জুবায়ের আল মামুন:ও মোহাম্মদ আসিফ মল্লিক:
“আমার দাদা-দাদী-মা-বাবার কবর রায়পাশায়। মহান আল্লাহ কবুল করলে এই রায়পাশায়ই আমার কবর হবে। রায়পাশাই আমার ঠিকানা। আমি কারো সঙ্গে মারামারি-সংঘাতে নেই।” বরিশালের রাজনীতিতে চলমান কঠিন সময়ে এ কথা বলেছেন বরিশাল সদর উপজেলার ১নং রায়পাশা কড়াপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আহমেদ শাহরিয়ার বাবু। তিনি ভিন্ন ধরনের এক ইউপি চেয়ারম্যান। ধীরে বাইক চালান, চলতি পথে কেউ তাঁকে আগে সালাম দিতে পারে না। তিনিই সালাম দেন। শিশুদের কাছে তিনি খুবই প্রিয়। চলতি পথেও তিনি শিশুদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। ছোট ছোট বাবুরা তাকে ‘বাবু’ বলেই ডাকে।
রাজনৈতিক জীবনে আহমেদ শাহরিয়ার বাবু পেরিয়ে এসেছেন ৪০ বছরের কঠিন সময়। নির্বাচনেও তাঁকে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হয়েছে। বিদ্রোহী প্রাথী ছিলেন তাঁর দলেই দুই জন। সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান খোকন এবং মিজানুর রহমান জাকির চৌধুরী। আরো ছিলেন জামায়াত ঘরানার শক্ত প্রার্থী, তিন আওয়ামী লীগারে গুতাগুতিতে বিজয়ের প্রায় দোড়গোড়ায় পৌছেছিলেন জামায়াত নেতা।
ইউপি চেয়ারম্যান হবার পরও শাহরিয়ার বাবুর পরিচিতি প্রধানত ‘জিএস বাবু’ হিসেবেই। আওয়ামী রাজনীতির কঠিন সময় তিনি ছাত্র লীগের প্রার্থী হিসেবে নগরীর খ্যাতনামা সৈয়দ হাতেম আলী কলেজের জিএস নির্বাচিত হয়েছেন। এর পর অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে জেল-জুলুম-অত্যাচার-পুলিশী নির্যাতন সহ্য করে এমন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন যে ইউনিয়নের মোল্লার দোকানের মসজিদের আওয়ামী লীগের তরফ থেকে ইফতারি গ্রহনেও অনীহা ছিলো রাজনীতির বৈরী সময়ে। পরে ‘বাবুর ভাইর’ ইফতারী বলে বিতরণ করা সম্ভব হয়েছে। ইউপি চেয়ারম্যান শাহরিয়ার বাবুর সঙ্গে দৈনিক দখিনের সময় প্রতিনিধির কথা হয় ২৫ জানুয়ারি তার কার্যালয়ে। প্রথমেই আওয়ামী রাজনীতিতে তাঁর অবস্থান বদলের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমি তো অবস্থান বদল করিনি। আমি নৌকার লোক, নৌকার লোক হিসেবেই আছি!
প্রশ্ন: আপনার পরিচিতি তো ছিলো সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর ঘনিষ্ঠ লোক হিসেবে। নির্বাচনের সময় দেখা গেলো আপনি মন্ত্রী শিবিরে…। এ কী কেবলা বদল নয়?
উত্তর: বিষয়টি এ রকম নয়। আওয়ামী লীগের প্রতীক নৌকার উপর ব্যক্তিগত সম্পর্ক প্রাধান্য পেতে পারে না। আমি আওয়ামী লীগ করি, আওয়ামী লীগের প্রতীক নৌকার প্রার্থী হিসেবে জনগন আমাকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করেছেন। আমি সংসদ নির্বাচনে কী ভাবে নৌকার বিরুদ্ধে অবস্থান নেব! সঙ্গে একটি কথা বলে রাখা প্রয়োজন, এবারের নির্বাচনে বরিশাল সদর আসনের নৌকার প্রার্থী কর্নেল জাহিদ ফারুক শামীম সিটিং এমপি ছিলেন। প্রতিমন্ত্রী এবং সদরের এমপি হিসেবে তিনি বিতর্কের উর্ধে থেকে মানুষের জন্য কাজ করেছেন। ২৯ ডিসেম্বর বরিশালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মঞ্চে আমাকে ওঠার সুযোগ করে দিয়েছেন। আমার বিগত ৪০ বছরের রাজনৈতিক জীবনে এমনটি কখনো ঘটেনি। ফলে তাঁর প্রতি তো আমার ব্যক্তিগত কৃতজ্ঞতা ও শ্রদ্ধা থাকবেই। আমি মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়ের সাথে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় আছি, ছিলাম এবং থাকবো ইশাল্লাহ।
প্রশ্ন: ৭ জানুয়ারির ভোট কেন হলো?
উত্তর: সবাই দেখেছে, বিএনপির বর্জন সত্ত্বেও দেশবাসীর আগ্রহ ছিলো এই নির্বাচন নিয়ে। যা ৭ জানুয়ারি প্রমানিত হয়েছে। ৪১ শতাংশ ভোট পড়েছে।
প্রশ্ন: আপনি রায়পাশা স্কুল কেন্দ্রের দায়িত্বে ছিলেন। ওই কেন্দ্রে কত শতাংশ ভোট কাস্ট হয়েছে?
উত্তর: প্রায় শতভাগ। কাস্টকৃত ১১৩৪ ভোটের মধ্যে নৌকা প্রতীক পেয়েছে ১০১৩ ভোট।
প্রশ্ন: বলেন কি! জাল ভোট……?
উত্তর:
নো ওয়ে…! কোন সুযোগ ছিলো না। ভোট দিতে আমার আঙ্গুলেও কালি লাগাতে হয়েছে।