Home অন্যান্য নির্বাচিত খবর আমলাদের কারণে রাজনীতিকরা ম্লান হয়ে যাচ্ছেন: সংসদে তোফায়েল

আমলাদের কারণে রাজনীতিকরা ম্লান হয়ে যাচ্ছেন: সংসদে তোফায়েল

দখিনের সময় ডেস্ক:

প্রবীন রাজনীতিক আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতা তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হন। তখন মন্ত্রীরা জেলার দায়িত্ব পালন করতেন। সেখানে গেলে কর্মীরা আসত। মন্ত্রীরা গ্রামেগঞ্জে যেতেন। কোথায় যেন সে দিনগুলো হারিয়ে গেছে! তিনি উষ্মা প্রকাশ করে বলেন, আমলাদের কারণে রাজনীতিকরা ম্লান হয়ে যাচ্ছেন।

সোমবার(২৮জুন) জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে আমলাদের কড়া সমালোচনা করে এ কথা বলেন তোফায়েল আহমেদ। তিনি বলেন, ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স অনুযায়ী সাংসদরা সচিবদের ওপরে, এটি খেয়াল রাখতে হবে।

তোফায়েল আহমেদ বলেন, আমাদের দুর্ভাগ্য- আমরা যারা এই জাতীয় সংসদের সদস্য, এমন একজনও নেই, যিনি এই করোনাকালে নিজস্ব অর্থায়নে বা যেভাবেই হোক গরিব-দুঃখী মানুষের পাশে দাঁড়াননি। সবাই দাঁড়িয়েছে। আমি আমার নিজের এলাকায় ৪০ হাজার মানুষকে রিলিফ দিয়েছি। এখন মাফ করবেন, কথা বলাটা কতটা যুক্তিসঙ্গত জানি না। এখন আমাদের জেলায় জেলায় দেওয়া হয়েছে প্রশাসনিক কর্মকর্তা। মানুষ মনে করে আমরা যা দিই এটি প্রশাসনিক কর্মকর্তারাই দেন। যাকে দেওয়া হয়েছে, তিনি এখন পর্যন্ত যাননি। এটি কিন্তু ঠিক না। একটি রাজনৈতিক সরকার এবং রাজনীতিবিদদের যে কর্তৃত্ব কাজ, সেটি কিন্তু ম্লান হয়ে যায়।

‘ফেরাউনের সময়ও আমলা ছিল’ বলে পরিকল্পনামন্ত্রীর সাম্প্রতিক মন্তব্যের বিষয়ে তোফায়েল আহমেদ বলেন, এসব কথাবার্তা মানুষ পছন্দ করে না। এমপিদের ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স, দ্য এমপিস আর অ্যাবাব দ্য সেমিট্রিস। এই জিনিসটি খেয়াল করতে হবে। প্রশাসনের কর্মকর্তারাও থাকবে, কিন্তু রাজনীতিক…, আমার দুর্ভাগ্য বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর জিয়া বলেছিলেন- তিনি রাজনীতিবিদদের জন্য রাজনীতি কঠিন করে দেবেন। তিনি অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে কাজটি করেছেন। তোফায়েল আহমেদ আরও বলেন, ‘যারা রাজনীতিবিদ, যারা নির্বাচিত প্রতিনিধি, তাদের জন্য নির্ধারিত স্থান যেখানে আছে, সেখানে থাকা উচিত। কারণ আমাদের জেলায় একজন সচিব যাবেন। আমরা তাকে বরণ করে নেব, ঠিক আছে। কিন্তু তারা যান না। একদিনের জন্য তারা দায়িত্বপ্রাপ্ত।

রাজনীতিবিদরা এখন তৃতীয়

লাইনে: ফিরোজ রশীদ

বিরোধী দল জাতীয় পার্টির এমপি কাজী ফিরোজ রশীদও আমলাদের কড়া সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, আজ দেশে কোনো রাজনীতি নেই, উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তোফায়েল আহমেদ যথার্থ বলেছেন। দেশে কোনো রাজনীতি নেই। রাজনীতি শূন্য, কোথাও রাজনীতি নেই ‘ প্রত্যেকটা জেলার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সচিবদের। প্রধানমন্ত্রী ডিসিদের সঙ্গে কথা বলেন আর এমপি সাহেবরা পাশাপাশি বসে থাকেন দূরে। তার পর বলে ডিসি সাব, আমি একটু কথা বলব প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে। এই হচ্ছে রাজনীতিবিদদের অবস্থা। প্রধানমন্ত্রী ডিসিদের সঙ্গে যখন কথা বলেন, তখন এমপিদের কোনো দাম থাকে না।

কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, রাজনীতির মঞ্চগুলো আস্তে আস্তে ব্যবসায়ীরা দখল করছে। দেশ চালাচ্ছে কারা? দেশ চালাচ্ছেন জগৎশেঠরা, দেশ চালাচ্ছেন আমলারা। আমরা রাজনীতিবিদরা এখন তৃতীয় লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। এই হচ্ছে আমাদের দুর্ভাগ্য। অথচ এই দেশ স্বাধীন করেছেন রাজনীতিবিদরা।’

