক্তারদের নগ্ন চরিত্র এবং চিকিৎসা ব্যবস্থায় চরম বিশৃংখলা ও অদক্ষতা। উল্লেখ্য, সাংবাদিক পিটানোর ঘটনার খলনায়ক দুইজন সহযোগী অধ্যাপক। নিশ্চয়ই তারা ডাক্তার হিসেবে রোগীদের চিকিৎসাও দিয়ে থাকেন। কিন্তু তারা আসলে চিকিৎসার নামে কী করেন? এ প্রশ্ন উঠতেই পারে।
এদিকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কোন ধরণের চিকিৎসা দেয়া হয় তার বহু নমুনা আছে। এর মধ্যে সাম্প্রতিক ঘটনা হচ্ছে ঘাড়ে সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া শিশুর তলপেটে ‘সফল’ অপারেশন করা। এই শ্রেনীর ডাক্তাররা সাংবাদিক পিটালে তাকে খুব বড় কোন অঘটন হিসেবে বিবেচনা করা যায় কিনা সেটিও একটি বড় প্রশ্ন হিসেবে বিবেচিত হতেই পারে।
কেবল বরিশাল বলে কথা নয়, সারা দেশেই সাংবাদিকদের উপর হামলার ঘটনা বেড়েছে। বরিশালের প্রবচন অনুসারে ‘আলে গোনে কলে গেলে’ অথবা প্রচলিত প্রবচন, পান থেকে চুন খষলেই ‘পিটা সাংবাদিক।’ এই ধারায় নেতা-পাতা-ছাতা-আমলা-কামলা-ডাক্তার-মোক্তার-চাকর-বাকর, সবাই সামিল। এককাট্রা, এক জোট। একেবারে হরিহর আত্মা। আর সাংবাদিক পিটানো, হত্যা করা, গুলী করে চিরতরে পঙ্গু করে দেয়া- এইসব চলে আসছে লাগাতরভাবে, বহু আগে থেকে। যত দিন যায় ততই বাড়ছে এর তীব্রতা। সঙ্গে যোগ হচ্ছে নতুন নতুন মাত্রা এবং বাড়ছে সাংবাদিক সমাজ ও সাংবাদিক নেতাদের নীরবতা। তাঁরা যেনো মুক ও বধির। অথবা নির্বাক চলচিত্রের একএকটি চরিত্র। অথবা পেশাগত প্রাচিন কালের খোজা।
এদিকে কারোকারো ধারণা, সাংবাদিকরা বোবা প্রাণী হয়েগেছে। মাঠে কেউ গরু পেটালে মুরব্বীরা বলেন, ‘এই তুমি বোবা প্রাণীটা মারো কেন!’ কিন্তু সাংবাদিকদের বিষয়ে এমনটা বলারও যেনো কেউ নেই। কেউ কিছু বলে না। তবে সাংবাদিক নেতাদের ব্যাপারে অনেক কথাই বলা হয়। যা সবার ব্যাপারে সত্য না হলেও কারোকারো ব্যাপারে নিশ্চয়ই সত্য। ঐ যেমন কথা আছে না, ‘সকলেই কবি নয়, কেউকেউ কবি।’ তেমনই সাংবাদিক নেতাদের কেউ কেউ যত না সাংবাদিক তার চেয়ে অনেক বেশি ধান্ধাবাজ। অথবা অন্য ধান্ধায় থাকা মানুষগুলো সাংবাদিক নেতার জার্সি পরে আছেন। ছাগল অথবা উল্লুক হরিন সাজার মতো। এদের কারণে দুষিত হতেহতে গণমাধ্যম সংকটের চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। আর এই দূষণের জন্য যারা দায়ী তাদের মধ্যে এমন ব্যক্তিও আছেন যাদেরকে সাগরে চুবিয়ে মারলে খুন মামলার আগে হয়তো হবে, সাগর দুষণের মামলা।
উপরে-নীচের-ভিতরে দুষণের ফলে পরিস্থিতি এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে যাতে গণমাধ্যম এখন প্রায় ফোকলা। এর নানান ধরনের কুফলের মধ্যে একটি হচ্ছে সাংবাদিক পিটানোর বিষয়টি খুবই মামুলী ব্যাপার হয়ে যাওয়া। এবং এর কোন কার্যকর প্রতিবাদ নেই। চলমান দৈন্যদশার সূচনা হয়েছে এই সেক্টরে ইদুর চরিত্রের কতিপয় মালিকের অনুপ্রবেশ এবং কতিপয় অসাংবাদিকের সাংবাদিক নেতা হয়ে ওঠার মচ্ছবের ফলশ্রুতি। এদিকে পেশাদার সাংবাদিকরা অনেকটা লাজুক পান্ডার মতো গুটিয়ে থাকার অবস্থায় আছে। তারা একএকজন বিচ্ছিন্ন দীপ। যে বিষয়টি আর একবার প্রমানিত হলো ২৬ আগস্ট বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দুই সহযোগী অধ্যাপকের সক্রিয় অংশগ্রহনে সাত সাংবাদিকের উপর হামলার ঘটনায়। এবং রহস্যজনকভাবে সমস্যার ‘মিটমাট’ হয়েগেছে ঘটনাস্থলেই। এ হামলার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কর্তৃপক্ষ মৌখিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেছেন। আর এটি মেনে নিয়েছেন বরিশালের সাংবাদিক সমাজ। এর আগে ঘটনাস্থলে বরিশালে সাংবাদিক নেতা হিসেবে পরিচিত দু’জন টেলিভিশনে ব্যক্ত করেছেন সাবধানী প্রতিক্রিয়া। আর সাংবাদিকদের উপর হামলার পাঁচ দিনের মাথায় ৩০ আগস্ট নগরীর মহাত্মা অশ্বিনীকুমার টাউন হলের সামনে সুশীল মানববন্ধন করেছে বরিশাল সাংবাদিক ইউনিয়ন। যা কারোকারো বিবেচনায় দাফনের পর জানাজা পড়ার মতো বিষয়।
এরপরও স্বপন খন্দকারকে অনেকেই ধন্যবাদ দিতে চান। কারণ কাক স্নানের মতো হলেও তিনি একটা প্রতিবাদের আয়োজন করেছেন। প্রতিবাদের এই ধারায় কেন্দ্রীয় সাংবাদিক নেতারা বরিশালে স্বশরীরে সামিল হয়েছেন ৯ সেপ্টেম্বর। কেন্দ্রীয় নেতাদের এই উপস্থিতি বরিশাল সাংবাদিক ইউনিয়নের প্রতিবাদের ধারাকে আরো শক্তিশালী করবে, এতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু তা কতদূর যাবে? এ প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যাচ্ছে। কারণ, বরিশালে সাংবাদিকতা বিরোধী প্রবনতা ক্রমান্বয়ে বড় হতে হতে বেশ আগেই বিষবৃক্ষে পরিনত হয়েছে।
এ মানববন্ধনে অন্যান্য সাংবাদিক সংগঠনের পরিচিত মুখগুলো দেখাগেছে। তাও যেনো দূর সম্পর্কের কারো জানাযায় অংশগ্রহণ করার মতো। উল্লেখিত মানববন্ধন থেকে বিচার চেয়ে ১০ দিনের আল্টিমেটামের আওয়াজ দেয়া হয়েছে। কিন্তু এই আল্টিমেটামের ফলাফল কারো বুঝতে আর বাকী থাকার কথা নয়। আর এও বোঝাগেছে, সাংবাদিক পিটালে কার্যকর প্রতিবাদ করার মতো এখন আর কেউ নেই। এ কারণেই হয়তো অকাল মৃত্যুর অর্ধযুগ পেরিয়েও কথায় কথায় বরিশালের সাংবাদিকরা এখনো লিটন বাশারকে স্মরণ করেন। কিন্তু এই স্মরনের চেতনা ধারণ করার মতো সাংবাদিক নেতা হয়তো বরিশালে কমেগেছে। অথবা আকাল চলছে। এদিকে কেউ কেউ বলেন, ছোটখাটো ক্ষমতা কেন্দ্রের অবিচারের প্রতিবাদ করার ক্ষমতা এখন আর বরিশালের সাংবাদিক নেতাদের নেই। অথচ বছর দশেক আগেও বরিশালের দৃশ্যপট ভিন্ন ছিলো। এ ব্যাপারে একটি ঘটনা এখনো অনেকেরই স্মরণে আছে।
শব্দ: ৬৬৮

