Home বিশেষ প্রতিবেদন পুলিশ লাইন্স থেকে আনা হয় অস্ত্র

পুলিশ লাইন্স থেকে আনা হয় অস্ত্র

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের ভাষণের পরই বরিশালের নেতৃবৃন্দ বুঝতে পেরেছিলেন, কি ঘটতে যাচ্ছে। যুদ্ধ অনিবার্য জেনেই ডামি রাইফেল দিয়েই অস্ত্র প্রশিক্ষণ শুরু হয়েগিয়েছিলো। এ ক্ষেত্রে প্রধান ভরসা ছিলো বিএম কলেজ ইউটিসির ডামি রাইফেল, সঙ্গে একটি অকেজো স্টেনগানও ছিলো।
২৫ মার্চ ঢাকা আক্রান্ত হবার পরপরই কার্যকর অস্ত্র সংগ্রহের তাগিদ বোধ করলেন নেতারা। মাহফুজ আলম বেগের ‘মুক্তিযুদ্ধে নবম সেক্টর’ গ্রন্থের ভাষ্যমতে, অস্ত্র সংগ্রহের জন্য জনপ্রতিনিধি-ছাত্র-জনতা গেলেন পুলিশ সুপার ফখরুদ্দিন আহমদের বাসায়। তার কাছে অস্ত্রাগারের চাবি চাওয়া হলে তিনি জানালেন, চাবি রয়েছে ডিএসপি গোলাম মোহাম্মদের কাছে। চাপের মুখে তিনি ডিএসপিকে ফোন করে চাবি দিতে বললেন। ছাত্র-জনতা ও নেতৃত্ববৃন্দ ছুটলেন ডিএসপি’র বাসার দিকে। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখাগেলো, ডিএসপি গোলাম মোহাম্মদ বেহুশ হয়ে পড়ে আছেন। তিনি নাকি এসপির ফোন পেয়েই জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছেন।
এ অবস্থায় অন্য পুলিশ সদস্যরা জানালেন, চাবির দ্বিতীয় সেট রয়েছে ওস্তাদের কাছে। ওস্তাদ মানে অস্ত্রাগার প্রহরীদের প্রধান। কোন রকম ওজর আপত্তি ছাড়াই প্রহরায় নিয়োজিত পুলিশ সদস্যরা অস্ত্রাগার খুলে দিলেন। এরপরও সেখানে আশংকার বিষয় ছিলো। তা হচ্ছে, পুলিশরা সবাই বাঙ্গালী ছিলেন না। অবাঙ্গালীও ছিলেন। উট খাঁসহ কয়েকজন অবাঙ্গালী সুবেদার ও কনেস্টবল ছিলো। এরা ছিলো বেপরোয়া স্বভাবের। তাদের কাছে অস্ত্রও ছিলো। এরা আক্রমন করতে পারে- এমন আশংকাও বিবেচনায় রাখা হয়েছিলো। অবশ্য শেষতক তেমন কিছুই ঘটেনি। বরং অবাঙ্গালী পুলিশ সদস্যরা একটি ঘরে চুপচাপ লুকিয়েছিলো।

মাহফুজ আলম বেগ তার ‘মুক্তিযুদ্ধে নবম সেক্টর’ গ্রন্থে লিখেছেন, ‘অস্ত্রাগারের পাহারায় থাকা বাঙ্গালী পুলিশেরা অস্ত্রাগার খুলে দিলেন। পুলিশের জীপ ও পিকআপ বোঝাই করে অস্ত্র নিয়ে সংগ্রাম কমিটির লোকজন এলেন গার্লস স্কুলে। এত বন্দুক অর রাইফেল এক সঙ্গে আগে কেহ দেখেনি।’
অবশ্য পুলিশ লাইন্সের অস্ত্র সংগ্রহের বিষয়ে অন্য রকম তথ্য দিয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা এনায়েত হোসেন চৌধুরী। তিনি জানিয়েছেন, ছাত্র লীগের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারী খালেদ মোহাম্মদ আলী ২৫ মার্চ রাত সাড়ে দশটার দিকে বরিশাল ছাত্রলীগের জেলা আহবায়ক জালাল হোসেনকে ফোন করে ঢাকা আক্রান্ত হবার খবর জানান। তখন শহরের খন্দকার বাড়িতে বরিশালের নেতৃবৃন্দের জরুরী বৈঠক চলছিলো। ঢাকা আক্রান্ত হবার খবর পেয়ে নেতৃবৃন্দ অই রাতেই ডিসির বাসায় যান। ডিসি জানালেন অস্ত্র এসপির নিয়ন্ত্রনে। এসপি জানালেন, অস্ত্র ডিএসপির জিম্মায়। কিন্তু ডিএসপির বাসায় গিয়ে দেখাগেলো, সে বেহুশ হয়েপড়ে আছে। কারোরই বুঝতে অসুবিধা হলো না, এটা ভং!