কাজী ফিরোজ রশীদ আরও বলেন, আওয়ামী লীগের বৃহস্পতি এখন তুঙ্গে। কারণ কোনো রাজনীতি নেই। রাজনীতির নামে এখন পালাগানের অনুষ্ঠান হয়। সন্ধ্যার সময় ওবায়দুল কাদের একদিকে পালাগান করেন, একটু পরেই টেলিভিশনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আরেকটি পালাগান করেন। আমরা রাজনীতিবিদরা ঘরে বসে টেলিভিশনে পালাগানের রাজনীতি দেখি। এই পালাগান চলছে ১০ বছর। রাজনীতিশূন্য, কোথাও রাজনীতি নেই। পদ্মা সেতু, পায়রা বন্দর বা মেট্রোরেল করা হলেও রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি ছাড়া জনগণ এর সুফল পাবে না মন্তব্য করে ফিরোজ রশিদ বলেন. রাজনীতিবিদ ছাড়া ব্যবসায়ীদের মধ্যে পলিটিক্যাল কমিটমেন্ট থাকে না। বাতাস যেদিকে তারা সেদিকে ছাতা ধরে। ক্ষমতায় আমরাও ছিলাম, তিক্ত অভিজ্ঞতা আমাদের আছে।

কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন,  ১৯৭২ সালে এই সংসদে রাজনীতিবিদদের সংখ্যা ছিল ৯৫ পারসেন্ট, আর ৫ পারসেন্ট ছিল ব্যবসায়ী। আজকে ২০২১ সালে ৭৫ পারসেন্ট ব্যবসায়ী, আর ২৫ পারসেন্ট রাজনীতিবিদ। এই হচ্ছে অবস্থা। অর্থমন্ত্রী একজন ধর্ণাঢ্য ব্যবসায়ী। স্বভাবত এ কারণেই তাদের স্বার্থেই এবং তাদের জন্যই বাজেট প্রণয়ন করা হবে। এখানে বৈষম্যের কোনো রূপরেখা থাকবে না। এই বাজেট দেওয়ার ফলেই ধনী আরও ধনী হবে, গরিব আরও গরিব হবে বলে মন্তব্য করেন কাজী ফিরোজ রশিদ।

আমলারা দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে

পড়েছেন: রুস্তম আলী ফরাজী

জাতীয় পার্টির আরেক এমপি রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, আমলারা দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। এখানে বেগমপাড়া নিয়ে বক্তৃতা হয়েছে। এটি যুক্তরাষ্ট্রে আছে, কানাডায় বেশি। কেউ বলেন, এটা কয়েক হাজার। আর একটা সমীক্ষায় এসেছে কয়েকশ। একজন বলেছেন, এক হাজারের ওপরে বেগমপাড়া রয়েছে কানাডায়। কারা করেছেন? তারা কি সব এমপি? নো। ম্যাক্সিমাম সরকারি কর্মকর্তা, কিছু ব্যবসায়ী। আর কিছু আমাদের নষ্ট রাজনীতিবিদ। এই অপদার্থ কিছু রাজনীতিকের কারণে সব রাজনীতির নামে চালানো হয়। রাজনীতিবিদ নয়, সবচেয়ে বেশি হচ্ছেন আমলারা ও সরকারি কর্মচারীরা, তারা দুর্নীতি করে আগে স্ত্রীর নামে বাড়ি কেনে, ছেলেকে পাঠায়। পরে নিজে যায়। দুর্নীতি লুটপাট করে ফাঁকে ফাঁকে ওখানে পাঠিয়ে দেয়।’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

বিআরইউ’র সভাপতি আনিসুর, সম্পাদক খালিদ

নিজস্ব প্রতিবেদক : বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটির (বিআরইউ) সভাপতি আনিসুর রহমান খান স্বপন (নিউ এইজ / ঢাকা ট্রিবিউন) আর সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন খালিদ সাইফুল্লাহ (নয়া...

চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন গণপিটুনিতে নিহত তোফাজ্জল

দখিনের সময় ডেস্ক: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) শিক্ষার্থীদের গণপিটুনিতে নিহত মাসুদ কামাল তোফাজ্জলের জানাজা শেষে বরগুনার পাথরঘাটায় পারিবারিক কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে। শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) সকালে...

অতিরিক্ত ডিআইজি মশিউর গ্রেফতার

দখিনের সময় ডেস্ক: চট্টগ্রাম থেকে বাংলাদেশ পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি মশিউর রহমান গ্রেফতার হয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) তাকে আটক করা হয়। নিউমার্কেট থানার...

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতি নিষিদ্ধ

দখিনের সময় ডেস্ক: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্র, শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আজ বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী ফোরাম...

Recent Comments