Home অন্যান্য নির্বাচিত খবর নারী পাচারে  নেপালের পরই বাংলাদেশের স্থান, বিক্রি হয় যৌনপল্লীতে

নারী পাচারে  নেপালের পরই বাংলাদেশের স্থান, বিক্রি হয় যৌনপল্লীতে

দখিনের সময় ডেস্ক:

এশিয়ার মধ্যে নারী পাচারে  নেপালের পরই বাংলাদেশের স্থান। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম ও উত্তর সীমানা দিয়েই পাচার হয় বেশি। পাচারকারীরা বিভিন্ন পথে নারী ও শিশু পাচার করে থাকে স্থল, জল বা বিমান পথে। কলকাতা, হায়দরাবাদ, মুম্বাই, গোয়া, পুনে, কেরালা, দামান, তামিলনাড়ুসহ বিভিন্ন রাজ্যের যৌনপল্লীতে বাংলাদেশি নারী ও শিশুদের বিক্রি করে দিচ্ছে চক্র।

বাংলাদেশ থেকে স্থলপথে সীমান্ত অতিক্রমের মাধ্যমেই বেশিসংখ্যক নারী ও শিশু পাচার হচ্ছে। ভারতের সঙ্গে ৪ হাজার ২২২ এবং মিয়ানমারের সঙ্গে ২৮৮ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে বাংলাদেশের। যশোরের বেনাপোল, সাতক্ষীরার শাকারা, ভোমরা, ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ, কক্সবাজার, দিনাজপুর, পঞ্চগড়, কুড়িগ্রাম, রংপুর, রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের ছয়টি রুটসহ অন্তত ১৮টি রুট দিয়ে আশঙ্কাজনক হারে পাচার হচ্ছে নারী-শিশু। সীমান্ত দিয়ে নারী ও শিশুদের নিয়ে যাওয়া হয় ভারতে। সূত্রমতে, প্রতি বছরই ২০ থেকে ২৫ হাজার নারী ও শিশু পাচার হচ্ছে। এর মধ্যে ১০ হাজারের বেশি নারী-শিশু পাচার হচ্ছে ভারতে।

ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের তথ্যানুসারে বছরে বাংলাদেশ থেকে ভারত হয়ে বিভিন্ন দেশে ৪০ থেকে ৫০ হাজার নারী ও শিশু পাচার হয়। ভারতের প্রায় প্রতিটি যৌনপল্লীতে রয়েছে বাংলাদেশি নারী। পাচারের পর শুরু তাদের বন্দীজীবন। স্বজন ও পরিচিতজনদের সঙ্গে যোগাযোগ সম্পূর্ণ বন্ধ। যৌনপল্লী ঘিরে সার্বক্ষণিক পাহারাদার। বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। পাচারকারীরা চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে সীমান্ত পার করে নিয়ে যায় ভারতে।

ভারত থেকে ফেরা নির্যাতিত এক নারী জানান, তিনি স্বামীপরিত্যক্তা। থাকতেন ঢাকার যাত্রাবাড়ী। সেখানেই পরিচয় মিরাজ হোসেন কবিরের সঙ্গে। চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে কবির তাকে ভারতে নিয়ে বিক্রি করে দেন। হায়দরাবাদের নেরেডমিটের শ্রী কলোনির ১৩৫ নম্বর বাড়িতে বন্দী রাখা হয়েছিল তাকে। মারধর করে যৌনকাজে বাধ্য করা হয়। সেখান থেকে বাংলাদেশি এক খদ্দেরের সহযোগিতায় গত বছরের শেষের দিকে পালিয়ে আসা নারী জানিয়েছেন,  ওই চক্রের হাতেই কয়েক শ বাংলাদেশি নারী বন্দী আছেন।

একটি বেসরকারি সূত্রমতে বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর ৩০ হাজার নারী ও শিশু দালালের হাতে পড়ে পাচার হচ্ছে। এর মধ্যে ছেলেশিশুর সংখ্যা প্রায় ১৫ হাজার এবং মেয়েশিশু ১০ হাজার। বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের হিসাবে প্রতি মাসে বাংলাদেশ থেকে ২০০ থেকে ৪০০ তরুণী ও শিশু পাচার হচ্ছে ভারত ও পাকিস্তানে। ভারতীয় সমাজকল্যাণ বোর্ডের সূত্রমতে ভারতে মোট ৫ লাখ বিদেশি যৌনকর্মী রয়েছেন। এর শতকরা ১ ভাগ বাংলাদেশি এবং কলকাতায় এ সংখ্যা শতকরা ২.৭ ভাগ।

জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী গত ১০ বছরে বাংলাদেশ থেকে ৩ লাখের বেশি নারী-শিশু পাচার হয়েছে ভারতে। তবে এনজিওগুলোর দাবি পাচারের সংখ্যা ৫ লাখের বেশি। ইউনিসেফ ও সার্কের এক হিসাব অনযায়ী বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর প্রায় সাড়ে ৪ হাজার নারী-শিশু পাচার হয়ে যাচ্ছে। স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত এ দেশ থেকে কমপক্ষে ১০ লাখ নারী ও শিশু পাচার হয়েছে। অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের অধিকাংশ পরিবারই দুস্থ, নিঃস্ব ও অসহায়। আর এ পরিস্থিতির পূর্ণ সদ্ব্যবহার করছে বাংলাদেশসহ আন্তর্জাতিকভাবে সংঘবদ্ধ একশ্রেণির প্রতারক। তারা প্রলোভন দেখিয়ে অসহায় মেয়েদের শহরে চাকরি বা যৌতুকবিহীন বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে পাচার করে দিচ্ছে অন্ধকার জগতে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

মামুনুল হকের নামে ৪১টি মামলা, ধর্ষণ মামলা বেশি আলোচিত

দখিনের সময় ডেস্ক: বাংলাদেশের কওমী মাদরাসা ভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক কারামুক্তির পর নেতাকর্মী ও অনুসারীরা হেফাজতে ইসলামের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব...

জামিনে কারাগামুক্ত হেফাজতের মামুনুল হক

দখিনের সময় ডেস্ক: জামিনে মুক্তি পেয়ে কারাগার থেকে বের হয়েছেন হেফাজতে ইসলামের সাবেক কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক। শুক্রবার (৩ মে)  কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয়...

আশ্চর্যজনক ছাগল, বিড়ালের মতো ঘরে পোষা যায়

দখিনের সময় ডেস্ক: পরিণত বয়সী ছাগলের উচ্চতা মাত্র ১ ফুট। এগুলো দেশি-বিদেশি অন্যান্য জাতের ছাগলের মতো নয়। এ জাতের ছাগলগুলো মানুষের সঙ্গে খুবই বন্ধুত্বসুলভ আচরণ...

রাজনীতিতে পথহারা বিএনপি

বিএনপি নিয়ে ক্ষমতাসীনদের খিস্তিখেউড় প্রতিনিয়ত চলে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে। একটা নাটক আছে না, চলিতেছে সার্কাস। সরকারের অন্তত দুজন মন্ত্রী বিএনপি নিয়ে আল্লাহর ত্রিশ দিন কথা...

Recent Comments