Home বিশেষ প্রতিবেদন ইতিহাসের আলোকে বাংলাদেশ'র পুলিশ ও বঙ্গবন্ধু'র চিন্তাধারা

ইতিহাসের আলোকে বাংলাদেশ’র পুলিশ ও বঙ্গবন্ধু’র চিন্তাধারা

শুরুর কথা

‘বাংলাদেশ পুলিশ দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং জননিরাপত্তা বিধানে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। ‘শৃঙ্খলা নিরাপত্তা প্রগতি’ মন্ত্রে দীক্ষিত বাংলাদেশ পুলিশের সদস্যরা দেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা সহ আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় স্বাধীনতার জন্মলগ্ন থেকে  দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করে আসছে’। কিন্তু যখন আমরা পরাধীন ছিলাম, পশ্চিমা অবাঙ্গালী শাসকগোষ্ঠীর ক্রীড়নক ছিলাম তখন পুলিশ রাষ্ট্রশক্তির  হুকুম মতো নির্দেশ পালন করতো। বাঙালি নিরীহ জনগণের উপর অত্যাচারের স্টিম রোলার চালাতো। বাহান্নোর ভাষা আন্দোলনে পাকিস্তানি পুলিশের গুলিতেই শহিদ হন সালাম,রফিক, জব্বার সহ আরো অনেক নাম না জানা অগণিত তরুণ। এরপর বঙ্গবন্ধু’র নেতৃত্বে স্বাধীকার আন্দোলন শুরু হলে জনগণের ন্যায্য দাবি’কে দাবিয়ে রাখতে পাকিস্তানি ফ্যাসিবাদী শাসকগোষ্ঠী  পুলিশ’কে  জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয় । তার জলন্ত বিবরণ পাওয়া যায় বঙ্গবন্ধু’র লেখা ইতিহাসের অমূল্য দলিল ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’তে। এক পরিসংখ্যানে দেখা যায় ইংরেজ আমল থেকে পাকিস্তান আমল পর্যন্ত স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা  রাষ্ট্রযন্ত্রের  হাতে আটক হয়ে ৪৬৮২ দিন কারাগারের নির্জন প্রকোষ্ঠে দিন কাটান।  জনগণের সেবক না হয়ে পাকিস্তানি পুলিশ তখন রাষ্ট্রের হুকুমের দাস হিসেবে কাজ করে । রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে বাহান্নোর ভাষা আন্দোলন বাঙালি  জাতীয়তাবাদী চেতনাকে যেমন উজ্জীবিত করে, তেমনি বাঙালির ওপর পাকিস্তানি স্বৈরশাসকদের  জাতিগত নিপীড়ন,লাঞ্চনা,বঞ্চনা, বৈষম্য ক্রমেই  তাদের  বিরুদ্ধে জনগণের ভিতর  বিদ্রোহের আগুন প্রজ্বলিত করে । বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন ছিলো তারই সূচনা পর্ব। এরপর রচিত হয় ইতিহাসের মাইল ফলক  ৬৬’র ছয়দফা। গড়ে ওঠে  ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান। যা ছিলো বাঙালির স্বাধীকার আন্দোলনের এক ঘটনাবহুল অনিবার্য  পরিনতি । এরপর শুরু হয় বঙ্গবন্ধু’র নেতৃত্বে স্বাধীনতার দাবিতে প্রবল আন্দোলন । সেই লড়াইয়ে জনগণ  রাজপথ প্রকম্পিত করে তোলে। চাই স্বাধীনতা-এই  মূলমন্ত্র  দেশজুড়ে দেশবাসীর ভিতরে বিপুল আকাঙ্খা  জাগিয়ে তোলে  । আর এই স্বাধীন  স্বদেশ ভূমির  স্বপ্ন সমগ্র দেশবাসীর হৃদয়ে প্রোথিত করেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, স্বাধীনতার স্হপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এজন্য পাকিস্তানি স্বৈরশাসকরা বঙ্গবন্ধু’র বিরুদ্ধে নানা মিথ্যা মামলা রজ্জু করে, মিথ্যা অভিযোগ এনে তাঁকে নিঃশেষ করে দিতে দিনের পর দিন  কারাপ্রকোষ্ঠে বন্দী করে রাখে। কিন্তু ঊনসত্তর’এ দেশ জুড়ে  জনগণের  গণ-অভ্যুত্থান ঘটলে  অবাঙালি উর্দুভাষী শাসকদল পিছু হটতে বাধ্য হয়। জনগণের ন্যায়সঙ্গত দাবি ও কঠিন  প্রতিরোধের মুখে  বাঙালির  এই মহান নেতা’কে তারা মুক্তি দেয়।  আসে সত্তরের নির্বাচন। সে নির্বাচন তাঁকে এবং তাঁর দল আওয়ামী লীগ’কে পাকিস্তানের ক্ষমতার রাজনীতিতে এবং সেসাথে সাড়ে সাত কোটি  বাঙালির একচ্ছত্র প্রতিনিধি হিসেবে গোটা দুনিয়ার বুকে প্রতিষ্ঠিত করে। বঙ্গবন্ধু আত্মপ্রকাশ করেন একজন মহান জাতীয়তাবাদী নেতা হিসেবে। বঙ্গবন্ধু’র নিরঙ্কুশ বিজয় সেদিন পাকিস্তানি সেনা শাসকরা সহজে মেনে নিতে পারেনি। শুরু হয়  বাঙালিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর না করার গভীর চক্রান্ত ।

