বরিশাল শহরে বিমান হামলার পর ভারত যাবার ব্যাপারে যেমন বোধোদয় হলো তেমনই ক্যাম্প স্থান্তরের তাগিদও বোধ করলেন নেতারা। ক্যাপ্টেন বেগের তথ্যমতে, বিমান চলে যাবার পর বেলস পার্কে (বর্তমানে বঙ্গবন্ধু উদ্যান) হাজির হন নূরুল ইসলাম মঞ্জুর। যদিও নূরুল আলম ফরিদের মতে সেদিন শহরে ছিলেন না নূরুর ইসলাম মঞ্জুর। বরং বিমান হামলার ঘন্টা দেড়েক পর অস্ত্র বোঝাই ভারতীয় অস্ত্র নিয়ে তিনি কালীজিরা নদীতে পৌঁছান।
নেতৃবৃন্দ সিদ্ধান্ত নিলেন, অস্ত্র প্রশিক্ষণ গ্রহণকারী এবং স্বেচ্ছাসেবকদেরকে শহরের তিন-চারটি এলাকায় ক্যাম্পে স্থানান্তর করা হবে। এ সিদ্ধান্ত অনুসারে শহর থেকে প্রায় চার মাইল দূরে লাকুটিয়া জমিদার বাড়িতে করা হয় প্রধান ক্যাম্প। জমিদার বাড়ির প্রতিনিধি দেবেন রায় চৌধুরী নিজেই এ ক্যাম্প করার প্রস্তাব দেন। সিদ্ধান্ত হয়, জমিদার বাড়ির এই ক্যাম্পে সিনিয়র নেতারা আশ্রয় নেবেন। এবং সংগৃহিত অস্ত্র, রেশন সামগ্রি, চিকিৎসা সামগ্রিসহ অন্যান্য দ্রব্য কেন্দ্রীয়ভাবে এই ক্যাম্পে থাকবে। আর এতোদিন নগরীর পেশকার বাড়িতে থাকা প্রধান ক্যাম্পের সকল কিছু লাকুটিয়ায় স্থানান্তর করা হবে। এদিকে টিএন্ডটির দুই কর্মচারী প্রস্তাব দিলেন, তারা এই বাড়িতে টেলিফোন সংযোগের ব্যবস্থা করবেন। এই ক্যাম্পে, সিনিয়র যোদ্ধাদের অস্ত্র প্রশিক্ষণ দেবার দায়িত্ব পান নূরুল হক বাচ্চু।
দ্বিতীয় ক্যাম্প স্থান্তরের সিদ্ধান্ত হয় তালতলির আমিন বাড়িতে। এখানে আগে থেকেই ছাত্র-যুবকদের ট্রেনিং দিচ্ছিলেন ফ্লাইট সার্জন ফজলুল হক, লে. মেহেদী ও লে. নাসির। ফলে তারা আগেই তালতলির ঝুনাহার ভারানী চ্যানেল এলাকায় বাংকার খনন করে রেখেছেন। পরিকল্পনা ছিলো, নৌ-পথে পাক বাহিনী বরিশাল প্রবেশ করতে চাইলে এই ক্যাম্প থেকে প্রতিহত করা হবে।
তৃতীয় ক্যাম্প স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয় ইছাকাঠি গার্ডেন এলাকায়। সেখানে বন বিভাগের পরিত্যাক্ত ভবনটি ছিলো ভরসা। এই পথেও পাক বাহিনীর প্রবেশের আশংকা করা হচ্ছিলো। ইছাকাঠি ক্যাম্পের দায়িত্ব দেয়া হয় ক্যাপ্টেন বেগকে। কিন্তু এ স্থানে বেশিদিন ক্যাম্প থাকেনি। কারণ এটি ছিলো স্বল্প পরিসরের এবং কৌশলগত দিক থেকে ছিলো অনিরাপদ। এই ক্যাম্পটি সহজে ঘেরাও করে ফেলার সুযোগ ছিলো। এ অবস্থায় তোফাজ্জল হোসেন খোকা এবং জি এম কবির আরো দূরে সরে যাবার প্রস্তাব দিলেন। রেকি করার পর সিদ্ধান্ত হলো, মাধবপাশা জমিদার বাড়িতে ক্যাম্প স্থানান্তর করা হবে। বাড়িটি তখন খালি পড়ে ছিলো। ইসাকাঠি থেকে ক্যাম্প মাধবপাশা জমিদার বাড়িতে স্থানান্তরিত হয় ২৪ এপ্রিল। পাকিস্তান বাহিনী বরিশাল দখলের অভিযান চালায় একদিন পরই, ২৬ এপ্রিল।