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

শিবিরের ঢাবি শাখার পূর্ণাঙ্গ কমিটির ঘোষণা শিগগিরই: শিবির সভাপতি

দখিনের সময় ডেস্ক ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলাম বলেছেন, দু-একদিনের মধ্যে সেক্রেটারিসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শাখার পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হবে। গতকাল শনিবার রাতে গণমাধ্যমকে...

সাবেক অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মেহেদী হাসান গ্রেপ্তার

দখিনের সময় ডেস্ক সাবেক অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার মেহেদী হাসান চৌধুরীকে রাজধানীর আদাবর থানার একটি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। আজ রবিবার রাজধানীর...

শিশুর বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার

দখিনের সময় ডেস্ক: কক্সবাজারের টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপে বাড়ির সামনে থেকে তাহমিনা আক্তারের (৭) নামে এক শিশুর বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) রাত...

স্ত্রীকে কুপিয়ে হত্যা, থানায় এসে স্বামীর আত্মসমর্পণ

দখিনের সময় ডেস্ক: রাজধানীর পল্লবীতে শামসুন্নাহার (৫২) নামের এক নারীকে নিজ হাতে বটি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছেন তার স্বামী। ঘাতক স্বামীর নাম মোখলেছুর রহমান (৫২)।...

Recent Comments