বঙ্গবন্ধু এটা বুঝতে পেরেই একাত্তরের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বিশাল জনসমুদ্রে স্বাধীনতার ডাক দিয়ে যান। যার অমোঘ পরিনতি একাত্তরের রণাঙ্গন,সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ। বঙ্গবন্ধু’কে পাকিস্তানি হানাদাররা গ্রেফতার করে। করলেও তাঁর আহবানে ও নির্দেশে সাড়া দিয়ে সেদিন  দেশের আপামর জনসাধারণ  আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিপুল বিক্রমে মরণপণ যুদ্ধে লিপ্ত হয় । ‘অপারেশন সার্চ লাইট’ নামে ২৫ শে মার্চ’র কালো রাতে পাকিস্তানি হানাদারদের  টার্গেট ছিলো চারটি অবস্হান  :  ১.রাজারবাগ পুলিশ লাইন,২.পিলখানা,৩.ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বঙ্গবন্ধু’র ৩২ নম্বর বাড়ি। নয়মাস রক্তক্ষয়ী সে সশস্ত্র যুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধ গড়ে তোলে রাজারবাগ পুলিশ বাহিনী। দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে তাঁদের সেই বীরত্বপূর্ণ লড়াই আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের এক অমর গাঁথা। তাঁদের সেই জীবন উৎসর্গ করা গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা আজও জাতিকে প্রেরণা যুগিয়ে যায়। পুলিশ বাহিনী হয়ে ওঠে জনগণের প্রকৃত বন্ধু।

বঙ্গবন্ধু’র কথা  :

আমরা দেখবো পয়তাল্লিশ বছর আগে স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭৫ সালের ১৫ জানুয়ারি প্রথম পুলিশ সপ্তাহের উদ্বোধন হয়।  উদ্বোধন করেন বাঙ্গালী জাতিসত্বার নির্মাতা  বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সেদিন তিনি মুক্তিযুদ্ধে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ পুলিশ বাহিনীর বীরত্বপূর্ণ সংগ্রাম অত্যন্ত আবেগের সাথে স্মরণ করেন। উপস্থিত পুলিশদের  উদ্দেশ্যে  দিক নির্দেশনামূলক ভাষণ দেন। যা আজও এদেশের পুলিশ বাহিনীর জীবনাদর্শের  অনুপ্রেরণার উৎস  হয়ে আছে। ওই ভাষণে তিনি মানুষকে ভালোবাসতে ও সেবা দিতে বলেন। সৎ থাকতে বলেন।  মানুষ যেনো পুলিশকে ভয় না করে, তাঁদেরকে ভালোবাসে। বঙ্গবন্ধু সেভাবে পুলিশকে  কাজ করে সাধারণ মানুষের শ্রদ্ধা অর্জন করতে বলেন। কারন স্বাধীন দেশের পুলিশ শোষকদের নয়, জনগণের লোক। তাই পুলিশের কাজ জনগণকে ভালোবাসা ও দুর্দিনে তাদের সাহায্য করা। যেনো মানুষ শান্তিতে ঘুমাতে পারে’।