নেতারা বিক্ষুব্ধ হয়ে বাসা থেকে বের হবার কয়েক মুহুর্তের মধ্যে ডিএসপি চাবি নিয়ে ছুটতে ছুটতে এসেছিলেন। এদিকে অস্ত্রাগারে গিয়ে দেখাগেলো, পাহারায় নিয়োজিত পুলিশ সদস্যরা আগেই অস্ত্রাগারের তালা তুলে রেখেছেন। দায়িত্বে ছিলেন সুবেদার আকবর। ফেসবুকে ‘মুক্তিযুদ্ধে নবম সেক্টর’-এর ওয়াল থেকে জানাগেছে, ‘এই সুবেদার আকবর পুলিশ লাইন্সের অস্ত্র দিয়েই তাঁর দায়িত্ব শেষ করেননি। তিনি মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয়ের লক্ষ্যে নবম সেক্টরের বিভিন্ন অপারেশনে অত্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধ করেছেন। তিনি স্বাধীন বাংলাদেশে বরিশাল পুলিশ লাইনেই প্রথম যোগদান করে ১৯৭৫ অবধি বরিশালেই ছিলেন।’

এদিকে পুলিশ লাইন্স থেকে ৭৫টি রাইফেল ও ২৫ পেটি গুলি আনা হয়েছিলো। এ অস্ত্র রাখা হয় নূরুল ইসলাম মঞ্জুর বাড়ির একটি পাটাতন ঘরে। এ অস্ত্র থেকে দুই গ্রুপের কাছে দশটি করে বিশটি রাইফেল ও প্রয়োজনীয় গুলী বিতরণ করা হয়। একটি গ্রুপকে পাঠানো হলো ঝুনাহার খালে এবং অপর গ্রুপকে নিযুক্ত করা হয় টুঙ্গি বাড়িয়ায়।

আগামী কাল: ‘শুরুর দিকে পাকবাহিনী বরিশাল আক্রমন করেনি’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

স্মার্টফোনে ইন্টারনেট চলে যাচ্ছে? জেনে নিন গতি বাড়ানোর কৌশল!

দখিনের সময় ডেস্ক: অনেকেই মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার করার সময় হঠাৎ করেই দেখেন, নেটওয়ার্ক চলে গেছে। আশেপাশের অন্যরা নির্বিঘ্নে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারলেও আপনার ফোনেই সমস্যা...

প্রতিদিন ৩-৪ লিটার পানি পান করলে কী হয়?

দখিনের সময় ডেস্ক: ওজন কমানো একটি চ্যালেঞ্জিং কাজ হতে পারে। কঠোর ডায়েট অনুসরণ করা, খাবারের প্রতি লোভ নিয়ন্ত্রণ করা, প্রতিদিন জিমে যাওয়া, কঠোর ওয়ার্কআউট করা...

ডিভোর্সের দুদিন পরই সুখবর দিলেন এ আর রহমান

দখিনের সময় ডেস্ক: নিন্দুকরা মনে করছে বাংলার মেয়ে গিটার বাদক মোহিনী দে-র জন্যই হয়ত সায়রাকে ছেড়েছেন ভারতের অস্কারজয়ী সংগীতশিল্পী ও সুরকার এ আর রহমানের। তবে...

যৌন পর্যটনের নতুন কেন্দ্র টোকিও, সেক্স ইন্ডাস্ট্রির জড়িত কিছু চক্র

দখিনের সময় ডেস্ক: যখন স্বর্ণযুগ ছিল, শহরটি অর্থনীতিতে ব্যাপক উন্নতি দেখেছে। এটি এখনো বিশ্বের অন্যতম বাসযোগ্য শহর হিসেবে নিজের অবস্থান ধরে রেখেছে। তবে আশঙ্কার বিষয়...

Recent Comments