স্টাফ রিপোর্টার ॥
বরিশাল শেবাচিমে ডা.বাকিব হোসেন যোগদানের পরে হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডের চিত্র পাল্টে গেলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এখনও নিয়ন্ত্রনে আনতে পারেনি ফিটনেস বিহীন অবৈধ এ্যাম্বুলেন্স ও দালাল চক্রটিকে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন যাবত হাসপাতালের বিভিন্ন পয়েন্টে দালালদের আখড়া জমে উঠছে। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের কিছু করতে পারছে না বলে অভিযোগ রয়েছে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা সাধারন রোগীদের। ফিটনেস বিহীন অবৈধ এ্যাম্বুলেন্স চক্রটির বিরুদ্ধে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিচ্ছেনা কোন ব্যবস্থা। এর রহস্যটা কি? এ প্রশ্ন শুধু সাধারন মানুষেরই নয় হাসপাতাল কর্মচারীদের মধ্যেও বিরাজ করছে। হাসপাতাল সূত্রে জানাযায়, আগে বছরে দুই একবার প্রশাসন পক্ষ থেকে অভিযান চালানো হত দালাল ও ওষুধ প্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে। অভিযানে ছোট খাটো কিছু দালাল হাসপাতালে প্রবেশ করতে না পারলেও প্রতিদিনই হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে প্রবেশ করে যাচ্ছে দালালদের মূল হোতারা। রয়েছে তারা ধরা ছোয়ার বাহিরে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মচারী জানায়, ব্লাড বাংক, প্যাথলজি, জরুরি বিভাগ, অপারেশন থিয়েটার, বহি:বিভাগের সহ কয়েকটি বিভাগের সামনে কিছু অসাধু কর্মচারীদের যোগসাযোসের মাধ্যমেই নিরবে চলছে রোগীদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার কার্যক্রম। দালাল সদস্যদের মূল হোতারা বেশি ভাগই হাসপাতালে প্রবেশ করেন বিভিন্ন কৌশলে। শুধু তাই নয় বাচ্চা থেকে শুরু করে রোগীর স্বজনদের পোষাক, নগদ অর্থ চুরি হচ্ছে প্রায়ই। তিনি আরো বলেন, দালাল চক্রটির কার্যক্রম হাসপাতালে কিছুটা কমে গেলে বর্তমানে রোগীদের জিম্মি করে হাতিয়ে নেওয়া হয় অর্থ। এদিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কোন নজর নেই। হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী মুন্নি আক্তার বলেন, দালালদের বিরুদ্ধে অভিযান নেওয়ার পাশাপাশি হাসপাতালের কর্মচারীদের বিরুদ্ধেও প্রশাসন অথবা দুদকের অভিযান চালানো খুবই দরকার। কারন দালালরা না থাকলেও তাদের কার্যক্রমের মতই কাজ করে যাচ্ছে হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড এবং ওটির কর্মচারীরা। যেমন একটি মানুষ সড়ক দূর্ঘনায় আহত হয়ে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে বা বহি:বিভাগের সার্জারী ওটিতে চিকিৎসা নিতে এসেও টাকা দিতে হয় দায়িত্বে থাকা ব্রাদারদের।
অন্য দিকে বহি:বিভাগে ডাক্তার দেখাতে গেলে প্রথমে সিরিয়ারে দাড়াতে হয়।
