Home বরিশাল জয়ী হই বা না হই আমৃত্যু জনগনের সেবা করে যাবো: হুমায়ুন কবির

জয়ী হই বা না হই আমৃত্যু জনগনের সেবা করে যাবো: হুমায়ুন কবির

কাজী হাফিজ ও মশিউর রহমান তাসনিম
বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের ২৮ নং ওয়ার্ডের নির্বাচিত কাউন্সিলর জাহাঙ্গির হোসেন এর মৃত্যুর ৯ মাস পরে আগামী ৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে উপ-নির্বাচন। উপ-নির্বাচনে ওই ওয়ার্ডে অংশ নিতে প্রার্থী হয়েছেন তিনজন । অংশগ্রহণ করছেন ২৮ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মরহুম জাহাঙ্গির হোসেন এর ছোট ভাই মো. হুমায়ুন কবির । নির্বাচন করবেন ঠেলাগাড়ি প্রতীক নিয়ে৷ একান্ত সাক্ষাৎকারে নির্বাচন ও ওয়ার্ডের সমস্যা-সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলেছেন তিনি।
কেমন আছেন?
কবিরঃ আলহামদুলিল্লাহ আমি ভালো আছি, সুস্থ আছি। শরীরচর্চার কারণে আমার কোনো রোগ নেই আলহামদুলিল্লাহ।
আপনার পেশা ও বর্তমান কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জানতে চাই।
কবিরঃ আমি একজন ব্যবসায়ী। আমার ডেইরি ফার্ম আছে, মাছের ঘের আছে এবং বাড়ি ভাড়া দেয়া আছে। আমি বর্তমানে কাশিপুর বাজার কমিটির সভাপতির দায়িত্বে আছি এবং সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজে নিজেকে ব্যস্ত রেখেছি।
রাজনীতিতে কেন কিভাবে পদার্পণ?
কবিরঃ আমার পরিবারটি একটি রাজনৈতিক পরিবার৷ আমার মামা ছিলেন জল কাদের মোল্লা। আমার ভাই ছিলেন ২৮ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মরহুম জাহাঙ্গীর হোসেন,স্থানীয় আওয়ামিলীগ নেতা কালাম মোল্লা, লিটন মোল্লা আমার ছোটো ভাই। এই অঞ্চলে আওয়ামীলীগের যাত্রা শুরুই হয় আমার পরিবার থেকে ফলে সেই ধারাই আমার মধ্যে চলে এসেছে।
কিভাবে রাজনীতি করতে হবে সেটা আমি জানি। আমার বাবার এবং মামার রাজনীতি আমি দেখেছি, সেই থেকেই আমি জেনেছি এবং শিখেছি।
১৯৯৬ সালে যখন বিএনপি ক্ষমতায় তখন একবার বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা কাশিপুরে এসেছিলেন তখন আমি নিজে স্বাগত গেট করি এবং মহিলা নেত্রীদের সাথে নিয়ে আমার একক নেতৃত্বে তাকে ফুল দিয়ে বরণ করি।
খালেদা জিয়ার আমলে তার একতরফা নির্বাচন দিয়েছিলেন। আমি তখন কাশিপুর সেন্টারের নির্বাচন বাঞ্চাল করে দেই, আর্মির তাড়া খেয়ে আমি বন্দর থানার দিকে গিয়ে আশ্রয় নেই।
এমন বহু রাজনৈতিক ঘটনার মাধ্যমেই আমার পদার্পণ।
রাজনীতিতে কাকে আদর্শ হিসেবে মানেন এবং কাকে অনুসরণ করেন?
কবিরঃ আমি রাজনৈতিক আদর্শ হিসেবে বঙ্গবন্ধুকে এবং আমার মাতৃসমুতুল্য জননেত্রী শেখ হাসিনা কে মেনে চলার চেষ্টা করি, এবং আমার রাজনৈতিক গুরু আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহকে অনুসরণ করি আর জননন্দিত মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর নির্দেশনা মেনেই রাজনীতি করছি।
জনপ্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচনের অনুপ্রেরণা পেলেন কিভাবে?
কবিরঃ আমি জনপ্রতিনিধি হতে চাই শুধু একটা কারণেই, সেটা হলো আমি গরীব-দুঃখি, রিক্সাওয়ালা,ভ্যানচালক,শ্রমজীবী,দিনমজুর তাদেরকে ভালোবাসি। তাদের বিপদেআপদে পাশে দাড়াই, তারা না খেয়ে থাকলে তাদের খাদ্যের ব্যবস্থা করি তাদের সাহায্য করি এবং চেষ্টা করি এটা আমার ভালো লাগে এবং এটিকে আরো সুদৃঢ় করতেই আমি জনপ্রতিনিধি হতে চাই। তাদের দেখার কেউ নেই এসব মানুষ সবসময় অবহেলিত থেকে যায় তাই আমি এসব সাধারণ মানুষের অধিকার নিশ্চিত এবং উন্নয়ন ঘটাতে একজন জনপ্রতিনিধি হতে চাই। এই অঞ্চলের সব মানুষ জানে এই এলাকার কেউ বিপদে পড়লে সবার আগে আমাকেই ফোন দেয়, যত রাতই হোক না কেন আমি সবসময় তাদের সাহায্য করার জন্য এগিয়ে যাই। আমার ভাই সাবেক কাউন্সিলর ও ছিলেন উদার মনেত মানুষ তিনিও জনগনের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন সবসময়। এই এলাকার সকল উন্নয়নমূলক কাজে আমার ভাইয়ের হাতের ছোয়া রয়েছে এবং এলাকার মানুষ আমার ভাইয়ের প্রতি কৃতজ্ঞ তাই আমি জনগণের কাছে নিজেকে দায়বদ্ধ মনে করি, কেননা মানুষকে যদি সাহায্য না করা হয় তাহলে সে যাবে কোথায়? এ কারণে তারাই আমাকে জনপ্রতিনিধি হতে উদ্ধুদ্ধ করেছে।
জনসেবায় নিজেকে কতটুকু আত্মনিয়োগ করতে পেরেছেন?
কবিরঃ জনগনের সেবায় আমি নিজেকে পুরোপুরিই আত্মনিয়োগ করেছি। এবং যতদিন বেচে আছি জনগনের সেবা করে যাবো, তাদের পাশে থাকবো ইনশাআল্লাহ।
আপনার এলাকায় কি কি সমস্যা বিদ্যমান?
কবিরঃ আমার এলাকার সবথেকে বড় সমস্যা হলো পানি নিষ্কাশন এবং রাস্তাঘাট এছাড়া হরিপাশা এলাকায় বিদ্যুতের সমস্যা রয়েছে, বিদ্যুতের ৮/১০টি বিদ্যুতের খুটির প্রয়োজন, খুটি না থাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যহত হচ্ছে সেখানে।

