Home শীর্ষ খবর হিন্দু সম্প্রদায়ের সুরক্ষায় সংখ্যালঘু কমিশন গঠনের দাবি 

হিন্দু সম্প্রদায়ের সুরক্ষায় সংখ্যালঘু কমিশন গঠনের দাবি 

দখিনের সময় ডেস্ক:
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের ওপর বিভিন্নভাবে নির্যাতনের অভিযোগ ‍এনে হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্য সংখ্যালঘু কমিশন গঠন করার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট। আজ শুক্রবার (২ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ‍এক সংবাদ সম্মেলনে ‍এ দাবি জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাংলাদেশ হিন্দু মহাজোটের নির্বাহী মহাসচিব এবং মুখপাত্র পলাশ কান্তি দে।
হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্য সংখ্যালঘু কমিশন গঠন করার দাবি জানিয়ে বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের সভাপতি ড. প্রভাস চন্দ্র রায় বলেন, হিন্দু-মুসলিম বাংলাদেশের সমতলে একসাথে বাস করে। এই সম্প্রীতি আমরা দেখে আসছি। বিগত কয়েক বছর ধরে এ সম্প্রীতি নেই। ব্যক্তিগত স্বার্থ উদ্ধারের জন্য হিন্দুদের ওপর অত্যাচার করা হচ্ছে। পৃথিবীর সব দেশেই আমাদের ওপর নির্যাতন করা হচ্ছে। বাংলাদেশে আমাদের ওপর নির্যাতনের পরিমাণ অনেক বেড়ে গেছে। নির্বাচন আসলে আমাদের ওপর নির্যাতন বেড়ে যায়। দেশের বিভিন্ন স্থানে আমাদের সম্প্রদায়ের লোকজনের ওপর নির্যাতন চালানো হয়েছে। আমরা নির্বাচনকালীন সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের নির্যাতনের বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি করছি।’ প্রধানমন্ত্রীর প্রতি অনুরোধ জানিয়ে ড. প্রভাস চন্দ্র বলেন, ‘যত দ্রুত সম্ভব বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের বিচারের আওতায় এনে শাস্তি প্রদান এবং এ সমস্যা নিরসনে সংখ্যালঘু কমিশন গঠনের দাবি জানাই।’
লিখিত বক্তব্যে পাঠকালে পলাশ কান্তি দে বলেন, ‘এদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন একটা নিয়মিত প্রক্রিয়া যা নির্বাচন এলে বহু গুণে বেড়ে যায়। আপনারা জানেন বিগত দিনে সংসদ নির্বাচনের আগে ও পরে সংখ্যালঘু ভোটারদের ভয়ভীতি প্রদর্শন ও তাদের স্থাপনায় আঘাত করা হয়েছে। এবার যেহেতু নির্বাচন নিয়ে পক্ষ-বিপক্ষ হচ্ছিল তাই আমরা আশঙ্কা করেছিলাম পূর্বের নির্বাচন কালীন সহিংসতার পুনরাবৃত্তি হতে পারে। পরাজিত প্রার্থী ভোট দেয়নি এই অজুহাতে আমাদের মঠ-মন্দির, ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা করতে পারে। তাই আমরা গত ১১ নভেম্বর একটি সংবাদ সম্মেলন করে সরকারের কাছে দাবি করেছিলাম যে সংখ্যালঘু হিন্দু ভোটারদের নির্বিঘ্নে ভোটকেন্দ্রে যাওয়া, আমাদের মঠ-মন্দির, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, নারী, ঘরবাড়ির নিরাপত্তা এবং প্রতিমা ভাঙচুর না হয় সেদিকে লক্ষ রেখে নিরাপত্তা প্রদান করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘কিন্তু নির্বাচনের পরে সিরাজগঞ্জ, বাগের হাট, ফরিদপুর, মাগুরা, চুয়াডাঙ্গা, গাইবান্ধা, কুমিল্লার দাউদকান্দি, ঝিনাইদাহ, পিরোজপুর, মাদারিপুর, ঠাকুরগাঁও, মুন্সিগঞ্জ, কুষ্টিয়া, লালমনিরহাটসহ দেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলায় ভোট দেয়নি এই অজুহাতে নির্বিচারে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন করা হয়েছে। আমরা দেখলাম যেসব অঞ্চলে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হয়েছে সেখানে পরাজিত প্রার্থী হিন্দু সম্প্রদায়ের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ঘরবাড়ি, মাছের ঘের লুট ও হত্যার মতো ঘটনা ঘটেছে।’
