মামুনুর রশীদ নোমানী, অতিথি প্রতিকেদক:
অবৈধ ভাবে সম্পদ গড়াই যেন তার কাজ। তার চারদিকে টাকা আর জমি। রয়েছে বহুতল ভবন। রূপ কথার গল্পকেও হার মানিয়েছে সম্পদ গড়ার ক্ষেত্রে। বলছি বরিশালের লাচিন ভবনস্থ কর বিভাগের পরিদর্শী রেঞ্জ ও সার্কেল অফিসের উচ্চমান সহকারী মোঃ আবুল বাসার সবুজ ওরফে সবুজ মোল্লার কথা। কর অফিসের একাধিক কর্মচারী জানান, আবুল বাসার সবুজ যেন আরেক মতিউর।
সম্পদের পাহাড়
কাশিপুরে ৬ তলা ভবন,বাবুগঞ্জে দ্বিতল ভবন,আমানতগঞ্জে কোটি টাকার জমিসহ নামে বেনামে বরিশাল ও বাবুগঞ্জে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। ব্যাংকেও রয়েছে লাখ লাখ টাকা। সম্পদের যেন শেষ নেই।কেচোঁ খুড়তে সাপ বেড়িয়ে আসার মত। লিখিত আবেদন ও অনুসন্ধানে জানা গেছে, বাবুগঞ্জ উপজেলার দোয়ারিকা গ্রামের মৃত করিম মোল্লার ছেলে আবুল বাসার সবুজ ওরফে সবুজ মোল্লা। কর বিভাগে অফিস সহকারী হিসেবে চাকুরী নেয়ার পর থেকে পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তার।অল্প দিনে অফিস সহকারী থেকে হয়েছেন উচ্চমান সহকারী। ভাইদের পাঠিয়েছেন দুবাই ও সিঙ্গাপুরে ।দেশ ছাড়াও দুবাই ও সিঙ্গাপুরে রয়েছে সবুজের কোটি কোটি টাকা।তবে ভবন ও সম্পত্তি থাকার কথা স্বিকার করে সবুজ বলেন ,সম্পদ গড়াতো
বসবাস ৬ তলা অট্রালিকায়
সবুজ বর্তমানে নগরীর ২৯ নং ওয়ার্ড কাশিপুর এলাকায় ৬ তলা অট্রালিকা নির্মান করে বসবাস করছেন। মতিউরের পুত্রের মত পাখি পালনও তার সখ।সখ করে ভবনে সুইমিংপুল স্থাপনের কথাও জানালেন। আবুল বাসার সবুজ এর পিতা করিম মোল্লা আয় কর অফিসে নাইট গার্ড পদে চাকুরী করতেন। অফিসের দায়িত্ব পালন করা অবস্থায় তিনি মারা যায়। পরে অফিস কর্মকর্তাদের মানবিক কারণে পিতার চাকুরীর অনুকূলে সবুজ ওই অফিসে চাকুরী পায়। চাকুরী পাওয়ার পরেই করদাতাদের ফাইলের ত্রুটি বিচ্যুতি ধরে ঘুষ বানিজ্যে মেতে উঠেন। দু হাত ভরে কামাই করছেন ঘুষের টাকা।আর এসব টাকা নিয়ে গড়েছেন একাধিক ভবন।ক্রয় করেছেন জমি।মেতে থাকেন আনন্তে -সানন্দে।
করদাতাদের অভিযোগের অন্ত নেই
সবুজের বিরুদ্ধে করদাতাদের অভিযোগের অন্ত নেই। প্রতিটি ফাইল থেকে ঘুষ নেয়ার অভিযোগ রয়েছে।ঘুষ না দিলে সেসব ফাইল অডিটে পাঠানোর হুমকি দিয়ে কৌশলে করদাতাদের থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়। এভাবেই কোটি কোটি টাকার সম্পদ গড়েছেন সবুজ মিয়া। কর অফিসের অসৎ কর্মকর্তাদের ডিম পাড়া হাস যেন সবুজ। ফাইল ঢিল করে করদাতাদের থেকে টাকা হাতানোই যেন সবুজের কাজ। করদাতারা অহেতুক ঝামেলা এড়ানোর জন্য সবুজের চাহিদা মোতাবেক ঘুষ দিয়ে চলে যান। কর অফিসে চাকুরী করার সুবাদে সবুজের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলার সাহস রাখেনা। সবুজ দম্ভোক্তি করে বলেন কত দেখলাম। আমাদের দুদকও কিছুই করতে পারবেনা তারাই আমাদের কাছে আটকা।সবুজের সহায় সম্পদ গড়ার ব্যাপারে কাশিপুর এলাকার রানা বলেন,একজন পিওন কিভাবে শত কোটি টাকার মালিক হয়।কিভাবে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে অট্রলিকা গড়ে। তিনি তাজ্জব হয়ে যান সবুজের গাড়ি,বাড়ি ও সম্পদ দেখে। রানা বলেন,দুদক সবুজের সহায় সম্পদ তদন্ত করলেই থলের বিড়াল বেড়িয়ে আসবে।
