বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কল্পনার মিশেল দিয়ে ‘জুতা আবিষ্কার’ কাহিনি বর্ণনা করেছেন, কবিতায়। তবে জুতা আবিষ্কারের প্রকৃত কাহিনি মোটেই সেটি নয়। কবিগুরু সেটি বলতেও চাননি। তিনি আসলে যা বোঝাতে চেয়েছেন তা যুগে যুগে বিরাজমান। জুতা আবিষ্কারের ইতিহাস খুবই লম্বা। প্রায় ৪০ হাজার বছর আগে মানুষ জুতার ব্যবহার শুরু করেছিল। ১৭০০ শতকের দিকে কাঠের তৈরি খড়ম ভারতীয় উপমহাদেশে অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিল। তবে প্রথমে কী কারণে জুতা তৈরি হয়েছিল তা এখনো উদ্ধার করতে পারেননি গবেষকরা।
গবেষকরা জানিয়েছেন, ৫ হাজার ৫০০ খ্রিস্টপূর্বে পূর্ণাঙ্গ জুতা তৈরি হয়। আর্মেনিয়ার এরিনিয়া-১ নামক গুহায় ইতিহাসখ্যাত ওই জুতার সন্ধান পাওয়া গেছে। জুতা আবিষ্কারের প্রথমে দুই পায়ের জুতা এবং নারী-পুরুষের জুতা একই ধরনের ছিল। সভ্যতা যত বিকশিত হয়েছে ততই আধুনিক হয়েছে জুতাও। এ আধুনিকায়নের ধারা শুরু হয় অন্তত ৪০০ বছর আগে, যা আজও চলমান। আবার যুক্ত হয়েছে আধুনিকতার কুফলও। বলে রাখা ভালো, আজকের আলোচ্য মোটেই জুতা প্রসঙ্গে নয়। চটি জুতাও নয়। তবে চাইলে চটি জুতার ফিতার সঙ্গে আজকের প্রসঙ্গ মেলানো যায়। চটি জুতার ফিতা মানেই উপযোগহীন, অপ্রাসঙ্গিক বিষয়। নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর বক্তব্য শুনে চটি জুতার ফিতার কথা মনে পড়ছে। ১৭ ফেব্রুয়ারি গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে এমনটাই মনে পড়ল। তিনি বলেছেন, ‘নদীমাতৃক বাংলাদেশের ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য সরকার কাজ করছে। বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিরলস কাজ করে এ লক্ষ্যে অবদান রাখছে।’
চটি জুতার ফিতা যেমন উপযোগহীন, তেমনই নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রীর এ বক্তব্যও অর্থহীন। মাননীয় প্রতিমন্ত্রীকে কে বলবে, নদীমাতৃক বাংলাদেশের ঐতিহ্য ধরে রাখা নয়, প্রয়োজন নদী ধরে রাখা। আর এ কাজটিই হচ্ছে না। ফলে নদীমাতৃক বাংলাদেশের বেশির ভাগ নদীর অবস্থা করুণ। অস্তিত্বহীন হয়ে পড়ছে অনেক নদী।
# বাংলাদেশ প্রতিদিন-এ প্রকাশিত, ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪। শিরোনাম, “চটি জুতার ফিতা এবং মরা নদীর ঐতিহ্য”
লেখক : জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক