বাণিজ্যের বাহানায় ভারতবর্ষ দখল করেছে ব্রিটিশরা, হেটেছে কৌশল-ষড়যন্ত্রের-নির্যাতনের পথে

দখিনের সময় ডেস্ক:

বানিজ্যের বাহানায় ভারতবর্ষ আসা ব্রিটিশদের প্রথমে বাংলা এবং পরে পুরো উপমহাদেশ দখল করে নেয়। এ জন্য প্রধান কৌশল ছিলো নানান ষড়যন্ত্র এবং বিভাজনের মাধ্যমে বিভিন্ন র্েমর মানুষের মধ্যে সাম্ট্রদায়িকতা ছড়িয়ে দেয়া। আবার কৌশলী পথেও হেটেছে ব্রিটিশ রাজ।

বাংলার নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে ষড়যন্ত্র করে মেরে ফেলার ষড়যন্ত্রকারী কেরানি থেকে গভর্নর বনে যাওয়া লর্ড ক্লাইভ দিল্লির বাদশাহ শাহ আলমের কাছ থেকে বাংলা-বিহার-ওড়িশার দেওয়ানি লাভ করেন। এরপর নবাবের হাতে থাকে প্রশাসনিক দায়িত্ব, আর রাজস্ব আদায় ও ব্যয়ের পূর্ণ কর্তৃত্ব পায় কোম্পানি। এতে বাংলার নবাব আসলে ক্ষমতাহীন হয়ে পড়েন আর এ সুযোগে কোম্পানির লোকেরা খাজনা আদায়ের নামে চালায় অবাধ লুণ্ঠন, শুরু করে অত্যাচার।

ইতিহাস বলে, ব্রিটিশদের কারণেই ভারতবর্ষের মানুষ কখনো তিতুমীরের বাশেঁর কেল্লায়, কখনো মিরাটের বন্দিশালায়, কখনো বাহাদুর শাহ পার্কে, কখনো অমৃতসরের বাগানে আবার কখনো দিল্লির রাজপথে বন্দুকের গুলি খেয়ে অকাতরে প্রাণ দিয়েছেন, আবার ক্ষুদিরাম হয়ে ফাঁসির মঞ্চে দাঁড়িয়েছেন। ব্রিটিশরা মুসলমান সৈন্যদের দিত শূকরের চর্বি থেকে তৈরি কার্তুজ আর হিন্দু সৈন্যদের দিত গরুর চর্বি থেকে তৈরি কার্তুজ। রাইফেলে লোড করার আগে দাঁত দিয়ে কামড়ে এগুলো খুলতে হতো।

বিষয়টি জানার পর জ্বলে ওঠে উভয় ধর্মের সৈন্যরা। শুরু হয় সিপাহি বিদ্রোহ। যেটি জনগণের ব্যাপক সমর্থন পেলেও দেশীয় দালালদের সাহায্য নিয়ে জয়ী হয়ে যায় ব্রিটিশরা। এরপর সৈন্য, সাধারণ মানুষকেও পাইকারি হারে হত্যা করে, গাছে ঝুলিয়ে ফাঁসি দেয়, ভীতি সৃষ্টি করতে রাস্তার পাশে লাশ ঝুলিয়ে রাখে। পলাশীর প্রহসনমূলক যুদ্ধের মধ্য দিয়ে উপমহাদেশের ওপর আধিপত্য বিস্তার করার পর এই শাসনক্ষমতা ধরে রাখাটাই ইংরেজদের মূল চিন্তা ছিল। যার প্রধান শিকার হয়েছিল মুসলিম জনগোষ্ঠী। কারণ, জমিদার হিসেবে ব্রিটিশরা বসাতেন তাদের যারা ক্ষমতার আশায় ব্রিটিশদের গোলামে পরিণত হয়েছিল।

ব্রিটিশদের হয়ে সাধারণের ওপর চালাতেন নির্মম অত্যাচার। যার সহজ উদাহরণ ব্রিটিশদের গোলাম অর্থাৎ জমিদারদের বাড়ির সামনে দিয়ে জুতা পায়ে হেঁটে গেলে সাধারণ মানুষকে চাবুকপিটা খেয়ে আধমরা হতে হতো। যা নিয়ে কোনো মানুষ মুখ খুলতে পারত না। গোলামরাই যদি এতটা করেছে। তাহলে ব্রিটিশরা কী করেছে তা সহজেই অনুমানযোগ্য। এ ছাড়া ধর্মীয়, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও শিক্ষাগত সব দিক দিয়েই মুসলিমরা হয় ব্রিটিশদের প্রথম শিকার। চেষ্টা করা হয় মুসলিমদের শিক্ষাব্যবস্থাকে পঙ্গু করে দেয়ার। একসময় পুরো বিশ্বের প্রায় সকল দেশই শাসন ও লুনঠন করত ইংল্যান্ড। মূলত শাসন নয় শোষণ। ভারতবর্ষও তার ব্যতিক্রম ছিল না। যার সঙ্গে মিশে আছে দুঃখগাথা অধ্যায়।