পাক-হানাদারদের বিরুদ্ধে রাজারবাগ পুলিশের  মুখোমুখি লড়াইয়ের  গৌরবময় অবদানের  কথা তুলে ধরে  বঙ্গবন্ধু  আরো বলেন, ‘যতদিন বাংলার মানুষ থাকবে, ততদিন এই রাজারবাগের ইতিহাস স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। রাজারবাগের পুলিশ ভাইয়েরা সেদিন সামান্য অস্ত্র নিয়ে বীরবিক্রমে হার্মাদ পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর  মোকাবেলা করেন। তাদের অমিত সাহস সেদিন এই হিংস্র পশুদের হাত থেকে বাংলাদেশের মানুষকে রক্ষা করে। এরজন্য আজ আমি গর্বিত। আজ বাংলার জনগণ গর্বিত। সেদিন বাংলার জনগণের জীবন রক্ষার্থে, আমার হুকুমে এবং আমার আহবানে সাড়া দিয়ে দেশবাসীর সাথে এদেশের পুলিশ বাহিনী এগিয়ে আসে মাতৃভূমিকে রক্ষা করতে। অগণিত সদস্য  সেদিন দেশের জন্য অকাতরে  প্রাণ দেয়। তারা মরণপণ যুদ্ধ চালায় নয়মাস।

আজ বাংলাদেশ একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র। যে রক্ত দিয়ে আমরা স্বাধীনতা এনেছি, সেই রক্ত দিয়েই আমাদের স্বাধীনতা রক্ষা করতে হবে। দেশ স্বাধীন করতে যাঁরা প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন, শহিদ হয়েছেন, তাঁদের কথা আমাদের মনে রাখতে হবে।  জীবনভর তাঁদের অবদানের কথা স্মরণ রাখতে হবে। তারা আমাদেরই ভাই। এ মাটির সন্তান। তাঁরা পুলিশ ছিলেন। জনগণের সঙ্গে তাঁরা একাত্ম হয়েছিলেন। ত্রিশ লক্ষ আত্মত্যাগী শহিদদের সঙ্গে তাঁদের নামটিও ইতিহাসে জ্বলজ্বল করবে। তাঁদের রক্ত যেনো বৃথা না যায়, তাঁদের ইজ্জত আপনাদেরই সমুন্নত রাখতে হবে। তাঁদের আত্মা যাতে শান্তি পায় সেদিকে সকলকে খেয়াল রাখতে হবে। এ কথা সত্য  স্বাধীনতা পাওয়া যেমন কষ্টকর, স্বাধীনতা রক্ষা করাও তেমনি কষ্টকর।

আজ আপনাদের কর্তব্য অনেক। যে কোন রাষ্ট্রের, যে কোন সরকারের, যে কোনও দেশের সশস্ত্র বাহিনী  গর্বের বিষয়। পরাজয় নিশ্চিত জেনে পাক হানাদার বাহিনী আত্মসমর্পণ’র আগে পোড়ামাটি নীতি গ্রহণ করে। পাকিস্তানি জালেমরা বাংলাদেশের সম্পদ শুধু লুট  করেনি, তারা আমাদের সবকিছু ধ্বংস করে দেয়। সেই ধ্বংসস্তুপের ওপর আমাদের যাত্রা শুরু হয়। তারা ভেবেছিলো বাংলাদেশ টিকে থাকতে  পারবে না। কিন্তু বাংলাদেশ টিকেছে। বাংলাদেশ থাকবে। বাংলাদেশ থাকার জন্যই এই দুনিয়ার বুকে এসেছে। একে কেউ কোনদিন ধ্বংস করতে পারবে না। আজ আমরা জাতিসংঘের সদস্য। আজ সারা দুনিয়ায় আমার বাংলাদেশের পতাকা ওড়ে। আজ দুনিয়ার মাঝে আমার বাংলাদেশের স্হান হয়েছে। একটা কথা আপনাদের ভুলে গেলে চলবে না। আপনারা স্বাধীন দেশের পুলিশ। আপনারা বিদেশি শোষকদের পুলিশ নন-জনগণের পুলিশ। আপনাদের কর্তব্য জনগণের সেবা করা, জনগণকে ভালোবাসা, দুর্দিনে জনগণকে সাহায্য করা। আপনাদের বাহিনী এমন যে, এর সদস্যরা বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রাম পর্যন্ত ছড়িয়ে আছে। আপনাদের কাছে স্বদেশের মানুষ  শুধু একটি জিনিস চায়, আর তাহলো তারা যেনো শান্তিতে ঘুমাতে পারে। তারা আশা করে, চোর-গুন্ডা- বদমাইশ সহ দুর্নীতিবাজরা যেনো তাদের ওপর অত্যাচার করতে না পারে। আপনাদের কর্তব্য অনেক। বলছি এজন্য যে, বাংলাদেশের মানুষ দুঃখী, বাংলাদেশের মানুষ গরীব, বাংলাদেশের মানুষ না খেয়ে কষ্ট পায়। যুগ যুগ ধরে পরাধীন থেকে তারা শোষিত হয়েছে। তেমনি সর্বশান্ত হয়েছে  বন্যা, সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস ও ঘূর্ণিঝড়’র তান্ডবে। প্রকৃতির এই ভয়াল রূপের সাথে লড়াই করেই আমাদের প্রতিনিয়ত বেঁচে থাকতে হয়।  আমি আপনাদের কাছে আশা করবো যে, আপনারা হবেন আমাদের গর্বের বিষয়। বাংলাদেশের মানুষ যেনো আপনাদের জন্য গর্ব অনুভব করতে পারে। আপনারা যদি ইচ্ছে করেন, যদি দুর্নীতির উর্ধ্বে থাকেন, তাহলে দুর্নীতি দমন করতে পারবেন। আপনারা যদি আজকে ভালোভাবে থাকেন, শৃঙ্খলা বজায় রাখেন, তাহলে আমি বিশ্বাস করি, যে থানায় ভালো অফিসার আছেন এবং ভালোভাবে কাজ করছেন, সেখানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কোনো প্রকার সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে না। কারন তারা সবসময় সজাগ থাকেন এবং দুষ্টকে দমন করেন। যিনি যেখানে রয়েছেন, তিনি সেখানে আপন কর্তব্য পালন করলে দেশের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে না। মনে রাখবেন আপনাদের মানুষ যেনো ভয় না করে। আপনাদের যেনো মানুষ ভালোবাসে। আপনারা জানেন অনেক দেশে পুলিশকে মানুষ শ্রদ্ধা করে। আপনারা শ্রদ্ধা অর্জন করতে শিখুন। সমগ্র সরকারি কর্মচারীকেই আমি অনুরোধ করি, যাদের অর্থে আমাদের সংসার চলে, তাদের সেবা করুন। যাদের জন্য, যাদের অর্থে আজকে আমরা চলছি, তাদের যেন কষ্ট না হয়। তাদের দিকে খেয়াল রাখুন। আর যারা অন্যায় করবে, আপনারা অবশ্যই তাদের কঠোর হস্তে দমন করবেন। দেখবেন একজন  নিরপরাধ লোকের ওপরও যেনো অত্যাচার না হয়। তা নাহলে আমাদের স্বাধীনতা বৃথা যাবে।

