নির্বাচন বর্জনের ক্ষেত্রে বিএনপির প্রবণতার কোনো কার্যকারণ অনেকেই খুঁজে পাচ্ছেন না। বিশেষ করে ৭ জানুয়ারির নির্বাচন কেন বর্জন করা হলো তা ধারণা করা কঠিন। তবে কেউ কেউ কিঞ্চিৎ ধারণা করছেন, নির্বাচন বর্জনের বিষয়টি বিএনপির জন্মগত প্রবণতা। যা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় একরকম বলা চলে, পাপ…! এ আলোকেইে মনে পড়েছে দাউদ হায়দারের কবিতা, ‘জন্মই আমার আজন্ম পাপ…’
ক্ষমতার মসনদে বিএনপির জন্ম। সামরিক শাসক জেনারেল জিয়ার মগজ-মনন থেকে উৎসারিত বিএনপিকে গণতন্ত্রের লেবাস পরানো হয়েছে। পিতলের মূর্তিতে সোনার প্রলেপ দেওয়ার মতো। হয়তো জন্মকালেই ধরে নেওয়া হয়েছিল, বিভিন্ন সময় নানান ধরনের প্রলেপ দিয়ে ক্ষমতায় থাকবে বিএনপি। এ জন্মকালীন প্রবণতা অথবা দোষের কারণে এ দলটি ক্ষমতার বাইরে থাকার বিষয়টি কোনোভাবেই গ্রহণ করতে পারে না। যে কারণে ক্ষমতার বাইরে গেলেই জলের বাইরের মাছের দশা হয় দলটির। ফলে নির্বাচনকে ক্ষমতায় যাওয়ার একমাত্র উপায় বলে ভাবতে মোটেই অভ্যস্ত নয়। নির্বাচনকে গ্রহণ করার প্রবণতার বিপরীতে চলে দলটি। এটি বারবার প্রমাণিত হয়েছে।
স্মরণ করা যেতে পারে, এ দলের প্রতিষ্ঠাতার আমলে প্রেসিডেন্ট এবং সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে ক্ষমতায় যাওয়া অথবা হারানোার সংশ্রব ছিল না। বরং দলটি তখন ক্ষমতায়। এরপর জেনারেল এরশাদ ক্ষমতা দখলের পরও নির্বাচন থেকে দূরে থেকেছে বিএনপি। আর এরশাদের আমলে দুটি সংসদ নির্বাচনের মধ্যে ’৮৬ সালের নির্বাচনটি ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগসহ বেশ কয়েকটি দল অংশ নিলেও শেষতক যায়নি বিএনপি। নির্বাচনে যাওয়ার ব্যাপারে দুই প্রধান বিরোধী দলের সমঝোতা হয়েছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে পিছিয়ে যায় বিএনপি। আর ’৮৮ সালের নির্বাচনে আ স ম রবের নেতৃত্বে রাজনীতির কতিপয় আবর্জনা অংশ নিলেও আওয়ামী লীগ-বিএনপি যায়নি। ফলে এ নির্বাচন কোনোরকম গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। ১৯৯০ সালে এরশাদ সরকারের পতনের পর ’৯১-এর নির্বাচনে অংশ নেয় বিএনপিসহ সব দল। এ নির্বাচনে বিএনপি বিজয়ী হয়। এটি সাদা চোখে দেখা খবর। কিন্তু নেপথ্যের খবর অনেক পরে জানা গেছে, ব্লুপ্রিন্টের আওতায় ক্ষমতার মসনদ নিশ্চিত করেই ’৯১-এর নির্বাচনে শরিক হয়েছিল বিএনপি।
বিএনপি সরকার মেয়াদ শেষের দিকে যখন দেখল নির্বাচনে আর মসনদ মিলবে না, তখন এরশাদের ’৮৮ সালের তরিকাকেও হার মানিয়ে ’৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি একটি মহা কেলেঙ্কারির নির্বাচন করল বিএনপি। কিন্তু এ নির্বাচন বিএনপিকে ক্ষমতার মসনদে রাখার বদলে বড় ধরনের বিপদে ফেলে দিল।
# বাংলাদেশ প্রতিদিন-এ প্রকাশিত ২১/১/২৯২৪। শীরোনাম, ‘জন্মকালীন প্রবণতায় বিএনপির বর্জন’