এবারের সংসদ নির্বাচনে ‘সেই রকম’ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে একটানা চতুর্থবারের মতো ক্ষমতাসীন হয়েছে আওয়ামী লীগ। এটি ইতিহাসে একটি রেকর্ড সৃষ্টিকারী ঘটনা। কিন্তু এই রেকর্ডকে ছাপিয়ে প্রধান আলোচ্য, সংসদে ৬২ স্বতন্ত্র এমপি বসার অভূতপূর্ব রেকর্ড। আবার এ বিষয়টিকেও ছাপিয়ে যাওয়ার অবস্থা হয়েছে স্বতন্ত্র এমপিদের প্রতি অতি প্রত্যাশার পুষ্পবৃষ্টি দশা।
উল্লেখ্য, সংসদীয় নির্বাচনের ইতিহাসে এবারের সংসদে সর্বোচ্চসংখ্যক স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য এসেছেন। এক্ষেত্রে দ্বিতীয় অবস্থানে চলে গেছে সামরিক শাসক জেনারেল জিয়াউর রহমানের ’৭৯-এর রাবার স্ট্যাম্প সংসদ। সেই সংসদে স্বতন্ত্র ছিলেন ১৬ জন। এ সংখ্যা বেড়ে দ্বাদশ সংসদে চার গুণের চেয়ে মাত্র দুজন কম। আহারে, আর মাত্র দুজন হলেই এক অর্থে ষোলকলা পূর্ণ হতো। অই একটা গান আছে না, ‘এতো দিনে আশা হলো পূর্ণ…।’ এদিকে নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাঠে নামার বেলায় দ্বিতীয় জাতীয় নির্বাচনে ছিল এবারের নির্বাচনের কাছাকাছি। এ মিলের নেপথ্যে রয়েছে আরও একটি কৌশলগত বিষয়ের প্রভাব।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের প্রধান কুশীলব, নিদেনপক্ষে বেনিফিশিয়ারি জেনারেল জিয়াউর রহমানের প্রত্যক্ষ ব্যবস্থাপনায় অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচনের কৌশলগত লক্ষ্য ছিল আওয়ামী লীগকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখা। কিন্তু এই ফাঁদে পা দেয়নি নির্বাচনি রাজনীতির ‘ঘুঘু’ আওয়ামী লীগ। তবে এ নিয়ে অনেক টানাপোড়েন ও অনিশ্চয়তা ছিল। এ অবস্থায় বিপুলসংখ্যক স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচনে নামানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। কেউ কেউ নেমেছেন নিজের তাড়নায়, কাউকে নামানো হয় সরকারি ব্যবস্থাপনায়। কেউ কেউ আবার আগাম নেমে পড়েন নির্বাচনি মাঠে।
এদের কারও উদ্দেশ্য ছিল সংসদে যাওয়া, কারও লক্ষ্য ছিল নির্বাচনি খরচ হিসাবে সরকারে কাছ থেকে টাকা নেওয়া। কিন্তু ’৭৯ সালে সামরিক সরকারের চালের উল্টো চাল চেলে নির্বাচনে অংশ নেয় আওয়ামী লীগ। এরপরও অনেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়েছেন এবং চূড়ান্ত ‘বণ্টননামায়’ শেষতক স্বতন্ত্র হিসেবে সংসদে প্রবেশ করার সুযোগ পেয়েছেন ১৬ জন। সেই নির্বাচনে ক্ষমতাসীন বিএনপি পায় ২০৭ আসন এবং মাত্র ৩৯ আসন পেয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্ব প্রদানকারী আওয়ামী লীগ।
# বাংলাদেশ প্রতিদিন-এ প্রকাশিত, ১৬ ফেব্রুযারি ২০২৪।শিরোনাম, “অতি প্রত্যাশার স্বতন্ত্র এমপি এবং বাস্তবতা”