চাঁদমারীতে ফায়ারিং স্কোয়াডে ‘বিশ্বাসঘাতকের’ মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়। মেজর জলিলের তত্ত্বাবধানে দশ জন এই মৃতুদন্ড কার্যকর করেন। দশ জনের জন্য দশটি টার্গেট নির্ধারিত ছিলো। ধারণা করা হয়, এ ঘটনার পর দ্রুততর হয় বরিশাল দখলে পাকবাহিনীর অভিযান। এর আগে চলে বরিশালে বিমান হামলা।
এদিকে অন্য সূত্র বলছে, অতি সাধারণ একজনের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা নিয়ে মোটেই মাথা ঘামায়নি হানাদার ববাহিনী। বরং ভারত থেকে আনা অস্ত্র খালাশের তথ্যের ভিত্তিতেই পাক যুদ্ধ বিমান বরিশালে হামলা চালিয়েছিলো বরিশালে। এ জন্যই লঞ্চগুলো ছিলো হামলার অন্যতম লক্ষ্য।
ডিসি-এসপির সাথে আটককৃত এসপির স্ট্যানো, মতান্তরে নেভীর সিপাহী, আসলামের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার দিনক্ষণ নির্ধারণ করা হয়। মাহফুজ আলম বেগের ‘মুক্তিযুদ্ধে নবম সেক্টর’ গ্রন্থের তথ্য অনুসারে এ তারিখ ছিলো ১৮ এপ্রিল। যদিও নূরুর আলম ফরিদ বলছেন, দিনটি ছিলো ১৭ এপ্রিল। নূরুর আলম ফরিদ জানান, মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার জন্য সময় নির্ধারিত ছিলো বেলা ১২টা। এবং এ কথা মাইকে প্রচার করা হয়। সকাল থেকেই পুরো এলকা লোকেলোকারণ্য হয়ে যায়। এদিকে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয় নির্ধারিত সময়ের প্রায় দুই ঘন্টা আগে সকাল ১০টার দিকে। এ সময় চাঁদমারী এলাকায় লক্ষ মানুষ উপস্থিত ছিলো। মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার পর বিমান হামলার আশংকায় মেজর জলিল সকলকে সরে যেতে বলেছিলেন বলে জানিয়েছেন এনায়েত চৌধুরী।
বরিশালে পাকিস্তানি যুদ্ধ বিমান হামলার আগে শহরের উপর দুটি স্যাবর জেট ফাইটার উত্তর দিক থেকে এসে বরিশালের আকাশে দুটি চক্কর দেয়। সাধারণ উড্ডয়ন। যেনো শান্ত দুটি চিল উড়েগেলো! এ সময় মাঠে ট্রেনিংরত মুক্তিযোদ্ধারা বিমানের দিকে রাইফেল তাক করে। এদিকে কৌতুহলী জনতা ‘তামাশা’ দেখছিলো। মুক্তিযোদ্ধারা বুঝতে পারছিলেন না, রাইফেল দিয়ে ফাইটার বিমান ঘায়েল করা যায় না। আর জনতাও বুঝছিলো না, বিমানের এই চক্কর মোটেই শিশুতোষ খেলা নয়। মজা দেখার বিষয় তো নয়ই। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিং প্রদানরত সুবেদার ঠিকই বিপদের আলামত টের পেয়েছিলেন। তিনি চিৎকার করে সবাইকে খোলা মাঠ থেকে সরে যেতে বললেন। কিন্তু তখন বেশি সময় হাতে ছিলো না।
কিছুক্ষণের মধ্যেই সাধারণভাবে চক্কর দেয়া স্যাবর জেট ফাইটার দুটি বিকট শব্দ করে ফিরে এলো। এবার শুরু করলো বৃষ্টির মতো গুলি বর্ষণ। অল্প সময় পরই মেশিনগানের গুলি বর্ষনের সঙ্গে শুরু হলো বোম্বিং। পাকিস্তানি বিমান দুটি জেনো বরিশাল শহরকে তচনচ করেদিতে চাইছিলো।
এ বিমান হামলার প্রধান টার্গেট ছিলো, পুলিশ লাইন্স, বেলস পার্ক, আনসার ক্যাম্প, স্টিমার ঘাট ও লঞ্চঘাট। ঘন্টাখানের এ বিমান হামলায় ভয়ানক অবস্থা সৃষ্টি হয়! পাকিস্তানী যুদ্ধ বিমান পরিকল্পনা মতো বরিশাল শহরের উপর তান্ডব চালায়। বোধগম্য কারণেই পাক বাহিনীকে প্রতিরোধের ‘প্রস্তুতি’ কোনই কাজে আসেনি। সবমিলিয়ে পাকবাহিনীর বিমান হামলার দিন বরিশালে এক নাজুক অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিলো।
সঙ্গত কারনেই বিমান হামলা প্রতিরোধ করার সুযোগ সেই সময় থাকার কথা নয়। ছিলোও না। এরমধ্যেও দু’একজন মুক্তিযোদ্ধা যুদ্ধ বিমানে দিকে থ্রি নট থ্রি রাইফেলের গুলি ছুড়েছেন।