নির্বাচিত হলে কী কী উন্নয়নমূলক কাজ করবেন?
কবিরঃ ২৮ নং ওয়ার্ড খুবই অবহেলিত একটি ওয়ার্ড। আমি নির্বাচিত হলে যদিও হাতে সময় খুব কম মাত্র ১৬/১৭ মাস প্রায়। আমি আমার ভাইয়ের অসমাপ্ত যে কাজগুলি রয়েছে তা সম্পন্ন করার চেষ্টা করবো। যেমন- পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করবো, রাস্তা-ড্রেন সংস্কার, কালভার্ট নির্মান এবং সর্বশেষ এই এলাকায় যারা জুয়ার আসর বন্ধ, মাদকসেবন ও বিক্রি করে তাদের নির্মুলে আমি কাজ করবো, ইনশাআল্লাহ। এটি যদিও একটি চ্যালেঞ্জিং কাজ এবং আমি আগে থেকেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে পছন্দ করি, প্রশাসন এ ব্যাপারে আমাকে সহায়তা করে থাকে। এবং এই এলাকায় অনেকটাই কমে এসেছে মাদকের প্রসার। সমাজ ভালো হওয়া মানে দেশের ভালো হওয়া,দেশ ভালো হওয়া মানেই আমার ভালো এবং জনগনের ভালো। তাই আমি ভালো কাজ করে যেতে চাই। সামান্য বৃষ্টি হলেই এই এলাকা পানিতে ডুবে যায়, মানুষ কাদামাটিতে হাটে, চলাচলে নানান অসুবিধে হয়, তখন বাড়ি-ঘরে থাকাই দুষ্কর হয়ে পড়ে। সাধারণ মানুষের চাহিদা খুবই সামান্য তারা চায় জনপ্রতিনিধি তাদের পাশে থাকবে, তারা যেনো রাস্তায় ঠিকভাবে চলাফেরা করতে পারে, একটু উন্নত জীবন যাপন করতে পারে, রাস্তাঘাট,পানি,বিদ্যুতের সমস্যা না হোক তাদের এসব সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করাই আমার প্রধান লক্ষ্য।
নির্বাচনে অন্যান্য প্রার্থীদের তুলনায় নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করুন।
কবিরঃ আমি অন্যান্য প্রার্থীদের ব্যাপারে কিছু বলবো না তারা কি করেছেন কি না করেছেন সেটা তারা এবং এলাকার মানুষ অবশ্যই অবগত আছেন। আমি মনে করি আমি সাধারণ গরীব-দুঃখী মানুষের ভালোবাসা এবং বিশ্বাস অর্জন করতে পেরেছি। এলাকার মানুষ আমাকে সহযোগীতা করছে এবং আমার পাশে আছে, আমার বিশ্বাস তারা টাকার কাছে নিজেকে বিক্রি করে দেবেন না, তারা আমার ডাকে সাড়া দিয়ে আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন এবং আমিও তাদের বিশ্বাস এবং ভালোবাসার মান রাখবো।
আদর্শ ওয়ার্ড গঠনে কী কী বাধা রয়েছে এবং তা উত্তরনের উপায় কী?
কবিরঃ আসলে কেউ যদি ভালো কাজ করার মানষিকতা নিয়ে এগোয় তাহলে তাকে বাধা দিয়ে দমিয়ে রাখা অসম্ভব। জনপ্রতিনিধির সৎইচ্ছা জনগনের সহায়তায় সকল বাধা বিপত্তি পেরিয়ে একটি আদর্শ সুন্দর সু-শৃঙ্খল ওয়ার্ড গঠন করা সম্ভব বলে আমি মনে করি।
তরুন প্রজন্মকে নিয়ে আপনার ভাবনা কী?
