বিশেষ প্রতিনিধি:
জ্বালানী তেলের দাম বাড়ায় সব ধরনের পরিবহনে ভাড়া বেড়েছে। জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়তে শুরু করেছে, যা মহামারীর কারণে আগে থেকেই বাড়ছিল। এখন সেটা আরও বাড়বে। তবে এর প্রভাব বোঝা যাবে আরও কিছু দিন পর। আর মূল্যস্ফীতির ওপর চূড়ান্ত চাপটা আসবে দু-এক মাস পর, যার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে সামগ্রিক অর্থনীতিতে। ইতোমধ্যে ডলারের দাম বাড়ায় আমদানি খরচ বাড়তে শুরু করেছে। যার ফলে আমদানি পণ্যের দাম আরও বাড়বে।
দেশে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় উৎপাদন ও পরিবহনসহ প্রায় সব খাতেই খরচ বেড়েছে। আর এর প্রভাব পড়েছে মানুষের জীবনযাত্রায়ও। কিন্তু কী কী ধরনের পণ্যে প্রভাব পড়েছে, কতটা প্রভাব পড়েছে, সার্বিক দ্র্ব্যমূল্য পরিস্থিতির কী অবস্থা, আন্তর্জাতিক বাজার পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে- সেসব বিষয় পর্যবেক্ষণ করছে সরকার। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাজার মনিটরিং শাখা এ নিয়ে কাজ করছে। কাজ করছে অর্থ বিভাগও।
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনও (বিইআরসি) সরকারকে পরামর্শ দিয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজার স্থিতিশীল হলে তেলের দাম যেন সমন্বয় করা হয়। এদিকে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম এখনো স্থিতিশীল হয়নি। দ্রুত ওঠানামা করছে। আন্তর্জাতিক বাজার স্থিতিশীল হলে সরকারও দেশে ব্যবস্থা নেবে।
জানা গেছে, জিনিসপত্রের দাম বাড়ায় মূল্যস্ফীতিও বাড়তে শুরু করেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রকাশিত হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, গত অক্টোবরে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে (মাসওয়ারি) দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৫ দশমিক ৭০ শতাংশ, যা আগের মাসে ছিল ৫ দশমিক ৫৯ শতাংশ। এর আগে আগস্টে এই হার ছিল ৫ দশমিক ৫৪ শতাংশ এবং জুলাইয়ে ৫ দশমিক ৩৬ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের বাজেটে গড় মূল্যস্ফীতির হার ৫ দশমিক ৩ শতাংশে ধরে রাখার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে সরকার, ২০২০-২১ অর্থবছরে এ লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৪ শতাংশ।
এদিকে খাদ্যপণ্যের বিশ্ববাজারেও অস্থিরতা বিরাজ করছে। মহামারীর সঙ্গে বিভিন্ন দেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে উৎপাদন, বণ্টন, সরবরাহ চেইনে এক ধরনের সংকট তৈরি হয়েছে। ফলে খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ছে অস্বাভাবিক হারে। আগামীতে খাদ্যপণ্যের দাম আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ অবস্থায় খাদ্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে উৎপাদন বাড়ানো, বণ্টন ও সরবরাহ চেইন স্বাভাবিক রাখার পরামর্শ দিয়েছেন বিশ্লেষকরা। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে জ্বালানি তেলের দাম আবারও সমন্বয়ের তাগিদ দিয়েছেন তারা। এমনকি জ্বালানি তেলের ওপর সরকার কিছুটা ভর্তুকি দিলে জনভোগান্তি কমবে। একইভাবে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় অনেকাংশে কমে আসবে বলে মনে করেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম।