Home বিশেষ প্রতিবেদন ধরাপড়ে পাক গুপ্তচর

ধরাপড়ে পাক গুপ্তচর

যুদ্ধ অনিবার্য জেনে বেলস পার্কে শতশত যুবক প্রশিক্ষণ নিচ্ছিলো। তার চেয়ে বেশি ছিলো উৎসুক জনতা। দৃশ পট অনেকটা খেলার মাঠের মতো। চিরায়াত দৃশ্য হচ্ছে, যত লোক খেলে তার চেয়ে বহুগুণ বেশি থাকে দর্শক। আর দর্শকরা সব সময়ই এক ধরনের অস্থিরতা ও উত্তেজনায় থাকেন। বেলস পার্কে ঘিরে ছিলো জনাকীর্ন ভীড়।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহফুজ আলম বেগের (ক্যাপ্টেন বেগ) ‘মুক্তিযুদ্ধে নবম সেক্টর’ গ্রন্থের বর্ণনামতে এই ভিড়ের মধ্য থেকে একজন গুপ্তচর ধরা পড়ে। এক পর্যায়ে সে স্বীকার করলো, খুলনা থেকে পালিয়ে আসা বরিশালের লোকজনের সাথেই সে এসেছে। তাকে পাঠিয়েছে খুলনায় পাকবাহিনীর লে. কর্নেল শামস। খুলনা দখলের পর বরিশাল দখলের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হচ্ছিলো। বরিশালের সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে তাকে পাঠানো হয়েছিলো। কিন্তু সে ধরা পড়ে যায়। চাঁদমারীতে ফায়ারিং স্কোয়াডে পাক গুপ্তচরের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা। এ ঘটনার জের হিসেবে পাকিস্তানী বিমান বাহিনী বরিশাল শহরে বিমান হামলা চালায়।’

এদিকে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বিপ্লবী বাংলাদেশ-এর সম্পাদক-প্রকাশক নূরুল আলম ফরিদ বলছেন অন্য রকম ঘটনার কথা। তিনি জানান, খুলনার ডিসি-এসপি নৌ-পথে ঢাকার দিকে যাচ্ছিলেন। তাদেরকে আটক করার পর তল্লাসী করে এ অঞ্চলের একটি ম্যাপ পাওয়া যায়। এ সময় আটককৃত এসপির স্ট্যানো কোন অবস্থাতেই মুখ খুলছিলেন না। এমনকি তাকে দিয়ে ‘জয়বাংলা’ শ্লোগানও দেওয়ানো যায়নি। এ অবস্থায় ফায়ারিং স্কোয়াডে তার মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার সিদ্ধান্তÍ হয়।
ডিসি-এসপিকে কোন রকম দন্ড না দেবার কৌশলগত সিদ্ধান্ত হয়। এ সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করেছেন নূরুল ইসলাম মঞ্জুর। এ ব্যাপারে তার ভাই সাংবাদিক নূরুল আলম ফরিদের ব্যাখ্যা হচ্ছে, ‘ডিসি-এসপির ব্যাপারে কঠোর সিদ্ধান্ত নিলে তাতে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে থাকা প্রশাসনযন্ত্রের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে- এ বিবেচনায় তাদেরকে জেলে প্রেরণ করা হয়। সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই উল্লেখিত ডিসি-এসপি কারাগার থেকে ছাড়া পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন খান আলতাফ হোসের ভুলু।
একই বিষয়ে এনায়েত চৌধুরী জানিয়েছেন, খুলনা থেকে নৌ-পথে ঢাকা যাবার সময় ডিসি ও এসপি আটক করা হয়। একই সময় আটক করা হয় চালক আসলামকেও। আসলাম ছিলো পাকিস্তান নেভীর সিপাই। তাদের তিনজনকেই জেলে পাঠিয়ে দেয়া হয়। এদের বিচারের দায়িত্ব দেয়া হয় এডভোকেট আমিনুল হক চৌধুরীকে। ডিসি আইয়ুবুর রহমান ও এসপি আবদুর রকিব খন্দকার বাংলাদেশের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেন। ফলে তাদের মুক্তি দেয়া হয়। কিন্ত পাকিস্তান নেভীর সিপাই আসলাম বাংলাদেশের প্রতি আনুগত্য স্বীকার করতে অস্বীকৃতি জানায়। সে তার সিদ্ধান্তে অটল থাকায় তাকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

রিকশাচালকদের ছাতা, স্যালাইন ও পানির কন্টেইনার দিলেন মেয়র আতিক

দখিনের সময় ডেস্ক: তীব্র দাবদাহে রিকশা চালকদের পাশে দাঁড়াতে বিনামূল্যে ছাতা বিতরণ করলেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম। তিনি আজ রবিবার বেলা...

‘গরমে’ অসুস্থ হয়ে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু

দখিনের সময় ডেস্ক: যশোরে অসুস্থ হয়ে আহসান হাবীব নামের এক স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু হয়েছে। আজ রবিবার সকাল ৯টার দিকে এই ঘটনা ঘটে। তবে পরিবারের সদস্যরা দাবি...

তিন দিনের হিট অ্যালার্ট আজ থেকে শুরু

দখিনের সময় ডেস্ক: তীব্র হতে অতিতীব্র তাপদাহে জনজীবন কাহিল। পুড়ছে পুরো দেশ, বিপর্যস্ত জনজীবন। চলমান তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকায় পঞ্চম দফায় হিট অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে।...

বাবর-শাহিনের নৈপুণ্যে সিরিজ হার এড়াল পাকিস্তান

দখিনের সময় ডেস্ক: ঘরের মাঠে তুলনামূলক দুর্বল স্কোয়াড নিয়ে আসা নিউজিল্যান্ডের কাছে প্রায় সিরিজ হারতে বসেছিল পাকিস্তান। সেখান থেকে দুর্দান্ত বোলিংয়ে পাকিস্তানকে কক্ষপথে ফিরিয়েছেন শাহিন...

Recent Comments