লিখিত বক্তব্য বলা হয়, এখনো পর্যন্ত অনেক জায়গায় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন ভয়ে এলাকা যেতে পারছে না। কোন কোন জেলায় পরাজিত প্রার্থী এবং আবার কোন কোন জেলায় বিজয়ী প্রার্থীও একই অজুহাতে এই নির্যাতনের সাথে জড়িত। সেটা হোক নৌকার প্রার্থী হোক স্বতন্ত্রপ্রার্থী। সরকারের নিরাপত্তা দানে ব্যর্থতার কারণে এবার হিন্দু নির্যাতন হয়েছে। আমরা মনে করি এই নির্যাতন আরও বহগুণে বেড়ে যেত যদি প্রত্যেকটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিপূর্ণ নির্বাচন হতো। সংসদ নির্বাচনের পরেও এখনো বিভিন্ন জায়গায় হিন্দু নির্যাতন চলছে। নির্বাচন পরবর্তী সহিংসহিতা বন্ধের দাবি জানাচ্ছি।
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, নির্বাচনের আগে থেকে যে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর যে নির্যাতন চলছিল নির্বাচনের পরে তা ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। নির্বাচনের পরেই ঝিনাইদহের বরুন হত্যা এবং পিরোজপুরের স্বরূপকাঠির শেখর কুমার এর হত্যা নিরপেক্ষ তদন্ত চাই। এই ধরনের হত্যা বন্ধের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। গত ৩০ জানুয়ারি লক্ষ্মীপুর জেলার রামপুরে পৌর মহাশ্মশান এর মেইন গেট ভেঙে প্রতিমা ভাঙচুর এবং যেখানে লাশ দাহ করা হয় সেই চুলা পর্যন্ত ভাঙচুর করা হয়েছে। অপরাধীদের বিচার না হওয়াই সংখ্যালঘু নির্যাতনের মূল কারণ। আমরা নির্বাচনকালীন সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের নির্যাতনের বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি করছি।
বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের সভাপতি ড. প্রভাস চন্দ্র রায়ের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সহসভাপতি প্রভাস চন্দ্র মণ্ডল, তপন হালদার, জগন্নাথ হালদার, সুনীল মালাকার, সমীর সরকার ফণিভুষণ হালদার, সুকুমার রায়, সাংগঠনিক সম্পাদক আশীষ বাড়ই, নন্দীতা ঘরামী, মাধুরী সরকার, সংগঠনের প্রধান সমন্বয়কারী পংকজ হালদার, সাংগঠনিক সম্পাদক মাধব দাস, হিন্দু ছাত্র মহাজোটের সভাপতি অনুপম দাস, সাধারণ সম্পাদক রাজিব সাহা প্রমুখ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

বিআরইউ’র সভাপতি আনিসুর, সম্পাদক খালিদ

নিজস্ব প্রতিবেদক : বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটির (বিআরইউ) সভাপতি আনিসুর রহমান খান স্বপন (নিউ এইজ / ঢাকা ট্রিবিউন) আর সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন খালিদ সাইফুল্লাহ (নয়া...

চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন গণপিটুনিতে নিহত তোফাজ্জল

দখিনের সময় ডেস্ক: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) শিক্ষার্থীদের গণপিটুনিতে নিহত মাসুদ কামাল তোফাজ্জলের জানাজা শেষে বরগুনার পাথরঘাটায় পারিবারিক কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে। শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) সকালে...

অতিরিক্ত ডিআইজি মশিউর গ্রেফতার

দখিনের সময় ডেস্ক: চট্টগ্রাম থেকে বাংলাদেশ পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি মশিউর রহমান গ্রেফতার হয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) তাকে আটক করা হয়। নিউমার্কেট থানার...

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতি নিষিদ্ধ

দখিনের সময় ডেস্ক: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্র, শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আজ বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী ফোরাম...

Recent Comments