দখিনের সময় ডেক্স:
স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যা ছাড়াও পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) আকরাম হোসেনের হত্যাকাণ্ডেও সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততার চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। এসআই আকরামের স্ত্রী বনানী বিনতে বশির ওরফে বহ্নির সঙ্গে পরকীয়া প্রেম ছিল বাবুল আক্তারের।
বিষয়টি নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে বাবুল আক্তারের পরিকল্পনায় আকরাম হোসেনকে হত্যা করা হয় বলে তার পরিবার দাবি করেছে। স্ত্রীর পরকীয়ার বলি হন এসআই আকরাম। এই হত্যাকাণ্ডেরও তদন্ত শুরু করেছে পিবিআই।
এসআই আকরামকে ঠান্ডা মাথায় হত্যা করা হয়েছে। হত্যার পর এসআই আকরামের দুলাভাই অ্যাডভোকেট জে এম রশিদ কোর্টে মামলা করেন। আদালত শৈলকুপা থাকায় এজাহার গ্রহণ করার নির্দেশ দেন। কিন্তু থানা মামলা গ্রহণ করেনি। বাবুল আক্তার ক্ষমতার অপব্যবহার ও অর্থের বিনিময়ে থানা ম্যানেজ করেন। যার ফলে আদালতের আদেশের পরও মামলা নেওয়া হয়নি।
এসআই আকরামের বোন জান্নাত আরা পারভিন জানান, খুলনায় বাবুল আক্তারের বাবা পুলিশে এবং তার নিহত ভাইয়ের স্ত্রী বনানী বিনতে বহ্নির বাবা বসির উদ্দিন বিআরডিবিতে চাকরি করতেন। তারা পাশাপাশি বাসায় থাকতেন। সেই সুবাদে বাবুল আর বহ্নির মধ্যে সম্পর্ক তৈরি হয়। এরই মধ্যে ২০০৫ সালের ১৩ জানুয়ারি তার ভাই আকরামের সঙ্গে বহ্নির বিয়ে হয়। অন্যদিকে চট্টগ্রামে খুন হওয়া মাহমুদা খানম ওরফে মিতুকে বিয়ে করেন বাবুল আক্তার। জান্নাত দাবি করেন, বিয়ের পরও বাবুল আর বহ্নির মধ্যে যোগাযোগ ছিল।
জান্নাত আরা পারভিন অভিযোগ করেন, ২০১৪ সালের ২৮ ডিসেম্বর আকরামকে যমুনা সেতু হয়ে ঢাকায় যাওয়ার পরামর্শ দেন বহ্নি। আর বাবুল আক্তার পথে সন্ত্রাসী ভাড়া করে রাখেন। এরপর ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলায় মহাসড়কে মুমূর্ষু অবস্থায় আকরামকে উদ্ধার করা হয়। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিত্সাধীন অবস্থায় ২০১৫ সালের ১৩ জানুয়ারি তিনি মারা যান। সেখান থেকে ময়নাতদন্ত ছাড়াই তার স্ত্রী বহ্নি লাশ বুঝে নেন। ঝিনাইদহ শহরে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। ময়নাতদন্ত ছাড়া লাশ নেওয়ার বিষয়টি তারা জানতেন না।
জান্নাত আরার অভিযোগ, আকরামের শ্বশুর একমাত্র জামাইয়ের জানাজায় অংশ না নিয়ে মেয়েসহ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বাবুল আক্তারের মাগুরার বাড়িতে ওঠেন। পরে আদালতের নির্দেশে কবর থেকে এসআই আকরামের লাশ উত্তোলন করে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ময়নাতদন্তের কাজ সম্পন্ন হয়। ঐ সময় বাবুল আক্তার আন্তর্জাতিক শান্তি রক্ষা মিশনে একটি দেশে ছিলেন। ময়নাতদন্তের খবর পেয়ে তিনি জরুরি ভিত্তিতে এক মাসের ছুটিতে দেশে ফিরে আসেন। প্রেমিকা বহ্নিকে নিয়ে ঢাকার একটি হোটেলে অবস্থান করেন। তখন চট্টগ্রামে তিনি তার স্ত্রী-সন্তানের কাছে যাননি বলে পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়। ঢাকায় অবস্থান করে বাবুল আক্তার প্রভাব খাটিয়ে এসআই আকরামের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করেছেন বলে তার (এসআই আকরাম) পরিবারের অভিযোগ।
এসআই আকরাম হোসেনের পরিবার অভিযোগ করেন, ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকেরা আকরামের মাথায় ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন থাকার কথা বললেও পুলিশ মামলা নেয়নি। ঝিনাইদহের তখনকার পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি। এসআই আকরাম হোসেনের পরিবারের সদস্যরা এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করে বলেন, বাবুল আক্তারের সঙ্গে এসআই আকরামের স্ত্রীর প্রেমের সম্পর্কটি উভয় পরিবারের সবাই জানেন। খবর সূত্র: ইত্তেফাক।