Home সারাদেশ ৯ সন্তানের মা-বাবার ঠাঁই এখন জঙ্গলের ঝুপড়িতে

৯ সন্তানের মা-বাবার ঠাঁই এখন জঙ্গলের ঝুপড়িতে

দখিনের সময় ডেস্ক : 

আব্দুল জব্বার (৭০) ও তার স্ত্রী রাজু আক্তার (৬৫)। তাদের ৯ ছেলে-মেয়ে। ৭ মেয়ে ও ২ ছেলে। ছেলেরা ঢাকায় রিকশা চালান। কিন্তু কেউই বৃদ্ধ মা-বাবাকে ভরণপোষণ দেন না। তাই শেষ বয়সে গ্রামে গ্রামে ফেরি করে চলেন জব্বার। বিক্রি করেন বুট, চানাচুর, কেক ইত্যাদি। বয়সের ভারে জীবন চলে না আর। নেত্রকোনা সদর উপজেলার দক্ষিণ বিশিউড়া ইউনিয়নের দুগিয়া গ্রামে জঙ্গলের ভেতর ৪ শতাংশ জায়গায় একটি কুঁড়েঘর তার।

স্ত্রী রাজু আক্তার শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী। জন্মগত পঙ্গুত্বের কারণে একা উঠে বসতে পারেন না। সব সময় শুয়ে থাকতে হয়। সারাদিন বুট, চানাচুর বিক্রি করে সন্ধ্যায় অসুস্থ স্ত্রীকে দেখাশোনা ও রান্নাবান্নার কাজও বৃদ্ধ জব্বার নিজেই করেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জঙ্গলে একটি ঝুপড়ি ঘরে দুজনের বসবাস। সামান্য বৃষ্টিতেই চালের ছিদ্র দিয়ে পানি ঢুকে ঘরে। সেই পানি ঘরের চুলা পর্যন্ত পৌঁছে। তখন রান্নাবান্নাও বন্ধ থাকে। তখন নিজের আর প্রতিবন্ধী স্ত্রীর খাবার জোগাতে ছুটে চলেন প্রতিবেশীদের বাড়িতে।

ঘরে ঢুকতেই প্রথমে নজরে পড়ে চৌকির নিচ দিয়ে গেছে একটি ময়লার ড্রেন। ড্রেনের পাশেই রান্নার ভেজা চুলা। স্ত্রী রাজু আক্তার শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় চৌকিতেই টয়লেটের কাজ করেন। সেই মলমূত্র এই ড্রেন দিয়ে পরিষ্কার করেন আব্দুল জব্বার নিজেই।

বয়সের ভারে ন্যুব্জ জব্বারের চোখ দুটোতেই ছানি পড়েছে। তাই চোখেও কম দেখেন। শারীরিকভাবে নিজেও অসুস্থ। কয়েকদিন আগে স্ত্রীর পা কেটে যাওয়ায় সেখানে ক্ষতের সৃষ্টি হয়। চিকিৎসার অভাবে সেই ক্ষতে পচন দেখা দিয়েছে। স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী তরুণ মাসুদুল করিম মাসুদ দায়িত্ব নিয়ে তার চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছেন।

মাসুদ বলেন, তাদের নয় ছেলে-মেয়ের সবাই কর্মক্ষম। নিজেরা বেশ ভালোই চলেন। কিন্তু একজনও এই বয়স্ক মা-বাবার খোঁজ নেন না। বিষয়টি শুনে একদিন দেখতে যাই। গিয়ে দেখি খুব মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা। বসবাসের ঘরটি ভেঙে পড়ছে। কেউ এই ঘরে বসবাস করছে দেখে খুব খারাপ লাগছে।

জানতে চাইলে আব্দুল জব্বার বলেন, এই বয়সে শারীরিক প্রতিবন্ধী স্ত্রীর দেখাশোনা করি, মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ফেরি করে বুট, চানাচুর, কেক ইত্যাদি বিক্রি করি। নিজেকেই রান্নাবান্না করে সংসার চালাতে হয়। ছেলে-মেয়েরা ভরণপোষণ দেয় না। একটি ভালো ঘর না থাকায় বৃষ্টির দিনে প্রতিবন্ধী স্ত্রীকে নিয়ে ভিজতে থাকি। স্ত্রীর পা কেটে যাওয়ায় পচন ধরেছে। একজন তাকে ওষুধ-বড়ি দিয়ে যায়। সন্তানরা ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে থাকে। ছেলে-মেয়ের ঠিকানা বা ফোন নম্বর না থাকায় তাদের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

নেত্রকোনা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদা আক্তার বলেন, সরকার মা-বাবাকে ভরণপোষণের আইন করে দিয়েছে। যদি বৃদ্ধ মা-বাবাকে সন্তানরা ভরণপোষণ না দেয় সেক্ষেত্রে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া যদি বয়স্কভাতা না পায় তার ব্যবস্থা করে দেব। যদি ঘর ভাঙা থাকে সেক্ষেত্রে আমরা টিন দিয়ে তা সংস্কার করে দেব।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

কোথাও সরকারিভাবে ইন্টারনেট বন্ধ করা হয়নি, দেশকে অশান্ত করার ষড়যন্ত্র চলছে

দখিনের সময় ডেস্ক: সরকারিভাবে ইন্টারনেট বন্ধ করা হয়নি জানিয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, দেশের পাহাড়ি এলাকাতেও বহুমুখী ষড়যন্ত্র থেমে...

দ্রুত প্রণয়ন করা হবে বিচারক নিয়োগ নীতিমালা: প্রধান বিচারপতি

দখিনের সময় ডেস্ক: প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেছেন, সুপ্রিম কোর্টে বিচারক নিয়োগে নীতিমালা দ্রুত প্রণয়ন করা হবে। একই সঙ্গে সুনির্দিষ্ট আইনও করা হবে বলে...

গায়েবি মামলার কালচার থেকে বেরিয়ে আসতে হবে: আসিফ নজরুল

দখিনের সময় ডেস্ক: অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, বিচার বিভাগ ব্যবহার করে মানুষকে হয়রানি করার সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসতে হবে। বিগত...

ইসরায়েলে মশাবাহিত ‘ওয়েস্ট নাইল’ ভাইরাসে নিহত ৭০, আক্রান্ত ৯১৩

দখিনের সময় ডেস্ক: মধ্যপ্রাচ্যের দু’টি দেশ লেবানন ও ফিলিস্তিনে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ইসরায়েল। গাজায় যুদ্ধ শেষ করতে না করতেই, দেশটি নতুনভাবে লেবাননে যুদ্ধ শুরু করেছে। এদিকে, মশাবাহিত...

Recent Comments