কবিরঃ তরুন প্রজন্মকে গড়ে তোলার দায়িত্ব প্রথমত পরিবারের। বাবা-মায়েদের উচিত তার সন্তানের প্রতি খেয়াল রাখা, নৈতিক শিক্ষা দেয়া, মূল্যবোধের জায়গাটুকু তৈরি করা, পড়ালেখার প্রতি খেয়াল রাখা। নহেতু এদের বখে যাওয়া রুখতে পারা অসম্ভব। আমার ওয়ার্ডে আমি নিজে সন্ধ্যার পরে কোথাও ২/৩ জনের বেশি আড্ডা দিতে দেখলে তাদের তাড়িয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেই। চায়ের দোকানে, রাস্তার মোড়ে অহেতুক কেউ আড্ডা দিলে আমি তাড়িয়ে দেই। কিশোর গ্যাং,ইভটিজারদের রুখতে আমি নিজেই কাজ করি এবং প্রশাসনের সহায়তা নেই।
জনগণের কাছে কী প্রত্যাশা করেন বা কী আহবান করতে চান? আপনার সবচেয়ে বড় যোগ্যতা ও অযোগ্যতা কী?
কবিরঃ আমি ২৮ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী হিসেবে নিজেকে পার্ফেক্ট মনে করি। কেননা আমিই সর্বস্তরের মানুষের বিপদে পাশে দাড়াই। তারা আমাকে সবসময় কাছে পায়। আমার বাড়ির দরজা দিন-রাত সবার জন্য খোলা থাকে, সবাই আমার কাছে আসে এবং সুযোগ-সুবিধা পায়, আমি আমার সাধ্যমতো চেষ্টা করি তাদের সমস্যা সমাধানের। আমার জনগনের জন্য বরাদ্দের অর্থ আত্মসাৎ করার মানষিকতা নেই। আমি ছোটো বেলায় যখন বাবার সাথে বাজার রোডে যেতাম হাটের দিন, তখন বাজার শেষে বাবা আমাকে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতেন অনেক রিক্সা আসার পরেও বাবা উঠতেন না, জিজ্ঞেস করলে বাবা বলতেন একটু অপেক্ষা কর দেখি কাশিপুরের কোনো রিক্সা পাই কিনা, আমার বাবা চাইতেন ১ টাকা দিলে সেটা কাশিপুরের মানুষই যেনো পায়, তারা যেনো শান্তিতে থাকতে পারে আমিও ঠিক সেটাই অনুকরণ করেছি। আমার বাবা প্রচুর সম্পত্তির মালিক ছিলেন এবং আমাদের জন্যেও রেখে গেছেন এবং আমি তা থেকে গরীব মানুষদের সাহায্য করি। আমি পরিশ্রমি, পরিশ্রম করে অর্থ উপার্জন করাটাই আমি পছন্দ করি। এই কারণেই আমি কাশিপুর বাসীর জন্য নিজেকে পার্ফেক্ট বলে মনে করি। আমি জনগনের কাছে আহবান করি এবং প্রত্যাশা করি যে তারা আমাকে ভালোবাসবে আমাকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করে তাদের জনপ্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত করবে।
আমরাও চাই আপনি জয়ী হন কিন্তু পরাজিত হলে পরবর্তী কর্মকাণ্ড কী হবে?
কবিরঃ আমি মৃত্যু পর্যন্ত জনগনের সেবায় কাজ করে যাবো। জয়ী হই কিংবা না হই আমার সামাজিক কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে তাতে বিন্দুমাত্র কমতি থাকবে না বরং আমি আরো বেশি বেশি চেষ্টা করবো মানুষের পাশে থাকার তাদের সাহায্য করার। তাদের সুখ-দুঃখের ভাগীদার হওয়ার।
দৈনিক দখিনের সময়ের পাঠকদের উদ্দেশ্য তিনি বলেন, দৈনিক দখিনের সময় এবং তার পাঠকদের প্রতি আমার আহবান দখিনের সময় আরো বহুদূর এগিয়ে যাক শুদ্ধ সাংবাদিকতা করে যাচ্ছে দখিনের সময়ের সংবাদকর্মীরা, এবং পাঠকদের বলবো বিশুদ্ধ নির্ভুল সংবাদ পেতে আপনারা দখিনের সময়ের সাথে থাকবেন বলে আশা করি, ধন্যবাদ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