আর যদি সিরিয়ালে না দাড়িয়ে ডাক্তার আগে দেখাতে হয় তাহলে এম,এল,এসদের ২০ থেকে ৫০ টাকা ঘুষ দিলেই আদর করে আগে দেখিয়ে দেয় তারা। আর যদি টাকা না দেয় তাথলে লাইনেই দাড়িয়ে থাকতে হয় ঘন্টার পর ঘন্টা অসুস্থ রোগীদের। হাসপাতালের ৫ম তলায় গাইনী, সার্জারী, অর্থপেডিক্স, অপারেশন থিয়েটারের সামনে অবস্থান করে থাকেন দালাল চক্রের সদস্যরা। রোগীর স্বজনদের ভুল বুঝিয়ে অপারেশনের সিরিয়াল আগে করিয়ে দেওয়ার কথা,অপারেশন স্পেশাল ভাবে করি দেওয়াসহ বিভিন্ন কথা বলে হাতিয়ে নিচ্ছে হাজার হাজার টাকা দালাল চক্রের সদস্যরা। অন্যদিকে বেশ কয়েক বছর ধরে হাসপাতালের প্রধান ফটকসহ চার পাশেই অবৈধ ভাবে এ্যাম্বুলেন্স গ্যারেজ হিসেবে ব্যাবহার হচ্ছে। রোগীদের জিম্মি করে প্রতি মাসে এ্যাম্বুলেন্স মালিক সমিতির নেতারা হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষাধিক টাকা। একটি গোপন সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতাল চক্রে অবৈধ স্থাপন উচ্ছেদ করা হলেও কখনো অবৈধ এ্যাম্বুলেন্স স্টানটি উচ্ছেদ করা হচ্ছে না। তারা এতোটাই ক্ষমতাসীন যে হাসপাতাল ব্যাউন্ডারির ওয়াল ভেঙ্গে মাঠের ভিতরে গড়ে তুলছে অবৈধ স্টান্ড।
এ্যাম্বুলেন্স মালিকদের কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন, হাসপাতালের পরিচালকই আমাদের মাঠের মধ্যে গাড়ি রাখতে বলেছে। একটি গোপন সূত্রে জানা যায়, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, ট্রাফিক পুলিশ, স্থানীয় কিছু নেতাকর্মীরা সেখান থেকে প্রতিমাসে নিচ্ছে মোটা অংকের মাসোয়ারা। তাদের মাসোয়ার কাছে জিম্মি রোগীর স্বজনরা। রোগীদের জিম্মি করে সরকারী জায়গা দখল করে প্রতি মাসে লক্ষধিক টাকার চেয়েও বেশি হাতিয়ে নিচ্ছে এ্যাম্বুলেন্স মালিক সমতি সভাপতি, সম্পাদক। হাসপাতালের গেট পার হলেই পিপরার মতো আখরে ধরে এ্যাম্বুলেন্সের দালাল সদস্যরা। হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা একাধিক রোগীর স্বজনদের অভিযোগ দালালদের মতো অবৈধ এ্যাম্বুলেন্স গুলোর বিরুদ্ধে অভিযান চালানো দরকার এবং কি হাসপাতাল চক্রে তাদের পাকিং করতে দেওয়া সম্পূর্ন নিষেধ করার কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব। সরজমিনে আরো দেখা যায়, হাসপাতাল জম্মলগ্ন থেকেই হাসপাতালে জরুরি বিভাগের সামনে হাসপাতাল ব্যাউন্ডারি রয়েছে। কিন্তু সেখানে প্রতিদিনই এ্যাম্বুলেন্সসহ বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানীর প্রতিনিধিরা অবৈধ মটরসাইকেল পাকিং স্থানে পরিনত করেছে।
সবচেয়ে বড় বিষয়,প্রতিটি হাসপাতালে বড় করে লেখা রয়েছে হাসপাতালের মধ্যে ধূমপান করা নিষেধ। কিন্তু এখানে তা উল্টে। এখানে জরুরি বিভাগ ও প্রধান ফটকের দুইটি গেন সামনেই রয়েছে পান-সিগারেটের দোকান। হাসপাতালের স্টাফ কেন্টিনের পাশে রয়েছে আরো একটি সিগারেটের দোকান। সেখানে গেলে দেখা যায় সিগারেট খাওয়ার প্রতিযোগীতা। গভীর রাতে বসে হাসপাতাল কম্পাউন্টে মাদকের আখড়া। চলে বেচা কেনা। এব্যাপারের হাসপাতালের পরিচালক ডা.বাকিব হোসেন বলেন, আমি আসার পরে অগের চেয়ে বর্তমানে হাসপাতালে দালালের সংখ্যা অনেক কম এবং যেগুলো রয়েছে তাদের ধরার জন্য অভিযান চলছে। তবে হাসপাতাল চক্রে অবৈধ এ্যাম্বুলেন্স গুলোর বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, খুব শিগ্রই তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাবে প্রশাসন।