ফুর্তি করতে গিয়ে বিয়ের
ফাঁদে, অতপর তালাক
বিয়ের ক্ষেত্রে মতিউরের চেয়ে এক ধাপ এগিয়ে। বিয়ে করেছেন তিনটি। চাকুরীর পাওয়ার পরে টাকার গরমে মোসা: মাহামুদা আক্তার (মনি) কে নিয়ে ফুর্তি করতে গিয়ে স্থানীয়দের রোষানলে পরে সবুজ। নানান ঘটনার পর সবুজকে নিয়ে একাধিকবার শালিস-মীমাংসা হয়েছে। পরে মনিকে ২০০৮ সালের ২৮ মে বিয়ে করতে বাধ্য হয় মোঃ আবুল বাসার সবুজ । নগরীর ১০ নং ওয়ার্ডের কাজী অফিসে সবুজ ও মনির বিয়ে হয়। তারা নগরীর জর্ডন রোডে ভাড়ার বাসায় সংসার শুরু করেন। পরে কৌশলে সবুজ তালাক দেয় মনিকে।
প্রথম বিয়ের ঘটনা গোপন রেখে হিমু নামের এক যুবতীকে বিয়ে করে। বর্তমানে তাদের সংসারে ২টি মেয়ে রয়েছে। নগরীর চাঁদমারী এলাকায় একটি ভাড়া বাসা নেয়। এ এলাকায়ও এক নারীর সাথে সবুজ পরকিয়া প্রেমের ফুর্তি করার সময় স্থানীয়দের হাতেনাতে ধরা পরে। উত্তেজিত এলাকাবাসির চাপে সবুজ চাঁদমারীর ভাড়ার বাসা ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। পরে নগরীর পেষ্কার বাড়ি এলাকায় একটি বাসা ভাড়া নেয়। এবং যৌথ পরিবার নিয়ে বসবাস শুরু করে।
এখানে বসেও নগরীর বটতলা এলাকার এক বিধবা নারীর সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠলেও তা ভেঙ্গে যায়। স্ত্রী ও সন্তান থাকার পরও স্ত্রী নেই সবুজ এ তথ্য দিয়ে নগরীর ২৯ নং ওয়ার্ড কাজী অফিসে আরও একটি বিয়ে করেন।
নগরীর কালিবাড়ী রোডের বাসিন্দা বদিউজমান এর মেয়ে মোসা: সেলিনা ওরফে মিলনকে ২০১৮ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর বিয়ে করেন সবুজ। বিষয়টি মেনে নিতে পারেনি মিলনের পরিবার। কারণ মিলনের ছোট জামাইয়ের বয়সী হল সবুজ। একপর্যায় পারিবারিক চাপে নাম মাত্র তাদের দু’জনের তালাক হলেও এখনও সম্পর্ক চলমান রয়েছে বলে জানা গেছে। মিলনকে বিয়ে করে তার থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়ারও অভিযোগ উঠেছে সবুজের বিরুদ্ধে। একাধিক বিয়ে করার পরই সবুজ গ্রামের বাড়িতে নির্মাণ করেছে দৃষ্টি নন্দন ২য় তলা ভবন, নগরীর কাশিপুর এলাকায় ৬ তলা ভবন, আমানতগঞ্জ এলাকায় ক্রয় করেছেন জমি।
এছাড়া নামে বে-নামে রয়েছে সম্পত্তি। সকলকে ভাই-বোনের সম্পত্তি বলে জানান দেয় সবুজ। এ বিষয়ে আবুল বাসার সবুজ জানান, বিয়ের বিষয়গুলো সত্য। যা আমার আত্মীয়-স্বজনরাও জানেন। সম্পদের বিষয়ের বলেন তার দু’ভাই সিঙ্গাপুর ও দুবাই দেশে আছে।