আমি চাই আগামী দিনে আপনারা নতুন চিন্তা নিয়ে, নতুন মনোভাব নিয়ে কাজ শুরু করুন। যাতে বাংলাদেশের পুলিশ দুনিয়ার বুকে গর্বের বস্তু হয়ে উঠতে পারে। এটাই আমি চাই আপনাদের কাছে। আপনাদের প্রতি আমার আস্হা আছে। আপনারা জানেন আপনাদের আমি ভালোবাসি। আপনাদের জন্য চব্বিশ ঘণ্টা কাজ করেও আমি ক্লান্তি বোধ করি না। কিন্তু আমি চাই, আপনারা দেশ সেবায় নিয়োজিত থাকুন, মানুষকে ভালোবাসুন। তাহলেই শান্তি আসবে’।

বাংলাদেশের পুলিশ  :

জাতির পিতার সেদিনের নির্দেশ স্বাধীন বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী যথার্থ স্মরণে রেখেছে। যখন দেখি তারা মরণঘাতী অদৃশ্য  জীবাণু ‘করোনা’ মোকাবেলায় নিজের জীবনকে উপেক্ষা করে দ্বিধাহীনভাবে নিজ কর্তব্য পালন করছে তখন মনটা গর্বে ভরে যায়। এমনও দেখা গেছে ‘করোনা’ ভাইরাসে মৃত ব্যক্তির লাশ রাস্তায় পড়ে আছে, নিজ পিতার লাশ ফেলে রেখে সন্তান পালিয়ে গেছে, সেখানে পুলিশ তার মানবিক কর্তব্য থেকে বিচ্যুত হয়নি বরং যথাযথ ধর্মীয় রীতি অনুসরণ করে মরদেহ দাফন করতে কিংবা সৎকার করতে বিন্দুমাত্র ইতঃস্তত বোধ করেনি। একাত্তরের রণাঙ্গনে যেমন দেশপ্রেমিক পুলিশ বাহিনী বীরত্বের পরিচয় দিয়েছিলো,তেমন বীরত্বের পরিচয় দেখিয়েছে করোনা কালীন জাতির দুর্যোগময় মুহূর্তে।