মনসুরুল আলম মন্টুর গ্রন্থের তথ্যমতে যুদ্ধ বিমানের দিকে প্রশিক্ষণরত মুক্তিযোদ্ধারা যখন রাইফের দিয়ে গুলি ছুড়ছিলো তখন আমির হোসেন আমুও তাঁর রিভলবার দিয়ে বিমান তাক করে গুলি ছুড়েছিলেন বেশ কয়েকবার। কিন্তু এসবই নিষ্ফল। এবং বালখিল্য আচরণ। এ ঘটনায় সাহস এবং আবেগের প্রকাশ হলেও এ ছিলো যুদ্ধের ময়দানে নিজেদের মরকে বরণ করার মতো। মনসুরুল আলম মন্টু তার গ্রন্থে লিখেছেন, ‘আমার মনে আছে যখন বিমান হামলা হয়, তখন আমরা সদর গালর্স স্কুলের ট্রেঞ্জের ভেতর ছিলাম। আমরা কয়েকজন বিমানের উপর গুলি করছিলাম। আমু ভাই তার রিভলবার থেকে গুলি চালাচ্ছিলে, আমি থ্রি নট থ্রি রাইফেল থেকে। মুশফিত, ইসমু, ভুলু তো বেশ চার্গেট করেই গুলি ছুড়ছিলো। হঠাৎ আমাদের কাছে মনে হচ্ছিলো, বিমানের গায়ে বেশ কয়েকটা গুলি লেগেছে, বিমান ভূপাতিত হচ্ছে। আমরা বেশ আনন্দের সঙ্গে উল্লাসে হাত তালি দিয়ে নাচানাচি শুরু করেছিলাম। আমু ভাইও লাফাচ্ছিলেন, ওই ওই যে পড়ছে, পড়ছে। বিমানটা নীচের দিক থেকে গোত্তা খেয়ে পড়ছে বক্কাটা গুড়ির মতো। কিন্তু পরক্ষণেই মেশিনগানের ঝাঁকে ঝাঁকে গুলি করতে করতে উড়ে এলো আমাদের আকাশেই। আমরা হতভম্ব হয়ে গিয়ে আবার ট্রেঞ্জে ঢুকলাম।’
এদিকে অন্যান্য স্থান থেকে যারা বিমানের দিকে গুলি ছুড়েছিলেন তাদের মধ্যে কেউ কেউ কিছুক্ষণের মধ্যেই রাইফেল ফেলে দিকবিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে উদভ্রান্তের মতো ছুটেছেন। অল্প সময়ের মধ্যে পুরো এলাকা ফাঁকা হয়ে গিয়েছিলো। কেউকেউ শহর ছেড়ে পালাতে শুরু করেন।
এনায়েত চৌধুরীর তথ্যমতে, বিমান হামলারয় ভূমিতে ৩ জন মানুষ ও তিনটি গরু মারাযায়। আহত হন ৭/৮ জন। তবে অনেক প্রাণহানী হয়েছে চার-পাঁচটি লঞ্চেরে উপর বিমান হামলার ঘটনায়। এ লঞ্চগুলো বরিশাল থেকে চরকাউয়া ও চরমোনই যাচ্ছিলো। আর ‘পাঁচ পীর’ নামের লঞ্চটি ছিলো ঘাটে। সূত্রমতে, লঞ্চে করে ভারত থকে আস্ত্র আসার খবরে লঞ্চগুলোর উপর বেশি হামলা করা হয়েছে বলে বলছেন নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা। আর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই বিমান হামলা চোখ খুলে দিয়েছিলো।
দখিনের সময় ডেস্ক:
দেশের বাইরে গিয়ে বাংলাদেশিরা ক্রেডিট কার্ডে বিভিন্ন পণ্য ও সেবা কিনতে সবচেয়ে বেশি অর্থ খরচ করেন কয়েকটি দেশে। এর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে...
দখিনের সময় ডেস্ক:
বিশ্বে মাছ উৎপাদনে শীর্ষ দেশগুলোর একটি হচ্ছে বাংলাদেশ। সরকারের দাবি অনুযায়ী, দেশটি মাছে স্বয়ংসম্পূর্ণ। প্রতিবছর মাছ উৎপাদন হয় ৪৯ লাখ মেট্রিক টন।...
দখিনের সময় ডেস্ক
বিরাজমান আইনে শুধু সুইসাইড নোটের ভিত্তিতে শাস্তি দেয়া যায় না। তবি এটি মামলায় গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষ্য হিসেবে গণ্য হয়। সাক্ষ্য আইন ১৮৭২–এর ৩২...
দখিনের সময় ডেস্ক:
রেলপথ মন্ত্রণালয় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। প্রতিষ্ঠানটির শূন্য পদে একাধিক জনবল নিয়োগের জন্য এ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। ৩০ এপ্রিল থেকে আবেদন নেওয়া শুরু...
কেবল মন্ত্রিত্ব নয়, জটিল সময়ে আওয়ামী লীগের মতো বিশাল দলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দক্ষতার সঙ্গে পালন করে যাচ্ছেন ওবায়দুল কাদের। বলা হয় জিল্লুর রহমান,...