Home নির্বাচিত খবর জহরজান বিবির মানবেতর জীবনা, পাশে দাড়ায়নি কেউ

জহরজান বিবির মানবেতর জীবনা, পাশে দাড়ায়নি কেউ

নয়ন সিকদার, বাউফল  প্রতিনিধি:

পটুয়াখালীর বাউফলের জহরজান বিবি। বয়স ৯০ বছর। বয়সের ভারে ন্যূজ হয়ে গেছে। সে উপজেলার মদনপুরা ইউপির চন্দ্রপাড়া গ্রামের অন্যের বাড়িতে ছোট্ট একটি খুপরির মধ্যে বসবাস করে। বসত ঘরটির ভিতরে দিন ও রাতের কোন তফাৎ নেই। জানালা না থাকায় কোন আলো প্রবেশ না করায় দিনের বেলাতেও ঘরটির ভিতরে ঘুটঘুটে অন্ধকার।

একটু বৃষ্টি হলেই বিছানার উপরে পরে পানি। স্যাতস্যাতে মাটি। ভাগ্যে জুটেনি বৈদ্যুতিক বাতি। সন্ধ্যা হলে সেই মানদাতার আমলের কুপি (বাতি) জ্বালিয়ে ঘরে আলো দিতে হয়। খাবার সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে দুটি পাতিল, একটি থালা, একটি মগ ও একটি হাতুয়া (মাটির গামলা )। পানি রাখার জন্য নেই কোন কলসি। একটি মাটির হাড়িতে পানি রাখেন। রাত কাটাতে হয় একাকি। অসুস্থ হয়ে পরলে কেউ নেই দেখার। প্রায় সময়ই অর্ধাহারে অনাহারে দিন কাটাতে হয়। প্রায় সত্তর বছর পূর্বে দুই মেয়ে রাহিমা ও নাসিমাকে বিয়ে দিলে তারা স্বামীর সাথে ঢাকা গিয়ে ঝিয়ের কাজ করত। তারা মায়ের খোঁজ নেয় না। আপনজন বলতে কেউ নেই জহরজানের। তাই দুর্বিসহ জীবন- যাপন করছে সে ঐ ঝুপরিটির ভিতরে।

চন্দ্রপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ও আশ্রয়দাতা আব্দুল মোতালেব মৃধা বলেন, জহরজানের বাড়ি ভোলায়। স্বামী আয়নালের মৃত্যু ও নদীতে ঘর বাড়ি ভেঙ্গে গেলে সর্বশান্ত হয়ে পরে জহর। তারই চাচাতো বোন আনোয়ারার স্বামীর বাড়ি বাউফলে থাকায় সেই সুবাদে চাচাতো বোনের হাত ধরে শিশু দুই মেয়ে রাহিমা ও নাসিমাকে নিয়ে জহরজান চলে আসে বাউফলে। ছোট ডালিমা চুন্নু মিয়ার বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ ও বসবাস করতেন সেখানে। দুই মেয়ের বিয়ে হলে মদনপুরা নিবাসী মো: সুলতানের মাধ্যমে চন্দ্রপাড়া নিবাসী হাসেম মৃধার সাথে তার বিয়ে হয়। সে সংসারে একটি কন্যা সন্তান জন্ম নিলে এক বছর পর সে মারা যায়। হাসেম মৃধার আগের স্ত্রী, ৩ ছেলে ও এক মেয়ে মিলে জহরজানের উপর নির্যাতন চালাতে থাকে। স্ত্রী সন্তানদের জা¡লাতনে হাসেম জহরজানকে তালাক দেয়। নি:স্ব হয়ে পথে প্রান্তরে ঘুরে বেড়ায় জহরজান। অবশেষে তিনি  তার (মোতালেব মৃধা) ঘরের পাশে একটু জায়গায় খুপরি ঘর তুলে দিলে সেখানে সে (জহর ) বসবাস করে আসছে ।

জহরজান প্রতিনিধিকে বলেন, বাবা বড় কষ্টে আছি। হাঁটা চলা করতে পারি না। রাতে ঘরে একা শুয়ে থাকি। বড় ভয় হয়। এই রাতেই বুঝি মরে যাবো। মরে গেলেওতো কেউ দেখবে না। আপন বলতে কেউ নেই। মেয়েরা বেঁচে আছে কিনা তাও জানিনা । তারা খবর নেয় না । যেদিন কেউ সহযোগিতা করে সেদিন খাই, তা না হলে না খেয়ে থাকি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

নিজের চেয়ার ঠিক রাখতেই ব্যস্ত পুলিশ কর্মকর্তারা

দখিনের সময় ডেস্ক: জুলাই ২৪-এর আন্দোলনে গণহত্যার জন্য একক বাহিনী হিসেবে পুলিশকে দায়ী করা হয়। মানুষের ক্ষোভের আগুনে পুড়েছে বাহিনীটির শতশত থানা, যানবাহন। জীবন গেছে...

সংস্কারের আগে নির্বাচন করলে কখনোই সংস্কার হবে না: তোফায়েল

দখিনের সময় ডেস্ক: সংস্কারের আগে নির্বাচন করলে আর কখনোই সংস্কার হবে না। জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় সভায় এ মন্তব্য করেছেন স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন সদস্য...

না ভোট ফিরিয়ে আনার সুপারিশ সংস্কার কমিশনের

দখিনের সময় ডেস্ক: সরাসরি রাষ্ট্রপতির নির্বাচন, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কোনো প্রার্থী নির্বাচিত না হওয়া, না ভোট ফিরিয়ে আনা ও অর্থের উৎসের স্বচ্ছতা নিশ্চিতসহ বেশ কয়েকটি সুপারিশ...

সুযোগ পেলে গলা চেপে ধরবে আ.লীগ: রিজভী

দখিনের সময় ডেস্ক: গণহত্যার জন্য বর্তমানে আওয়ামী লীগ ক্ষমা চাওয়ার কথা বললেও, সুযোগ পেলে আবারও তারা মানুষের গলা চেপে ধরবে। এমনটাই মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র...

Recent Comments