স্মার্টফোনে ইন্টারনেট চলে যাচ্ছে? জেনে নিন গতি বাড়ানোর কৌশল!

দখিনের সময় ডেস্ক: অনেকেই মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার করার সময় হঠাৎ করেই দেখেন, নেটওয়ার্ক চলে গেছে। আশেপাশের অন্যরা নির্বিঘ্নে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারলেও আপনার ফোনেই সমস্যা...

প্রতিদিন ৩-৪ লিটার পানি পান করলে কী হয়?

দখিনের সময় ডেস্ক: ওজন কমানো একটি চ্যালেঞ্জিং কাজ হতে পারে। কঠোর ডায়েট অনুসরণ করা, খাবারের প্রতি লোভ নিয়ন্ত্রণ করা, প্রতিদিন জিমে যাওয়া, কঠোর ওয়ার্কআউট করা...

ডিভোর্সের দুদিন পরই সুখবর দিলেন এ আর রহমান

দখিনের সময় ডেস্ক: নিন্দুকরা মনে করছে বাংলার মেয়ে গিটার বাদক মোহিনী দে-র জন্যই হয়ত সায়রাকে ছেড়েছেন ভারতের অস্কারজয়ী সংগীতশিল্পী ও সুরকার এ আর রহমানের। তবে...

যৌন পর্যটনের নতুন কেন্দ্র টোকিও, সেক্স ইন্ডাস্ট্রির জড়িত কিছু চক্র

দখিনের সময় ডেস্ক: যখন স্বর্ণযুগ ছিল, শহরটি অর্থনীতিতে ব্যাপক উন্নতি দেখেছে। এটি এখনো বিশ্বের অন্যতম বাসযোগ্য শহর হিসেবে নিজের অবস্থান ধরে রেখেছে। তবে আশঙ্কার বিষয়...

Recent Comments