আজ বঙ্গবন্ধু কন্যা রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসীন, দেশের প্রধানমন্ত্রী। মহান  পিতার আদর্শিক চিন্তার তিনি যোগ্য উত্তরসূরি। জাতির দুর্যোগপূর্ণ সময়ে পিতার মতো পুলিশ সদস্যদের জনগণের মৌলিক অধিকার , মানবাধিকার ও আইনের  শাসনকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়ার নির্দেশ দেন। তিনি মনে করেন স্বাধীন বাংলাদেশের পুলিশকে ঔপনিবেশিক আমলের ধ্যান-ধারনার কাঠামো থেকে বেড়িয়ে আসতে  হবে। তাদের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে একাত্ম  ও জনবান্ধন হতে হবে। অসহায় ও বিপন্ন মানুষের পাশে অকুণ্ঠচিত্তে দাঁড়াতে হবে। জাতির পিতা বলেছিলেন,  আমরা স্বাধীন দেশের নাগরিক। আমাদের পুলিশ বাহিনী স্বাধীন দেশের পুলিশ বাহিনী। আমাদের প্রতিটি ক্ষেত্রে দায়িত্ববোধ নিয়ে মানুষের সেবা করার অঙ্গীকার থাকতে হবে। আজ পুলিশের দেশপ্রেম, কঠিন পেশাদারিত্ব, দায়িত্ববোধ ও সাহসের কারনে দেশে সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ ,  সাম্প্রদায়িকতা, সামাজিক অন্যায়, মাদকের বিস্তার,  বিশৃঙ্খলা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারেনি। এমনকি দেশ বিরোধী সকল ষড়যন্ত্র নির্মূলে অবিস্মরণীয় ভূমিকা তারা পালন করছে।

শেষকথা :

বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক অমর্ত্য সেন’র মন্তব্য হলো, ‘ভারতীয় উপমহাদেশ যে আদর্শের সংকটে ভুগছে, তা থেকে উত্তরণে বঙ্গবন্ধুর চিন্তা, তাঁর রাজনৈতিক আদর্শ পথ দেখাতে পারে’। সম্প্রতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু’র জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকস দক্ষিণ এশিয়া আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি কথাগুলো বলেন। এতে তিনি বঙ্গবন্ধু’র অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রচিন্তা ও সমাজভিত্তিক জাতিগঠনের দর্শনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘আক্ষরিক অর্থে বঙ্গবন্ধু শব্দটির মানে হলো বাংলার বন্ধু। কিন্তু তিনি ছিলেন এর চেয়েও বেশি। ছিলেন বাংলাদেশের মহান রাজনীতিবিদ, স্বাধীন বাংলাদেশ’র স্হপতি এবং বাংলাদেশের মানুষের জীবনে সবথেকে প্রভাব বিস্তারকারী ব্যক্তিত্ব। তাঁর বক্তব্য, বঙ্গবন্ধু’কে মানুষ ভালোবাসে হৃদয় দিয়ে’।

লেখক পরিচিতি  :  সাবেক অধ্যক্ষ, ব্রজমোহন কলেজ, বরিশাল।

তথ্য সূত্র :  ১. পুলিশ সপ্তাহ উদ্বোধন অনুষ্ঠান  জানুয়ারি, ১৯৭৫- বঙ্গবন্ধু’র ভাষণ। ২. পুলিশ সপ্তাহ উদ্বোধন অনুষ্ঠান ২০১৭- মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

আইফোন ব্যবহারকারীদের জন্য ট্রু-কলারের নতুন ফিচার

দখিনের সময় ডেস্ক: অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন এলে সহজেই ধরে ফেলার জনপ্রিয় অ্যাপ ট্রু-কলার। তবে আইফোনের তুলনায় অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীরা এই অ্যাপের সুবিধা বেশি পেতেন। এবার...

যে ৫ খাবার মাইক্রোওয়েভে গরম করবেন না

দখিনের সময় ডেস্ক: অবশিষ্ট খাবার এবং মাইক্রোওয়েভ ওভেন- এই দুইয়ের সঙ্গে রয়েছে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। বিশেষ করে যখন আপনি তাড়াহুড়া করেন। দ্রুত লাঞ্চ বা ঝটপট খেয়ে...

আধিপত্য বিস্তারে রাজবাড়ী বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, সেনাবাহিনীর হাতে আটক ৩

দখিনের সময় ডেস্ক: রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলায় এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য খোন্দকার মশিউল আজম চুন্নু এবং বালিয়াকান্দি উপজেলা বিএনপির...

প্রাণ গ্রুপে চাকরি, ২৫ বছর হলেই আবেদন

দখিনের সময় ডেস্ক: প্রাণ গ্রুপ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। প্রতিষ্ঠানটির স্টোর অপারেশন বিভাগ ট্রেইনি এক্সিকিউটিভ পদে একাধিক জনবল নিয়োগের জন্য এ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। গতকাল ২৫...

Recent Comments